বনানী সড়কের অবরোধ তুলে নিলেন পোশাকশ্রমিকরা, যান চলাচল স্বাভাবিক

প্রায় ৫ ঘণ্টা পর বনানীর রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বেলা দেড়টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক ছাড়লে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান ট্রাফিক জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জিয়া রহমান জিকো।
তিনি জানান, "নারী পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তার সহকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে একটি কফিন মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করলে বেলা দেড়টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেন।"
এর আগে, আজ (১০ মার্চ) সকালে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির ইউটার্ন ইনকামিংয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা।
এ দুর্ঘটনার জেরে পোশাকশ্রমিকরা সড়কের ইনকামিং এবং আউটগোয়িং উভয় দিকের রাস্তাই বন্ধ করে দেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে রাখেন তারা। এতে বনানী ও এর আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
গুলশান ট্রাফিক জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জিয়া রহমান জিকো বলেন, "চেয়ারম্যানবাড়ি ক্রসিংয়ে রাস্তা পারাপারের সময় একজন গার্মেন্টস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে কোন পরিবহন দ্বারা দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।"
নিহত পোশাকশ্রমিকের নাম মিনারা আক্তার (১৯)। আহত আরেক পোশাকশ্রমিকের নাম সুমাইয়া আক্তার। আহত সুমাইয়াকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল সরকার বলেন, "যানজট সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।"
খিলক্ষেত থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত রাস্তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে বলে জানান আরেক ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বনানী, মহাখালী এবং গুলশান এলাকায় তীব্র যানজটের কারণে সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মহাখালী ও বনানীতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
তবে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট কমতে শুরু করে।
এদিকে, সড়কের এ অবস্থায় বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
এক যাত্রী বলেন, "আমি সকাল সাড়ে ৮টায় বনানী ডিওএইচএস থেকে ইস্কাটনে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম, কিন্তু বনানী এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশপথে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে আটকে থাকি। যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল, কোনো যানবাহন নড়ছিল না; এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশপথও বন্ধ ছিল।"
বেসরকারি চাকরিজীবী আবু সাদাত মো. সায়েম জানান, "ধানমন্ডি থেকে কর্মস্থল গুলশানে পৌঁছাতে আমার প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে, সাধারণত ৩০ মিনিটের মতো লাগে। এই গরমের মধ্যে রোজা রেখেই রাস্তায় আটকে থাকতে হলো। এটা আমার জন্য খুবই ক্লান্তিকর এবং হতাশাজনক অভিজ্ঞতা ছিল।"

আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী শাহজামান সুমন বলেন, "সকাল পৌনে ৯টায় রামপুরা, হাতিরঝিল থেকে কর্মস্থল গুলশান-১ এর উদ্দেশ্যে বের হই। রাস্তায় বের হয়েই দেখি চারিদিকে জ্যাম। সব যানবাহন থেমে আছে। অবশেষে ১০টা ১০ মিনিটে অফিসে পৌঁছাই।"
"সাধারণত, আমি উবার বাইক নিয়ে অফিসে যাই, অন্যান্য দিন ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে; ভাড়া লাগে ৭০-৮০ টাকা। কিন্তু আজ উবার বাইকে ভাড়া এসেছে ১৫০ টাকা। হাতিরঝিল-মহানগর ব্রিজ পার হতেই সময় লেগেছে ৪৫ মিনিটের বেশি," বলেন তিনি।
এদিকে গুলশানের ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানানো হয়, যান চলাচল সচল রাখতে বনানী-কাকলী ক্রসিং এবং মহাখালীর আমতলীতে ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। গুলশান-২, গুলশান-১ হয়ে আমতলী দিয়ে ইনকামিং এবং একইপথে আউটগোয়িং চলাচল করা যাচ্ছে।