সরকারের হুঁশিয়ারির পর খুলনা ও শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল

আজ (২০ এপ্রিল) সকালে খুলনা শহরে ঝটিকা মিছিল বের করেছে আওয়ামী লীগ। এর আগে গতকাল (১৯ এপ্রিল) রাতে শরীয়তপুরে মশাল মিছিল করেছে দলটি। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই জেলাগুলোতে এই প্রথম প্রকাশ্যে মিছিল করলেন দলটির নেতাকর্মীরা।
এ দুটি জেলায় মিছিলের ঘটনায় নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর এ ধরনের মিছিল বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই মিছিলগুলো হওয়ায় আলোচনা হচ্ছে বেশি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল (১৯ এপ্রিল) সতর্ক করে দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ও ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের কোনো নিষ্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনায় 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, খুলনা জেলা শাখা'-র ব্যানারে আয়োজিত ঝটিকা মিছিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে বের হয়।
খুলনার এই ঝটিকা মিছিলে জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
এই মিছিলে নেতৃত্বদানকারী একজন নেতা নাম প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত ৫ এপ্রিলে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের টেলিগ্রামের মাধ্যমে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে নেত্রী সবাইকে মনোবল ধরে রাখতে বলেছিলেন। তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন মিছিল করার জন্য। তার নির্দেশনা অনুসারেই এই মিছিল করা হয়েছে।'
এ মিছিলের ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত একটি ব্যানার ধরে আছেন।
এ সময় তারা 'শেখ হাসিনার বাংলাদেশ', 'শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই', 'নেতা মোদের শেখ মুজিব', 'আমরা সবাই মুজিব সেনা'সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্লোগান দেন।
হরিনটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাশার টিবিএসকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের কর্মীরা গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে ঝটিকা মিছিল করে খুব দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।'
'ঘটনাটা যেহেতু ভোরে ঘটেছে, তাই রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা ছিল। পুলিশ জড়িতদের শনাক্ত এবং আটক করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে,' বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে খুলনায় ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে এ নিয়ে জেলা বা মহানগর পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য প্রতাপ কুমার রায় বলেন, 'শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা আজগুবি ও গায়েবি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তাকে যথাযথ মর্যাদায় দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আমরা এই মিছিল করেছি।'
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-কমিশনার মো. আবু তারেক জানান, মিছিলের স্থানটির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে এবং ইতোমধ্যে তাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। খুলনায় দলের দায়িত্বশীল নেতা ডা. আব্দুল চৌধুরী বলেন, 'জিরোপয়েন্ট এলাকায় শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অসংখ্য শিক্ষার্থী রক্ত ঝরিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ছাত্রনেতারা প্রশাসনকে সতর্ক করলেও তারা নজর দেয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'একটি স্বৈরাচার দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে না পারা দুঃখজনক। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ বিষয়ে দাবি তুলবো এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খুলনায় আমাদের কার্যক্রম শুরু হবে।'
এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিলটন। তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ অতীতে দেশে নির্যাতন ও জুলুম চালিয়েছে। এখন তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। প্রশাসনের উচিত, তাদের স্বৈরাচারী কার্যক্রম ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেওয়া।'
শরীয়তপুরে মশাল মিছিল
এদিকে গতকাল রাত (১৯ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে শরীয়তপুরের জয়নগর এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল বের করেন।

৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শতাধিক ব্যক্তি মশাল নিয়ে মিছিল করছেন। তাদের অনেকেই মুখে মাস্ক পরে আছেন এবং শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশংসা করে স্লোগান দিচ্ছেন।
ফুটেজটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার করেছেন। গত রাতে দলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও শেয়ার করা হয়েছে।
শরীয়তপুরেও খুলনার মতো একই স্লোগান দিতে শোনা গেছে বিক্ষোভকারীদের।
স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বিক্ষোভের আয়োজন করা হচ্ছে।'
'এর অংশ হিসেবে শরীয়তপুরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এই মশাল মিছিল করেছেন। এখন থেকে দল নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে,' বলেন তিনি।
পালং মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের মশাল মিছিলের বিষয়টি সত্য। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'