সরকারের প্রতি কিছু বিষয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে: নুরুল কবির

অন্তবর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে রাজনৈতিক নায্যতা রয়েছে উল্লেখ করে 'দ্য নিউ এইজ' পত্রিকার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সহ-সভাপতি নুরুল কবির বলেছেন, কিছু বিষয়ে হতাশাও তৈরি হয়েছে।
আজ রোববার (৪ মে) দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে 'বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫' উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্পাদক পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।
সরকারের ন্যয্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ন্যায্যতা বলছি এই কারণে যে, একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে – তাদের সক্রিয় অনুমোদনের ভিত্তিতে, এই সরকার প্রতিষ্ঠিত আছে।
"সরকার যখন শুরু থেকে নিজেকে সংষ্কারমুখী ঘোষণা করেছে, সারা দেশের জনগণ যখন গণতান্ত্রিক সংষ্কারের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে বলে দেখেছি। কিন্তু এই সরকারের প্রতি কিছু কিছু বিষয়ে হতাশাও তৈরি হয়েছে।
যেমন ধরুন গণতান্ত্রিক সংষ্কারের জন্য অনেকগুলো কমিশন গঠিত হয়েছে; সাংবিধানিক সংষ্কার, প্রশাসনিক সংষ্কার, অর্থনীতি সংষ্কার, স্বাস্থ্য সংষ্কার ও মিডিয়া সংষ্কার নিয়েও কমিশন গঠন হয়েছে। তবে আমরা পরিষ্কারভাবে জানি, এমন কিছু আইন প্রত্যাহার বা বাতিল করার ব্যাপারে কমিশন গঠিত হবার বহুপূর্বে স্যোসাল কনসেনসাস (সামাজিক ঐক্যমত) তৈরি হয়েছে। সেগুলো বাতিল করার জন্য কোনো সংষ্কার কমিশনের প্রয়োজন ছিল না।"
তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর দেশের সরকার বলেছে, কিছু কিছু দেশের সঙ্গে অসম আন্তর্জাতিক চুক্তি রিভিউ (পর্যালোচনা) করবে। কোন প্রক্রিয়ায় করবে, সেটা আমরা এখনো জানি না।
আরও কিছু কনফিউশন তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐক্য কথাটা শুনলে খুব ভালো লাগে, পৃথিবীতে কোনো দেশেই সংকটকালে জাতীয় ঐক্য ছাড়া সংকট মোকাবিলা করার পথ থাকে না। বাংলাদেশে প্রায় বহুসময় ধরে সংকটকালে রাজনৈতিক এক্যমত হতে দেখিনি। কিন্তু এবার যে ঘোষণা এসেছিল, সত্যি সত্যি মিডিয়া কিংবা নাগরিকদের পক্ষ থেকে বলব, আমরা অতীব খুশি হয়েছিলাম।
নুরুল কবির বলেন, যখন সারা দুনিয়ায় প্রতিবছর একবার করে মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়, তার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, যে সারা পৃথিবীতে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করে। যেখানে তার স্বাধীনতা প্রায় ক্ষুন্ন হয়। অথচ মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া কোনো একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর অসম্ভব।
তিনি বলেন, "গতবছর মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালনের চেয়ে এবছর কিছুটা পার্থক্য সূচিত হয়েছে। এটা আমরা কতটা ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে পারি, এটা কেবল গণমাধ্যম কর্মীদের ওপরই নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে প্রধানত রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করে, যারা আইন প্রণয়ন করেন, যারা আইন পরিবর্তন করেন— তাদের ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করে।"
উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে দেশের প্রখ্যাত এই সম্পাদক বলেন, আজকে এখানে উপস্থিত আছেন কয়েকজন সম্মানিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। অনুমান করা যায়, সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে— তারা আগামী দিনে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করবেন। তাদেরকে এইটুকু বলে শুরু করতে চাই যে, বাংলাদেশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বহু দেশের নীচে অবস্থান করছে। এটা কেবল দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য লজ্জাজনক, দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর, শুধু তাই নয়, এই দেশের যারা রাজনীতিক, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন— তাদের জন্যও।
তিনি বলেন, "গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপন্ন করার ক্ষেত্রে— রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যেসমস্ত আইনকানুন তৈরির মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়, মূলত এটার জন্য রাজনীতিবিদরা দায়ী। বিগত ১৬ বছরে অনেক কুখ্যাত আইনের কারণে সংবাদকর্মীরা নিপীড়নের শিকার হয়েছে।"