বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না: হেফাজত আমির বাবুনগরী

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেয়া হবেনা।'
আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর বারিধারায় হেফাজতের আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যেও তিনি এই মন্তব্য করেন।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, 'সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করছি। অতীতে দেখা গেছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা 'মানবাধিকারের' নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করেছে। এসব হস্তক্ষেপ জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থী। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেয়া হবেনা।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যার সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় কাঠামো ইসলামী মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই দেশের সংস্কৃতি, পরিবারব্যবস্থা ও নৈতিক রীতিনীতিকে অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের ধর্মীয় ও নাগরিক দায়িত্ব।'
মানবাধিকারের নামে পশ্চিমা সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার বিরোধিতা করে বাবুনগরী আরও বলেন, 'আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নারী ও পুরুষ—দুই স্বতন্ত্র পরিচয়ে সৃষ্টি করেছেন। ইসলাম একমাত্র বৈধ বিবাহের পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে—পুরুষ ও নারীর মধ্যে। নারীর সঙ্গে নারীর বা পুরুষের সঙ্গে পুরুষের তথাকথিত সমকামিতা ইসলাম ও প্রকৃতির পরিপন্থী। এসব বিকৃত ধারণা সমাজে অবাধ যৌনাচার, পারিবারিক অবক্ষয় ও নৈতিক ধ্বংস ডেকে আনে।'
আলোচনা সভায় হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, 'প্রকৃত মানবাধিকার মানে হলো—প্রত্যেক মানুষকে তার প্রকৃতি ও ধর্ম অনুযায়ী সম্মান দেওয়া। মানবাধিকারের নামে ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোয় বিদেশি সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ঈমানদার জনতা কখনো মেনে নেবে না।'
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, 'জাতীয় স্বার্থ, সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার স্বার্থে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন এবং বিদেশি দূত নিযুক্তির চুক্তি বাতিল করতে হবে।'
জমিয়তুল উলামা বাংলাদেশ ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'বাংলাদেশের ঈমানদার তাওহীদি জনতা দেশের স্বাধীনতা, ইসলামি মূল্যবোধ ও সামাজিক নৈতিকতার বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে আমরা কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হব ইনশাআল্লাহ।'
তিনি বলেন, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত, বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন—যেখানে কোনো বিদেশি আধিপত্য থাকবে না, থাকবে না রাজনৈতিক নিপীড়ন। শহীদদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের হাতে, তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা উচিত। ব্যর্থ হলে তাদের জনতার আদালতে জবাবদিহি করতে হবে।'
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতের ঢাকা মহানগর সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, "এখনো কিছু গোষ্ঠী দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের প্রতিহত করতে জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যারা অভ্যন্তর থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করবে ও শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাবে, জনতার ঐক্য তাদের প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ।"
'শাপলা ও চব্বিশের ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে' শহীদদের মাগফিরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতা চেয়ে এই আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টায় রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া, বারিধারার মিলনায়তনে এই মাহফিলের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগর শাখা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল হামিদ পীরসাহেব মধুপুর, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মুফতি আজহারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি বশিরুল্লাহ, সহকারী মুফতি জাবের কাসেমী, মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, মুফতি কামাল উদ্দিন, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সালাহ উদ্দিন এবং দফতর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ।