পুলিশ সপ্তাহ: স্বাধীন কমিশন গঠন, সাইবার ইউনিট চাওয়া হবে সরকারের কাছে

ভিন্ন এক বাস্তবতায় আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কাছে বাহিনীটি স্বাধীন কমিশন ও সাইবার ইউনিটসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবি পেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সাধারণত সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত এ কর্মসূচি এবার তিনদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের করণীয় নির্ধারণই হবে এ অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল সকাল ১১টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে 'পুলিশ সপ্তাহ'-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনী জনরোষের মুখে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। এ সময় পুলিশের ৪৬ সদস্য প্রাণ হারান এবং থানাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে এবারের পুলিশ সপ্তাহ ভিন্ন বাস্তবতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এবারের পুলিশ সপ্তাহ সাত দিনের পরিবর্তে তিন দিনের করা হয়েছে এবং কোনো প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে না। শিল্ড প্যারেডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশের সম্মিলন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎও থাকছে না। এমনকি প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কোনো সেশন হবে না এবার।
এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করা হবে। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোতে তাদের দাবির প্রতি সরকারের আগ্রহ কম ছিল। তবে এবারে পুলিশ সদস্যরা আশাবাদী, বর্তমান সরকার তাদের দাবি পূরণ করবে।
পুলিশ সদরদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১২টি দাবি উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে কয়েক দফা বৈঠক শেষে ছয়টি দাবি চূড়ান্ত করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি, এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠন এবং একই পদে দীর্ঘদিন চাকরির পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি।
এদিকে, পুলিশ সপ্তাহে আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ও কঠোর বার্তা দেওয়া হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কাজ শুরু করেছেন।
পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর বলেন, "মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।"
বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) দিয়ে পুলিশ সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে এবার পদকপ্রাপ্তদের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় কমে এসেছে।
২০১৯ সালে ৩৪৯ জন পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল, এবার মাত্র ৬২ জনের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সাবেক আইজিপি, ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, কমিশনার, এসপি এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল, ২৯ এপ্রিল, দুপুর ১২টায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। ইউনিটপ্রধানরা ভার্চুয়ালি প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। দরবার শেষে বিকেল সাড়ে ৩টায় আইজিপি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।
৩০ এপ্রিল, বুধবার সকালে এসবি, সিআইডি ও র্যাবের প্রেজেন্টেশন হবে। দুপুর ১২টায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই ও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রেজেন্টেশনও হবে।
১ মে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে এপিবিএন, রেলওয়ে পুলিশ ও নৌ-পুলিশের প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন ও বার্ষিক পুনাক সমাবেশ হবে। বিকেলে শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রেজেন্টেশন এবং অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, "তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ সফলভাবে উদযাপিত হবে বলে আমরা আশা করছি। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।"