ঢাবি শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগে আটক ব্যক্তির মুক্তির দাবিতে তৌহিদি জনতার শাহবাগ থানা ঘেরাও

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগে গতকাল দুপুরে আটক হওয়া এক ব্যক্তির মুক্তির দাবিতে নিজেদের 'তৌহিদি জনতা' পরিচয় দেওয়া একদল বিক্ষুব্ধ জনতা শাহবাগ থানার প্রবেশপথ ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তারা শাহবাগ থানা এলাকায় অবস্থান করেছে।
বেশিরভাগ তরুণদের নিয়ে গঠিত এই বিক্ষুব্ধ জনতা আজ (৬ মার্চ) রাত ১টার দিকে থানার সামনে জড়ো হয় এবং আধা ঘণ্টা পর থানার ভেতরে ঢুকে পড়ে।
তাদের কয়েকজন শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষের ভেতর থেকে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে।
আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে 'বৈষম্যবিরোধী কারামুক্তি আন্দোলন'-এর যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন, একাধিকবার ফেসবুকে লাইভে যান।
একটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি আটক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। আটক ওই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের একজন চুক্তিভিত্তিক বাইন্ডার হিসেবে কর্মরত।
দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিক্ষুব্ধ জনতা সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে।
একপর্যায়ে দায়িত্বরত অফিসার এসআই একরামুল ইসলাম জনতাকে জানান, কাউকে আটক বা মুক্তির বিষয়ে তার কোনো আইনি ক্ষমতা নেই।
দায়িত্বরত কর্মকর্তা বারবার জনতাকে 'মব' তৈরি না করার অনুরোধ জানান। এর জবাবে জনতা বলে, 'আমরা কোনো মব তৈরি করিনি। আমাদের এক সহযোদ্ধাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার প্রতি সংহতি জানাতেই আমরা এসেছি।'
আলতাফ হোসেন তার এক ফেসবুক লাইভে বারবার বলেন, 'আমি এখানে [থানায়] আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জানাতেই এসেছি।'
শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা একরামুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, রাত ২টা ১৫ মিনিটের পর জনতা থানা থেকে বেরিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেয়।
আটককৃত ব্যক্তি
আটক ব্যক্তির নাম মোস্তফা আসিফ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের একজন চুক্তিভিত্তিক সহকারী বাইন্ডার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল সন্ধ্যায় আসিফকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এক নারী শিক্ষার্থীকে 'ওড়না ঠিকভাবে না পরা' নিয়ে কটূক্তি করেন, যা তিনি পরে স্বীকারও করেন।
এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন এবং পরে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর বলেন, 'ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে। শিক্ষার্থীটি এই বিষয়ে প্রক্টর কার্যালয় ও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীটি তার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
প্রক্টর বলেন, 'ওই ব্যক্তি শিক্ষার্থীকে হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করেছে। এরপর তাকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয় এবং গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়।'
এর আগে ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি পোস্টে হয়রানির ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করেন।
তিনি পোস্টে এক ব্যক্তির ছবি শেয়ার করে লেখেন, 'আজ শাহবাগ থেকে ফেরার পথে এই ব্যক্তি আমাকে হয়রানি করেছে। সে হঠাৎ রাস্তার মধ্যে আমাকে থামিয়ে বলে আমার পোশাক ঠিক নেই,আমি পর্দা করিনি এবং তার আচরণ ছিল খুবই আগ্রাসী।'
ওই শিক্ষার্থী লেখেন, তিনি ভেবেছিলেন ওই ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই তার বিভাগ ও হল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ক্যাম্পাসের কেউ নন।
তিনি আরও জানান, তিনি সালোয়ার-কামিজ ও মাথায় ওড়না পরনে ছিলেন। তিনি যখন বিষয়টি প্রক্টরকে জানানোর হুমকি দেন, তখন ওই ব্যক্তি সেখান থেকে পালিয়ে যান।
শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক প্রশান্ত জানিয়েছেন, আটক মোস্তফা আসিফকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাতের জনতা সকালে থানা ছেড়ে চলে গেছেন।