১৫ মে থেকে বাজারে মিলবে রাজশাহীর আম

রাজশাহীতে আম পাড়ার সময়সূচি ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী ১৫ মে থেকে গুটি আম পাড়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ। এ বছর প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আম পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও সংগ্রহ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। উপস্থিত ছিলেন কৃষি অধিদপ্তর, ফল গবেষণা কেন্দ্র, কুরিয়ার সার্ভিস, কৃষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
জেলা প্রশাসক জানান, আবহাওয়া ও আমের পরিপক্বতা বিবেচনায় এই সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম, ২২ মে গোপালভোগ, ২৫ মে রানী পছন্দ বা লক্ষণভোগ, ৩০ মে হিমসাগর/ক্ষীরসাপাতি, ১০ জুন ব্যানানা ম্যাংগো ও ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌরমতি এবং কাটিমন ও বারি-১১ আম পাকা সাপেক্ষে সারাবছরই সংগ্রহ করা যাবে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, আগাম অপুষ্ট আম পাড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, "আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর আমের ফলন ভালো। জেলায় ১৯,৬০৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।"
চারঘাটের সাদিপুরের আমচাষী আকবর হোসেন সরকার জানান, তার ৭০ বিঘার বাগানে নানা জাতের আম এসেছে, ফলন আশানুরূপ। তিনি বলেন, "আবহাওয়া শুরু থেকে অনুকূলে ছিল, এখন তাপমাত্রা বাড়ছে—বৃষ্টি হলে আরও ভালো হবে।"
তবে চরঘাটের বদিরহাটের আলতাফ হোসেন জানান, ফেব্রুয়ারি-মার্চের কুয়াশা ও হঠাৎ বৃষ্টিতে কিছু আম ঝরে গেছে। এখন গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিতে হচ্ছে।
চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান জানান, এখানকার ৪,৯০৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তাপদাহ থেকে বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাঘার আড়ানীর মাহাতাব উদ্দিন বাদশা বলেন, "কিছু আম ঝরে পড়লেও এবার গাছে গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ আম আছে। কৃষকরা ভালো দাম পেলে লাভবান হবেন।"
বাঘার আমচাষী শফিকুল ইসলাম সানাও বলেন, "এবার গাছে আম আছে, তবে বাম্পার ফলন হবে তা নয়। সরকারের উচিত দাম নিশ্চিত করা।"
বাঘা উপজেলায় এবার সবচেয়ে বেশি, ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান। "প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন হবে আশা করা হচ্ছে।"
রাজশাহীর বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে থোকা থোকা আম ঝুলছে, কৃষকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত।
ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, "এ বছর যে গাছে অনেক আম আছে বিষয়টা এমন নয়। আবার যে কম আম আছে তা-ও নয়। মধ্যম পর্যায়ের মতো আম আছে। আবহাওয়া যদি খুব তীব্র পর্যায়ের না পৌঁছায়, বর্তমানের মতো পরিস্থিতি থাকলে আমের ফলন ভালো হবে।"