ঈদের ছুটিতে ডেলিভারি কমে চট্টগ্রাম বন্দরে জমেছে অতিরিক্ত ১১ হাজার কন্টেইনার

ঈদুল ফিতরের টানা ছুটির প্রভাব পড়েছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে। ছুটিতে কার্যক্রম সচল থাকলেও কন্টেইনার ডেলিভারিতে ভাটা পড়ায় ১০ দিনের ব্যবধানে বন্দরের ইয়ার্ডে জমেছে প্রায় ১১ হাজার আমদানি কন্টেইনার। এতে বন্দরে তৈরি হয়েছে কন্টেইনার জট।
তবে ঈদের ছুটির আগে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোতে (আইসিডি) রপ্তানি কন্টেইনার দ্বিগুণ হলেও এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২৬ মার্চ ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৩০ হাজার ৪৩ টিইইউ (২০ ফুট সমতুল্য ইউনিট)। ৫ এপ্রিল তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৯৪৮ টিইইউতে। অর্থাৎ এই সময়ে ১০,৯০৫ টিইইউ কন্টেইনার জমেছে।
যদিও ছুটির সময়ও বন্দরের পণ্য ওঠানামা কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল, ডেলিভারির হার কমে যাওয়ায় জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
কন্টেইনার ডেলিভারিতে পতন
চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউ হলেও কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ৩০-৩৫ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতাকে উপযুক্ত ধরা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সীমা ছাড়িয়ে গেছে প্রায় ৫ হাজার টিইইউ।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল ছিল ঈদের ৯ দিনের ছুটি। এ সময়ে বন্দর সচল রাখতে জনবল, ব্যাংক বুথ ও বিভাগগুলো খোলা রাখা হয়। তবু ব্যবসায়ীরা কন্টেইনার ডেলিভারিতে তেমন আগ্রহ দেখাননি।
বন্দরের তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৩,৫০০ থেকে ৫,০০০ টিইইউ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। তবে ২৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল এই হার ছিল অনেক কম। এই সময়ে প্রতিদিনের ডেলিভারি ছিল যথাক্রমে: ২৬ মার্চ – ৫,৭১৭ টিইইউ; ২৭ মার্চ – ৩,১৯৮; ২৮ মার্চ – ৪,১৮২; ২৯ মার্চ – ২,৯৭৬; ৩০ মার্চ – ১,৭৫৩; ৩১ মার্চ – ৮০৯; ১ এপ্রিল – ০; ২ এপ্রিল – ৬৯১; ৩ এপ্রিল – ৫৪৪; ৪ এপ্রিল – ১,১০০
এবং ৫ এপ্রিল – ১,৩৯৭ টিইইউ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, "ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অন্যান্য সময়ে বন্দর চালু ছিল। কন্টেইনার ডেলিভারির প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু আমদানিকারকরা ডেলিভারি না নেওয়ায় অতিরিক্ত কন্টেইনার জমে যায়।"
তবে কয়েকদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, "বন্দর সচল থাকলেও কাস্টমস পুরোপুরি চালু থাকে না। বন্দর চালুর সুফল পেতে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকেই চালু রাখতে হবে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
আইসিডিতে রপ্তানি কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা ফিরছে
ঈদের ছুটির আগে চট্টগ্রামের ১৯টি আইসিডিতে রপ্তানি কার্যক্রমে চাপ থাকলেও এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) জানায়, ১৫ মার্চ পর্যন্ত আইসিডিতে রপ্তানি কন্টেইনার ছিল ৭,৭৫৯ টিইইউ। ২৯ মার্চ তা বেড়ে হয় ১৪,৫১৬ টিইইউ। ৪ এপ্রিল তা কমে হয় ৮,৬৬২ টিইইউ।
অর্থাৎ, ছয় দিনে আইসিডিগুলোতে রপ্তানি কন্টেইনার কমেছে ৫,৮৫৪ টিইইউ। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি কন্টেইনার ছিল ৭,০০৬ টিইইউ এবং মোট কন্টেইনার ৬০,৭৬৫ টিইইউ।
বিকডার সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার বলেন, "ঈদের আগে গার্মেন্টস মালিকরা ঈদের পরের শিপমেন্টের পণ্যও আইসিডিতে পাঠিয়ে দেন। এতে রপ্তানি কন্টেইনার ১৪ হাজার টিইইউ ছাড়িয়ে যায়, যা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়। তবে ছুটিতে পণ্য আসা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।"
চট্টগ্রামের ১৯টি আইসিডির সম্মিলিত রপ্তানি কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ১০ হাজার টিইইউ। সাধারণত এসব ডিপোতে ৬,০০০–৭,০০০ টিইইউ রপ্তানি কন্টেইনার থাকে। প্রতিদিন ২,২০০–২,৩০০ টিইইউ কন্টেইনার জাহাজে ওঠানো হয়।
চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি)—যেগুলো 'অফ-ডক' নামেও পরিচিত—দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ রপ্তানি পণ্য পরিবহন করে থাকে এবং ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য পরিচালনা করে।