বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়, জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া অভিনেত্রী ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের জন্য আটকে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মেঘনার বাবার করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে রোববার (১৩ এপ্রিল) বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদির হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
রুলে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার, কারণ না জানিয়ে গ্রেপ্তার, ২৪ ঘণ্টার বেশি ডিবি হেফাজতে রাখা, আইনজীবীকে সুযোগ না দেওয়া এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি জানান, আদালত দুটি বিষয়ে অর্থাৎ গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ও আটকাদেশের বৈধতা প্রশ্নে দুই সপ্তাহের রুল জারি করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল রাতে অভিনেত্রী ও সাবেক মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
ডিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহর আদালত তাকে হেফাজতে রাখার আদেশ দেন।
এর আগে, মেঘনাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিশ্চিত করে, তিনি তাদের হেফাজতে রয়েছেন। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তাকে হেফাজতে রাখা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারার আওতায় মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে রাখা হয়েছে। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ কার্যক্রমে জড়িত হওয়া থেকে তাকে বিরত রাখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা উক্ত আইনের ২(চ) ধারায় সংজ্ঞায়িত।
আদালতের নির্দেশের পর মেঘনাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
এই ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার সন্ধ্যায় একটি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচারের পর। সেই লাইভে মেঘনা আলম অভিযোগ করেন, পুলিশ পরিচয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করেন। প্রায় ১২ মিনিটের ওই ফেসবুক লাইভ হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে সরকার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাউকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিচার ছাড়াই হেফাজতে রাখতে পারে। সাধারণত জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে এই ক্ষমতা ব্যবহার করা হয়।
মেঘনা আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর 'মিস আর্থ বাংলাদেশ' খেতাব জিতে আলোচনায় আসেন। পরিবেশ রক্ষা করতে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক দিয়ে নতুন পণ্য বানিয়ে এবং তা বিক্রয়ের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করে নারীদেরকে স্বাবলম্বী করার প্রচেষ্টার জন্য তিনি প্রশংসিত হন।
সম্প্রতি তিনি নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দাবি করেন, এক বিদেশি কূটনীতিক পুলিশকে প্রভাবিত করে তার পরিচিতজনদের তুলে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তাকে 'সত্য' প্রকাশ না করতে হুমকি দিচ্ছেন। এসব পোস্টও পরবর্তীতে সরিয়ে ফেলা হয়।
এদিকে, মেঘনা আলমের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আজ রোববার (১৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার করার প্রক্রিয়াটা হয়তো ঠিক হয় নাই। বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগটা ঠিক হয় নাই।'
তিনি আরও বলেন, মডেল মেঘনা আলমকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিটেনশন দিয়েছিল। এটা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আছে; পুলিশ তদন্ত করেছে।
এছাড়াও, মেঘনা আলমকে আটক করার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি)। এই সমালোচনার মধ্যে আজ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে। তাকে ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে সংযুক্ত করা হয়েছে।