রোহিঙ্গা শিবিরে অতি-তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ২৭ শতাংশ বেড়েছে

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে— অতি তীব্র অপুষ্টির কারণে এখন জরুরি চিকিৎসা সহায়তারও প্রয়োজন দেখা দিয়েছ, এমন শিশুর সংখ্যা ২৭ শতাংশ বেড়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে হয়েছে এই বৃদ্ধি। পরিস্থিতির অবনতির ফলে আরও শিশুরা প্রাণসংশয়ের ঝুঁকি তৈরি করে এমন অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)।
কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এসব ক্যাম্পে থাকা অনেক পরিবার ব্যাপক মাত্রায় অপুষ্টির শিকার। ফলে শরণার্থী শিবিরগুলোর ১৫ শতাংশ শিশুই এখন অপুষ্টিতে ভুগছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দমনপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়ার পরে— অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর হার আগে কখনোই এতটা বাড়নি।
জরুরি এই অবস্থায়, ইউনিসেফ গত বছর পাঁচ বছরের কম বয়সের ১২ হাজার শিশুকে প্রাণরক্ষাকারী চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে, এই শিশুরা অতি-তীব্র অপুষ্টির শিকার হয়েছিল। দরকারি পুষ্টির এ ধরনের অভাবে ছোট শিশুরা ব্যাপকভাবে ওজন হারিয়ে রুগ্ন হয়ে যায়। তখন নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে তাঁদের। চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া ৯২ শতাংশ শিশুর স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার করা সম্ভবও হয়। তবে ইউনিসেফ বলছে, জরুরি ও অব্যাহতভাবে খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ছাড়া এটি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
সংস্থাটির মতে, এই সংকট বর্তমানে আরও গভীর রূপ নিয়েছে। এবছরের জানুয়ারিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অতি-তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্তের ঘটনা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও বেড়ে ২৭ শতাংশ হয়েছে। ক্রমবর্ধমান এই প্রবণতা বিপজ্জনক।
এর কারণ হিসেবে বেশ কিছু অনুঘটকের কথাও উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ। যেমন ২০২৪ সালে মৌসুমি বৃষ্টিপাত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ফলে বন্যার প্রকোপ বাড়ে। এতে শরণার্থী শিবিরে ডায়রিয়া ও কলেরার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আগের দুই বছরে খাদ্য রেশন কমানোর সঙ্গে এটি যুক্ত হয়ে শিশু স্বাস্থ্যের অবনতিতে ভূমিকা রাখে। খাদ্যের নিম্ন মান অবস্থার আরও অবনতি করেছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে (মিয়ানমারে) সহিংতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সংখ্যাও বেড়েছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিদি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, 'আপাতত আমরা রোহিঙ্গা মায়ের যেসব সেবা নিতে আসছেন, তাদের রুগ্ন শিশুদের যেসব সেবা দরকার– সেগুলো দিচ্ছি। কিন্তু, চাহিদা বাড়লেও— তহবিল কমছে। এই অবস্থায়, খাদ্য রেশন আরও কমানো হলে, এবং জীবনরক্ষাকারী পুষ্টিভিত্তিক চিকিৎসা বন্ধ হলে— তাঁদের শিশু সন্তানদের কী হবে, এনিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে পরিবারগুলো'।
চলতি বছরের শুরুতে ইউনিসেফ এক প্রক্ষেপণে জানায়, এবছর রোহিঙ্গা শিবিরের ১৪ হাজার ২০০ শিশু অতি-তীব্র অপুষ্টির শিকার হতে পারে।
ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য বরাদ্দ কমা, শিশু খাদ্যের দুর্বল মান এবং নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্য সেবার মতো অনুঘটকগুলোর কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
ইউনিসেফ বলছে, এ ধরনের অপুষ্টির শিকার বাচ্চাদের মৃত্যুঝুঁকি ১১ গুণ বেশি থাকে।