ঈদের আগে বিলাসবহুল বাসের ভাড়া ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে

রংপুরের বিজনেস ক্লাস বাসের টিকেট কাটতে ঢাকার এসআর পরিবহনের কাউন্টারে গিয়েছিলেন সাইদুর রহমান। কিন্তু, দাম শুনেই হন স্তম্ভিত। প্রতিটি টিকেটের দাম বেড়ে হয়েছে ২,৪০০ টাকা।
সাইদুর বলেন, 'আগে (রংপুরের) বিজনেস ক্লাস টিকেটের দাম ছিল ১,৫০০ টাকা। এখন ২৫ তারিখের টিকেটের জন্য সেটার দাম ২,৪০০ টাকা চাইছে।'
'আমি অন্যান্য পরিবহনের কাউন্টারও ঘুরে দেখছি, যদি কোথাও কম দামে টিকেট পাই– তাহলে কিনব এইজন্য। কোথাও না পেলে বেশি দাম দিয়েই টিকেট নিতে হবে, উপায় নাই,' তিনি যোগ করেন।
বাস ভাড়া কেবল এসআর পরিবহনেই বাড়েনি। সাধারণ এসি, বিজনেস ক্লাস, স্লিপার বাসসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির পরিচালিত বিলাসবহুল বাসগুলোর প্রায় সব সেগমেন্টে ভাড়া ৪০০-১,৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে নন-এসি বাসের ভাড়া রয়েছে অপরিবর্তিত।
ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে এসআর পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. আমিন নবী বলেন, ঈদের আগে আমরা লাক্সারি বাসের ভাড়া বাড়াইছি। কিন্তু, নন-এসি বাসের ভাড়া আগের মতোই নিতেছি।
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'রুটভেদে ভাড়া ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা বাড়াইছি আমরা। এটা করা লাগত, কারণ গন্তব্যে যাত্রী পৌঁছে দিয়ে ঢাকাফিরতি বাস এসময়টায় খালি আসে। লাক্সারি বাস পরিচালনা করতে ধরেন তেলসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনার খরচও বেশি, তাই ভাড়া কিছুটা বাড়ানো ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না। পরিবহন মালিক সমিতির গাইডলাইনের সাথে এ সিদ্ধান্ত সামঞ্জস্য রেখেই নেয়া।'
আমিন নবী আরও বলেন, 'আমরা এই রুটে সবচেয়ে লাক্সারি বাসে যাত্রীসেবা দেই, যেগুলোর একেকটার দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা। এজন্য আমাদের টিকেটের দামও এত বেশি। ছোট ছোট পরিবহন কোম্পানিগুলো লো-কোয়ালিটির এসি বাসে যাত্রীসেবা দেয়, এজন্য তারা ভাড়াও কম রাখতে পারে।'
বিলাসবহুল বাস পরিচালনাকারী অন্যান্য পরিবহন কোম্পানিগুলোর স্টাফরাও একই ধরনের কথা বলেছেন।
দেশ ট্র্যাভেলের কাউন্টার মো. ম্যানেজার তৌহিদ বলেন, 'আমরা উচ্চমানের হুন্দাই বাস ব্যবহার করি, যে কারণে আমাদের টিকিটের দাম বাড়াতে হয়েছে। আমরা আমাদের বিলাসবহুল সেগমেন্টের সব রুটের ভাড়া মাত্র ৪০০ টাকা বাড়িয়েছি।'
'বড় পরিবহন কোম্পানিগুলো টিকেটের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ায়নি, কারণ যাত্রীদের প্রতিও তাদের একটা কমিটমেন্ট আছে। তবে কিছু নতুন ও ছোটখানি পরিবহন কোম্পানি যাদের মাত্র ৫ থেকে ১০টি বাস আছে— তারাই অনেক চড়া ভাড়া নিচ্ছে' - তিনি যোগ করেন।
তুলনামূলক স্বল্প পরিচিত পরিবহন কোম্পানিগুলোর কাউন্টার ঘুরে এই দাবির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যেমন রংপুর রুটে বাস পরিচালনা কররা রঙধনু পরিবহন টিকেট প্রতি ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। বর্তমানে তাদের এসি ইকোনমি ক্লাসের টিকেটের দাম ১,১০০ টাকা, বিজনেস ক্লাসে যা ১,২০০ টাকা এবং স্লিপার কোচের ভাড়া ১,৬০০ টাকা। কিন্তু, ২৫ মার্চ থেকে এই ভাড়াই যথাক্রমে দুই হাজার, আড়াই হাজার ও তিন হাজার টাকা করে নেয়া হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে, রঙধনু পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে নন-এসি বাসের ভাড়া না বাড়লেও – যাত্রীরা রুটের যেখানেই নামুক না কেন – পরিবহন কোম্পানিগুলো তাদের থেকে পুরো রুটের ভাড়াই নেবে একই তারিখ থেকে।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'রুটভিত্তিতে আমাদের লাক্সারি বাসের ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলেও— নন-এসি বাসের ভাড়া সরকারি রেট অনুযায়ী অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে ২৫ মার্চ থেকে শেষ স্টপেজের আগে নামলেও যাত্রীদের পুরো রুটের টিকেটের যে দাম হয়, সেটা দিতে হবে।'
এদিকে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতি বিলাসবহুল বাসের ভাড়া নিয়ন্ত্রণে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করলেও এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, 'বিলাসবহুল বাসের ভাড়া আমাদের সমিতি বা সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না। বাসের মান ও প্রদত্ত সেবার ভিত্তিতে এটা বাস মালিকরা নির্ধারণ করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'বিলাসবহুল বাসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বেশিরভাগ যাত্রীও এতে যাতায়াত করেন না। তাই আমরা এই সেগমেন্টের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি না। কিন্তু, সব ধরনের যাত্রীদের ব্যবহার করা নন-এসি বা সাধারণ বাসে যেন কোনো কোম্পানিই চড়া ভাড়া আদায় না করে— আমরা সেটি নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে আছি। আমরা এটা ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করব।'