আমাকে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের চাকরি গেছে, এ কথা হাস্যকর: ফারুকী

জুলাই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করার জেরে তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ঘটনায় তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই বলে দাবি করেছেন তিনি। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আনা এমন অভিযোগকে হাস্যকর বলেও উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে এক পোস্ট দিয়ে এ কথা জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'অনলাইনে কাউকে কাউকে একটা কথা বলার চেষ্টা করতে দেখছি যে, আমাকে প্রশ্ন করায় চাকরি গেছে তাদের (সাংবাদিকদের)। হাস্যকর কথা। বিষয়টা যে আমি না, বিষয়টা যে জুলাই এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পলিসির ব্যাপার—এটাও তারা বুঝতে পারছে না।'
পোস্টে উপদেষ্টা আরও লেখেন, 'ম্যাস মার্ডার ডিনায়ালের একটা সূক্ষ্ম চেষ্টা থেকে কালকের প্রেস কনফারেন্সে যে কথাগুলা বলেছেন তিনজন সাংবাদিক, সেই কথাগুলা জুলাই দেখেছে এমন যেকোনো সেনসেটিভ মানুষকেই আহত করতে পারে। যে মা তার সন্তান হারিয়েছেন মাত্র আট মাস আগে, যে সন্তান খুনীর গুলিতে আহত হয়েছে, যে বোন-যে ভাই শহীদ হওয়ার হাত থেকে বেঁচে এসেছে, তাদের বুকে শেলের মতো বিঁধেছে সাংবাদিক তিনজনের কথা।'
'ঘটনা থেকে মাত্র আট মাস দূরে দাঁড়িয়ে আমরা, খুনীর বিচার হয় নাই এখনো। পশ্চিমে বিচার হওয়ার পরেও এখনো হলোকাস্ট ডিনায়াল মানুষের বুকে লাগে। আর কালকে যখন প্রশ্ন করা হলো, একজন খুনীকে খুনী বলা যাবে কিনা—এই প্রশ্ন জনতার জুলাইকেই বেমালুম নাই করে দেওয়ার একটা চেষ্টা হিসাবেই দেখেছে সবাই। প্রেস কনফারেন্সে তাদের কথাগুলা আমাকে বিস্মিত করলেও ধৈর্য নিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি।'
'তারপর মানুষ তাদের ক্ষোভ জানিয়েছে। এবং আজকে সন্ধ্যায় জানলাম চ্যানেলগুলা তাদের চাকরীচ্যুত করেছে। প্রত্যেক চ্যানেলেরই নিজস্ব এডিটোরিয়াল পলিসি থাকে। তারা সেই পলিসির আলোকে কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা তাদের ব্যাপার,' যোগ করেন ফারুকী।
পোস্টের শেষে তিনি লিখেছেন, 'সবার উদ্দেশ্যে ফর দ্য রেকর্ড বলে রাখছি, তাদের চাকরীর ব্যাপারে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নাই। এই বিষয়ে সংশয় থাকলে ঐ চ্যানেলগুলার সাথে যোগাযোগ করলেই সবাই সত্য জানতে পারবেন। অনুমানে দুইয়ে দুইয়ে চার না মেলানোই ভালো।'
এর আগে, সোমবার কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরে 'আলী' নামে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের যাওয়া উপলক্ষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এবং ওই চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে নানা বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।
সেখানে সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন আসে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে আয়োজিত বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার ইউনেস্কো স্বীকৃতি, শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মুখাকৃতির আদলে মুখোশ এবং জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানের নিহতের সংখ্যা নিয়ে। এসব প্রশ্ন নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
এ ঘটনার পরে গতকাল মঙ্গলবার দীপ্ত টিভি তাদের চ্যানেলে একটি নিউজ স্ক্রল করে ঘোষণা করে যে, তারা সংবাদ সম্প্রচার সাময়িকভাবে স্থগিত করবে।
চ্যানেলটির এক সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কীভাবে 'জুলাইয়ের শহীদের' সংখ্যা ১৪০০ বললেন।
এর আগে, ওই দিন সকালে সামাজিক মাধ্যমে একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়ে- যেখানে সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়।
যদিও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এই তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে দীপ্ত টিভির সিইও তাসনুভা আহমেদ টিনা বলেন, "এই স্থগিতাদেশ একটি অভ্যন্তরীণ সংস্কারের অংশ। আমরা সংবাদ বিভাগ বন্ধ করে দিইনি।"
এ ঘটনার জেরে দীপ্ত টিভি ছাড়াও সাংবাদিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া এরকম আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান (বিবিসি বাংলাকে) জানান, সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জের ধরে তাদের টিভি চ্যানেল ঘেরাওয়ের হুমকি দেওয়া হয়েছে। যে কারণে প্রশ্ন করা ওই প্রতিবেদককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিবিসির বাংলার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান দুটিতে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সচিবালয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের দুই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ঘিরেই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
একই কারণে চ্যানেল আইয়ের এক প্রতিবেদককেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত শুরু করার কথা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।