বাংলাদেশের ২০টি মিগ-২৯ ইঞ্জিনের মধ্যে সচল মাত্র ৬টি—৩৮০ কোটি টাকার মেরামত চুক্তির উদ্যোগ

বাংলাদেশের আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের মাত্র ছয়টি ইঞ্জিন বর্তমানে সচল রয়েছে। এ অবস্থায় অচল ইঞ্জিনগুলোর মেরামত, ওভারহল ও আয়ুষ্কাল বাড়াতে রুশ কোম্পানি জেএসসি এনএএসসি-র সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার; এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা।
সূত্রমতে, ১২টি ইঞ্জিন মেরামত, ওভারহল ও আয়ুষ্কাল বাড়াতে রুশ কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়েছে বিমান বাহিনী সদর দপ্তর। চলতি অর্থবছর থেকে ২০২৭-২৮ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরে রুশ কোম্পানিটিকে বিল পরিশোধ করা হবে।
সূত্র জানায়, আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন ও পরিচালনার জন্য অন্তত ১৬টি সচল ইঞ্জিন প্রয়োজন।
চলতি অর্থবছরে বিমানগুলোর ইঞ্জিন মেরামতের জন্য প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের (ডিজিডিপি) মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করে সরকার। এতে চারটি দরদাতা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের দরপ্রস্তাব কারিগরিভাবে গৃহীত হয়।
সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার জেএসসি এনএএসসির প্রস্তাবটি বিমানসদর যোগ্য বিবেচনা করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক আর্থিক দরপ্রস্তাবে ১২টি ইঞ্জিন মেরামত, ওভারহল ও আয়ুষ্কাল বাড়ানোর জন্য ৩৪.১ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাব করে। পরে আলোচনার মাধ্যমে তা কমিয়ে ৩০.৬ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়।
এর সঙ্গে ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন, সুইফট চার্জসহ মোট ব্যয় হবে প্রায় ৩৭৯.৬৮ কোটি টাকা। বিমানবাহিনী নিশ্চিত করেছে, বরাদ্দকৃত বাজেট সিলিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেই এ অর্থ পরিশোধ করা হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। বাজেট সংকুলানের কারণে পর্যায়ক্রমে চলতি অর্থবছর থেকে ২০২৭-২৮ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরে অর্থ পরিশোধ করা হবে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলেই চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
সূত্র জানায়, আটটি মিগ-২৯ বিমানের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চারটি বিমানের ওভারহল, আয়ুষ্কাল বর্ধিতকরণ ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে, যার টাইম বিটুইন ওভারহল (টিবিও) আয়ুষ্কাল ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত বিদ্যমান।
বাকি চারটি বিমানের ওভারহল, আয়ুষ্কাল বর্ধিতকরণ ও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একটি চুক্তি করা হয় এবং ওই চুক্তির আওতায় বিমানগুলো ওভারহল করার জন্য ওভারহলিং প্রতিষ্ঠান বেলারুশের জেএসসি ৫৫৮ এয়ারক্রাফট রিপেয়ার প্ল্যান্ট-এ পাঠানো হয়েছে। ওভারহল শেষে এই বিমানগুলো ২০২৫ সালের অক্টোবর নাগাদ ফের বিমানবাহিনীতে যুক্ত হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাশিয়ার কাছ থেকে এসব যুদ্ধবিমান কেনা হয়েছিল।
অচল মিগ-২৯ ইঞ্জিনগুলো মেরামত করতে প্রায় তিন বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সফল হয়নি বাংলাদেশ।
ওয়ারপাওয়ারবাংলাদেশ ডটকম-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট ২১২টি বিমান রয়েছে, যার মধ্যে যুদ্ধবিমান ৪৪টি। এর মধ্যে ৩৬টিই চীনের তৈরি এফ-৭এস।