সংখ্যালঘু ও নারী অধিকার বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান জানতে চেয়েছে ইইউ

ব্রাসেলসে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে সংখ্যালঘু ও নারী অধিকার বিষয়ে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) মগবাজারে দলীয় অফিসে ইইউয়ের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান সাক্ষাৎ করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংগঠনটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, 'আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দাওয়াতে ব্রাসেলসে গিয়েছিলাম। সেখানে ইইউর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এবং সুইডেন সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।'
তিনি বলেন, 'কর্মকাণ্ড এবং মিউচুয়াল ইন্টারেস্টের (পারস্পরিক স্বার্থ) যে বিষয়গুলো, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে ইইউ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পারস্পরিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতা কীভাবে হতে পারে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।'
'সেখানে কয়েকটি বিষয় তারা জানতে চেয়েছিল—জামায়াতে ইসলামীর ডেমোক্রাসির (গণতন্ত্র) ব্যাপারে অবস্থান কী, মহিলাদের অধিকারের ব্যাপারে আমাদের নীতিমালা কী হতে পারে এবং সংখ্যালঘু ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর নীতিমালা কী হতে পারে। এসব ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে এবং আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। তারা এতে আশ্বস্ত হয়েছেন', যোগ করেন ডা. তাহের।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি বিশেষভাবে গণতন্ত্র ও নারীর অধিকারের বিষয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রতি কয়েকটি কমন প্রশ্ন আছে, যেমন- নারীর অবস্থান, জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পর্ক আছে কি না এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী। আজকের আলোচনায়ও এসব প্রশ্ন এসেছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি— নারী ও পুরুষ উভয়ের অধিকার রক্ষায় আমরা অত্যন্ত সচেতন ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রত্যেকের সম্মান ও মর্যাদার অধিকার আমরা সমানভাবে সমর্থন করি।
তিনি আরও বলেন, তবে একটি বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে—রিফর্ম কমিটির প্রস্তাবে যৌনকর্মীদের লাইসেন্স দেওয়ার যে প্রস্তাব এসেছে, সেটাকে আমরা নারীদের জন্য লজ্জাজনক, অমানবিক এবং তাদের মর্যাদার পরিপন্থী বলে নিন্দা করেছি। তবে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে আমরা বরাবরই উৎসাহিত করি। আমাদের দলের ৪৩ শতাংশ সদস্য নারী, যা অন্যান্য দলের তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের দলে নারী এমপিও ছিলেন।
পোশাক শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস রপ্তানির গন্তব্য ইউরোপ। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে প্রস্তাব দিয়েছি— বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেখানে তারা আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ইকুয়াল প্লেয়িং ফিল্ড (সমান সুযোগ) তৈরির জন্য, বিশেষ করে প্রতিটি বুথে সিসি ক্যামেরা যাতে থাকে, তা আমরা প্রস্তাব করেছি। এবং তারা এটিকে উৎসাহিত করেছে। এজন্য যে বিশাল বাজেট দরকার, আমরা তাদেরকে বলেছি এ ব্যাপারে যেন তারা আমাদের সহযোগিতা করেন।'
সংস্কার কমিশনের ব্যাপারেও ইইউ জামায়াতে ইসলামীর কাছে জানতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন নায়েবে আমীর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা বলেছি, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রীর পদে দুইবারের বেশি কেউ নির্বাচিত হতে পারবে না। সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাবের সাথে আমরা একাত্মতা পোষণ করেছি। গতকালও যেটা আমরা প্রেস ব্রিফিং এ বলেছি।'