চলমান প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি ঠেকাতে নজরদারি বাড়াবে সরকার

চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান প্রকল্পে দুর্নীতি শনাক্তে সংস্থাটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। এ বিষয়ে দুই সংস্থার মধ্যে শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, "দুটি পর্যায়ে প্রকল্পে দুর্নীতি হয়—প্রথমটি প্রকল্প প্রণয়নের সময় এবং দ্বিতীয়টি বাস্তবায়নের সময়। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত নজরদারি থাকে না। এ কারণে নতুন কৌশল নেওয়া হয়েছে।"
তিনি বলেন, "বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি ক্রয় আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।"
বুধবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, "আইএমইডি চলমান প্রকল্প পরিদর্শন করে অনেক সময় সাধারণ কিছু সুপারিশ দেয়, যার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয় না। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে অনিয়মের কৌশল উদ্ঘাটন করেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। এখন থেকে চলমান প্রকল্পে কীভাবে অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়, তা খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।"
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, "অনেক সময় প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, কিন্তু তদন্ত চলাকালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবসরে চলে যান, ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণেই চলমান পর্যায়ে দুর্নীতি শনাক্ত করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।"
তিনি আরও জানান, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর এর প্রকল্প পরিচালক ৬৫৭১ কোটি টাকার কোনো হিসাব দিতে পারেননি। বর্তমানে তিনি পলাতক। অডিট আপত্তিগুলো এখনও নিষ্পন্ন হয়নি।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, "মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট হলেও পিডিবি সেখানে থেকে মাত্র ১৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়, যা দুঃখজনক। কেন্দ্রটি সচল রাখতে সপ্তাহে দুবার কয়লা আমদানি করতে হয়। আগে নিম্নমানের কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হতো, যা এখন পরীক্ষার জন্য ব্যাংককে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু যারা পাঠিয়েছেন, তারা পরীক্ষার প্রতিবেদন আনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।"
তিনি বলেন, "উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলেও তা বেশিদিন টেকে না। কেন টেকে না, কেন ভাঙে, কার গাফিলতি—এসব খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হবে। বিভিন্ন এলাকায় শুধু মেরামত চলতেই থাকে, সময় ও খরচ বাড়ে, কিন্তু কাজ শেষ হয় না। সমস্যার মূল কারণ, প্রয়োজন অনুযায়ী বাঁধ তৈরি হয় না।"
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে বেড়িবাঁধ প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একনেক সভায় ৯ প্রকল্পের অনুমোদন
একনেক সভায় মোট ৩,৭৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রকল্পের জন্য ৫৫৫.৩৯ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, "কড়াইল বস্তিকে বাইপাস করে লেক উন্নয়নের বাকি কাজ করা হবে। লেকটির দূষণ বেড়েছে, কিছু জমিও দখল হয়ে গেছে। ২০১০ সালে কাজ শুরু হলেও কয়েক বছর পর আর অগ্রগতি হয়নি। এবার ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে বলা হয়েছে।"
"বর্জ্য পরিশোধন ছাড়া যেন প্রকল্পের টাকা খরচ না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি রাজউকের প্রকল্প হলেও বন বিভাগের প্রতিনিধিকে এতে যুক্ত করা হবে। শুধু গুলশান-বারিধারা নয়, পুরো ঢাকা নগরকে বাসযোগ্য করতে এই প্রচেষ্টা," যোগ করেন তিনি।