সেনাবাহিনী-পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এবার স্বস্তির যাত্রা ঘরমুখো মানুষের

শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০টা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর এলাকা। সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
অন্যান্য দিনের তুলনায় মহাসড়কের ব্যস্ততম এই পয়েন্টটির চিত্র এদিন একেবারেই ব্যতিক্রম। স্বাভাবিক সময়েই যখন এই পয়েন্টে থাকে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ, সেখানে ঈদের সময় সড়কে সৃষ্ট বাড়তি যানবাহনের চাপের মধ্যেও তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্ট।
নবীনগর বাস টার্মিনালের যাত্রী ছাউনিতে সপরিবারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুর রশিদ।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'সাভারের রেডিও কলোনি এলাকা থেকে এসেছি। পথে কোথাও জ্যাম পাইনি। জ্যাম হতে পারে ভেবে কিছুটা সময় নিয়েই বের হয়েছিলাম। কিন্তু সড়কের কোথাও জ্যাম পাইনি, এখানেও (নবীনগর) কোনো জ্যাম নেই। এখন বাকি পথটা কেমন হবে সেটিই দেখার বিষয়।'
পল্লি বিদ্যুৎ এলাকায় রাজধানী পরিবহনের এক বাসচালকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সার্ভিস লেন ছাড়া কোথাও তেমন জ্যাম নেই। তবে নবীনগর থেকে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেয়নি, র্যাব অফিসের সামনে থেকে ঘুরে আসতে হয়েছে। তবে ঘুরে আসতে হলেও এটাই ভালো হয়েছে, বড় আকারে জ্যাম হচ্ছে না।
অন্যান্য দিন সরাসরি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনগুলো নবীনগর থেকে আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে প্রবেশ করতে পারলেও এদিন ঢাকা থেকে আগত চন্দ্রামুখী বা উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনগুলোকে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল কেন্দ্র সংলগ্ন ইউলুপ ঘুরে যেতে হয়েছে।
একইভাবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচার দিক থেকে ঢাকামুখী যানবাহনগুলোকেও ঘুরে আসতে আসতে হয়েছে নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের ডিওএইচএস সংলগ্ন ইউলুপ দিয়ে।
ঈদের সময় বাড়তি চাপ সামলে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ঘরমুখো মানুষের যাত্রাকে সহজ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সড়ক ব্যবস্থাপনায় নেওয়া নানা উদ্যোগের মধ্যে এটি ছিল একটি।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিনুর কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সড়কে যানজট, যানবাহনের ধীরগতি ও মানুষের ভোগান্তির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো সড়কে এলোমেলো গাড়ি পার্কিং ও দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহন। এবার আমরা সেটি হতে দেইনি। এছাড়াও নবীনগর এবং বাইপাইল এলাকায় চতুর্মুখী চাপ সামলাতে ইউটার্ন বন্ধ করে যানবাহনগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে একটি নির্দিষ্ট পথে পরিচালনার কারণে এই পয়েন্টগুলো স্বাভাবিক ছিল।
তিনি জানান, সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় আমিনবাজার থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। নবীনগর ও বাইপাইল এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল
এদিকে আগস্ট পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু ঘটনায় এবার রমজানে বিশেষ করে ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার বাসিন্দাদের মনে এক ধরনের সংশয় কাজ করলেও এবার ঈদের আগে এই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গত কয়েকদিন সাভারের বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, মলগুলোর সামনে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল কার্যক্রমও ছিল উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন মলের ভেতরেও ছিল তাদের উপস্থিতি। ফলস্বরূপ, কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই সাধারণ মানুষ মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করতে পেরেছেন।
অন্যান্য বছর ঈদের আগে সড়ক এবং শপিং মলগুলোতে পুলিশের টহল এবং অবস্থান জোরদার করা হলেও এবছর পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও সক্রিয় ছিল।
পুলিশ কর্মকর্তা শাহিনুর কবির বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত টহল ও নজরদারির পাশাপাশি সম্প্রতি কয়েকটি অপরাধী চক্র, যারা মূলত এই এলাকায় আগেও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল, বিভিন্ন অভিযানে ধরা পড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল। সব মিলিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে এবারের ঈদযাত্রা এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক ছিল।'