আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি: শাহবাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আজ শুক্রবার দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ
আমাদের সাভার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার (৯ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা মোড় (শহিদ ইয়ামিন চত্বর) এলাকায় প্রথমে মহাসড়কের আরিচামুখী লেন এবং পরে ঢাকামুখী লেন অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
এ সময় 'আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে 'একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর'সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে অবরোধের ফলে মহাসড়কের উভয় লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ অব্যাহত রাখবেন।
বিক্ষোভে উপস্থিত জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসাদুল ইসলাম মুকুল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নামক আর কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী রাজনীতি করতে পারবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ১০ মাস হয়ে গেলেও যারা সরকারে আছেন, তারা আওয়ামী লীগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না এই সিদ্ধান্ত আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই রাজপথ বন্ধ থাকবে। আমাদের শাহবাগের যেই ব্লকেড কর্মসূচি, তার সাথে সংহতি জানিয়ে আমরা সাভার ও আশুলিয়ার জনগণ এখানে সড়ক অবরোধ করেছি।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকামুখী লেন অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। এতে সড়কটিতে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
নারায়ণগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জাবেদ আলম বলেন, 'আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান বলেন, 'আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আমাদের এই অবস্থান। বার বার এই দল নিষিদ্ধকরণ নিয়ে টালবাহানা চলছে। আমরা নিষিদ্ধ ঘোষণা বা রোডম্যাপ নিয়েই ঘরে ফিরতে চাই।
এ বিষয়ে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবু নাঈম বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্ররা বিক্ষোভে নেমেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের সাথে কথা বলে যান চলাচল স্বাভাবিক করার।
লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ-অবরোধ
আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিচার ও দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
আজ বিকেলে লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমুহনী থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ঝুমুর চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা।
কর্মসূচিতে 'আমার সোনার বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই', 'একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর, 'ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা', 'গোলামি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ', 'লীগ ধর, বিচার কর' ইত্যাদি স্লোগান দেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা নাসির উদ্দীন, ইসলামী আন্দোলন সদর উপজেলার জয়েন্ট সেক্রেটারী ইউসুফ আল মাহমুদ, লক্ষ্মীপুর জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবদুর রহমান, শহর শাখা ইসলামী শিবিরের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন, সেক্রেটারি আবদুল আউয়াল হামদু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বেলায়েত পাটোয়ারী, হাবিবুর রহমান ফাহিম, এনসিপির প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন, আবদুল হামীদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস ২৮ অক্টেবর লগি-বৈঠার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস ৫ মে শাপলা চত্বরে গণহত্যার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস ২৪ শে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা হত্যার ইতিহাস। তাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তাদের কোনো ক্ষমা নেই। দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা নাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
এদিকে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা 'অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন— আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'চব্বিশের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই', 'ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর', 'আওয়ামী লীগ নিপাত যাক, ইনকিলাব জিন্দাবাদ'ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ ছিল যারা জুলাইয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। কিন্তু এতদিনেও সরকার গণহত্যাকারীদের করতে পারেনি। এ সময় তারা দ্রুত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান।
এর আগে আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্বে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
আজ শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টায় তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান নেন। এদিন দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের কাছের ফোয়ারার পাশে তৈরি করা মঞ্চ থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করার ঘোষণা দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।