যশোরে অচল পড়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত ৩ মার্কেট

যশোরে প্রায় ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি আধুনিক মার্কেট বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কাজে আসছে না। মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে আধুনিক ফুল বিপণন কেন্দ্র, এসেম্বল সেন্টার ও মাছের পোনা বিক্রয়কেন্দ্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত এসব অবকাঠামো ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন মেটাতে না পারায় অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
২০২১ সালে যশোরের গদখালি-পানিসারা এলাকায় ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে আধুনিক ফুল মার্কেট নির্মাণ করা হয়। দৃষ্টিনন্দন ভবন, বীজ সংরক্ষণের হিমাগার, ফুল প্যাকেজিংয়ের মেঝে ও শেড থাকলেও এখানে বেচাকেনা তো দূরের কথা, বীজ সংরক্ষণও হয় না। ফুলচাষিরা প্রতিদিন মাঠ থেকে ফুল নিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে গদখালি বাজারে বিক্রি করেন।
মার্কেট নির্মাণের পর জমির মালিকানা জটিলতা ও আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনার নীতিমালা না থাকায় জেলা প্রশাসন দেরিতে বুঝে নেয়, ফলে উদ্বোধন বিলম্বিত হয়। ২০২২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলেও চাষিদের আগ্রহ মেলেনি।
চাষিরা জানান, পানিসারার এই মার্কেট গদখালি বাজার থেকে দূরে হওয়ায় পরিবহন খরচ ও কষ্ট বেড়ে যায়। উপরন্তু গদখালিতেই ফুল সরবরাহ সহজ হওয়ায় তারা সেখানে থেকেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফুলচাষি নুরনবি বলেন, 'অপরিকল্পিতভাবে মার্কেটটি দূরে নির্মাণ করা হয়েছে। গদখালির চাষিরা সেখানে যেতে চান না। বীজ সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় এখন আলুর হিমাগারে বেশি খরচে ফুলের বীজ রাখতে হচ্ছে।'
একইভাবে গদখালি বাজারের পাশে এক কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসেম্বল সেন্টারটিও বছরের পর বছর পড়ে আছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কেউ যায় না সেখানে।
স্থানীয় ফুল উৎপাদক সমবায়ের সভাপতি আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, 'প্রথমে জায়গার মালিকানা সমস্যা ছিল, পরে তা মিটলেও গদখালির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রভাবশালীরা মার্কেটটি চালু হতে দিচ্ছে না।'
অন্যদিকে যশোর শহরের চাঁচড়া এলাকায় ৮০ শতক জমিতে ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত 'মাছের পোনা বিক্রয়কেন্দ্র' ২০১৯ সালেই নির্মাণ শেষে মৎস্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুই তলার এই ভবনে কার্পজাতীয় ও দেশি প্রজাতির মাছের পোনা বিক্রির জন্য যথাযথ অবকাঠামো থাকলেও বিক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
বিক্রেতারা জানান, রাস্তার পাশের বাবলাতলায় পোনা বিক্রি করতে খরচ হয় না। কিন্তু বিক্রয়কেন্দ্রে বসতে হলে অফেরতযোগ্য ২৫ হাজার টাকা জামানত ও মাসে কমপক্ষে এক হাজার টাকা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দিতে হয়। ফলে এতে কেউ আগ্রহী হচ্ছেন না।
জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, 'আমরা বাবলাতলায় মার্কেট নির্মাণের দাবি জানালেও তৎকালীন মৎস্য কর্মকর্তা সেটি উপেক্ষা করে চাঁচড়ায় নির্মাণ করেন। ফলে প্রয়োজনীয় পানি ও জায়গার অভাব রয়েছে।'
জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম জানান, চাষিদের মতামতের ভিত্তিতে সমস্যাগুলো সমাধান করে এসব মার্কেট দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।