নতুন সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত ৭২’র সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা যেতে পারে: আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সংবিধান প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত ১৯৭২ সালের সংবিধানে মৌলিক ধারা পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা যেতে পারে।
শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নাগরিক কোয়ালিশনের আয়োজনে 'সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব ও তার সম্ভাব্য বাস্তবায়ন পদ্ধতি' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলোচনায় আসিফ নজরুল বলেন, 'আগামী নির্বাচন একযোগে জাতীয় সংসদ এবং গণপরিষদ নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তারা একসঙ্গে সংসদ সদস্য এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে কাজ করতে পারবেন।'
তিনি বলেন, 'ধরা যাক, সপ্তাহে চারদিন সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদের কাজগুলো করব, বাহাত্তরের সংবিধানের যে পরিবর্তন দরকার সেগুলো করে ফেলবে। আর নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য আমরা সপ্তাহে দুইদিন গণপরিষদে বসব, বা সাতদিনই সাংসদ (সংসদ সদস্য) হিসেবে বসা হলো; সন্ধ্যার পরে তিনঘণ্টা গণপরিষদ সদস্য হিসেবে বসব। এগুলো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।'
আইন উপদেষ্টার মতে, সংবিধান প্রণয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং পুরো কাজ সম্পন্ন করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, সংসদ সংবিধান তৈরি করে এবং একইসঙ্গে নতুন সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রও তৈরি করে। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেই নতুন সংবিধান প্রণয়নে আট-নয় বছর সময় লেগেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। এ সময়টাতে ৭২-এর সংবিধানই কার্যকর রাখা হবে এবং সংসদ প্রয়োজন অনুযায়ী তা সংশোধন করে চলবে।
তিনি আরও বলেন, এই ২-৩ বছরে সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদের মতো মৌলিক বিষয়গুলো সংশোধন করতে পারবেন।
আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই সনদের প্রস্তাবনাগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা ধরে নিচ্ছি সবাই জুলাই সনদের কিছু মৌলিক বিষয়ের ওপর একমত হবেন। এসব প্রস্তাব সংবিধানে রাখা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একটা জনপ্রিয় দাবি এবং আমারও দাবি। তবে শুধু বললে হবে না, যুক্তিসহ উপস্থাপন করতে হবে। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের সীমা নেই। ভারত, যুক্তরাজ্য—কোথাও নেই। কাজেই দুই মেয়াদই সমাধান নয়, বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করা।
উচ্চ কক্ষের ক্ষমতা নিয়ে তিনি বলেন, 'প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে নিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধান বিচারপতির অসীম ক্ষমতা, তিনি দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদও ওই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনের মাধ্যমে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন।