ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর স্থগিত

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকায় নির্ধারিত সফরটি স্থগিত করা হয়েছে। আগামী রোববার দুইদিনের সফরে (২৭-২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশে আসার কথা ছিল তাঁর, তবে অনিবার্য কারণবশত সেটি স্থগিত করা হয় বলে জানিয়েছে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, "অনিবার্য কারণবশত মাননীয় উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী ২৭-২৮ এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারছেন না।"
উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সফরের নতুন তারিখ চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক এক জঙ্গি হামলার পরে পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল। ওই হামলায় জঙ্গিরা ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করে।
সে ঘটনার পর থেকেই বৈরী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম রূপ নিয়েছে। উভয় দেশই একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে।
ভারতের দাবি এঘটনায় জড়িত পাকিস্তানের জঙ্গিরা। ভারতীয় পুলিশ এরমধ্যে সন্দেহভাজন তিন জঙ্গির কথা উল্লেখ করে বলেছে, এদের মধ্যে দুজনই পাকিস্তানী। তবে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া, এ ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ বা বিস্তারিত তথ্যও জানায়নি নয়াদিল্লি।
তবে সন্ত্রাসী হামলার পরপরই পাকিস্তানি নাগরিকদের দেওয়া সব ভিসা স্থগিত করেছে ভারত।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, '২৭ এপ্রিল (রোববার) থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ইস্যু করা সব বৈধ ভিসা বাতিল করা হলো। তবে মেডিকেল ভিসার বৈধতা থাকবে ২৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত। বর্তমানে যেসব পাকিস্তানি নাগরিক ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের উল্লিখিত সময়ের ভারত ত্যাগ করতে হবে।'
পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক 'এক্স' (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টও ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায়, পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সাআদ আহমেদ ওয়ারিচকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।
ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যায়ক্রমে হ্রাস করাকে— পাকিস্তানের ওপর "সর্বোচ্চ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ" হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বুধবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে যে পরিমাণ পানি পাকিস্তানের পাওয়ার কথা, চুক্তি স্থগিত করায় আপাতত তা ব্যাহত হবে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো— আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। বুধবার থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থলসীমান্ত বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সীমান্ত দিয়ে যারা ভারতে ঢুকেছেন, তাদের সবাইকে ১ মের মধ্যে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো দিল্লিতে— পাকিস্তানের হাইকমিশনে নিযুক্ত সব সামরিক, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাকে বহিষ্কার। তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইসলামাবাদে ভারতের হাই কমিশনে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনছে নয়াদিল্লি।
চতুর্থ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সীমান্তচৌকি বন্ধ ও দূতাবাসে কর্মীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি পাকিস্তানিদের ভারতে আসাও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে সব পাকিস্তানির জন্য সার্ক ভিসা বাতিল করার কথা জানানো হয়েছে। এই ভিসায় যারা ভারতে রয়েছেন, তাদের ফেরত যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম সিদ্ধান্তটি হলো, দুই দেশের হাইকমিশনগুলোতে কর্মরত লোকবল সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে।
এর প্রেক্ষিতে, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে আটারি-ওয়াঘা সীমান্তপথ বন্ধ, সিমলা চুক্তি স্থগিত, ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার, আকাশপথ ও বাণিজ্য বন্ধসহ একগুচ্ছ পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আলোচনার মূল বিষয় ছিল 'পেহেলগা্মে ভারতের ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন'- পরবর্তী অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রেক্ষাপট।