জবাবদিহিতার বাইরেও ক্ষত নিরাময়, সত্য বলা ও সংস্কারে জোর দিতে হবে: ফলকার তুর্ক

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জেনেভায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন বিষয়ক জাতিসংঘের মানবাধিকার তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন।
বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় জেনেভা থেকে জাতিসংঘের ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় তুর্ক গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ও তাদের পরিবার, চিকিৎসা প্রদানকারী এবং এই বিপ্লবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ ও সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় তুর্ক বলেন, মূল বিষয়টি হলো বিক্ষোভ দমাতে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং তৎক্ষালীন শাসকদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে সুসংগঠিত ও পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিলেন, সেটি বিশ্বাস করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। এটি ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা জেনেছি যে বিক্ষোভ দমনের বিষয়টি সাবেক রাজনৈতিক নেতারা জানতেন এবং এতে তার সমন্বয় ও নির্দেশনা ছিল।
জাতিসংঘের হাইকমিশনার আরও বলেন, (গত বছরের) নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরের সময় একটি হাসপাতালে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমি দেখেছি কত মানুষ, বিশেষ করে ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছে তরুণ ও শিশুরা।
জবাবদিহি নিশ্চিতের বাইরেও ক্ষত নিরাময়, সত্য বলা, পুনর্মিলন, জুলাই-আগস্ট স্মরণ ও সংস্কারের মতো বিষয়গুলোতে জোর দিতে বলেন তুর্ক। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের জন্য অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি বড় সুযোগ এসেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তুর্ক বলেন, 'ধর্মীয় বা জাতিগত নিজেদের মধ্যে যে মতানৈক্যই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ একটি দেশ, সবারই নাগরিকত্ব বাংলাদেশি, আমার মনে হয়, সংস্কারচেষ্টার মাধ্যমে এখন এ চেষ্টাই চলছে। ফলে আমাদের সবাইকে সংস্কার কার্যক্রমকে সহযোগিতা করতে হবে।'
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।
এর আগে গত সোমবার তুর্ক আশা প্রকাশ করেছিলেন যে তাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন বাংলাদেশের প্রকৃত ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরায় এটি জবাবদিহি, ক্ষতিপূরণ এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও সংস্কারকে সমর্থন করবে।
জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে একটি বিশ্বব্যাপী আপডেট উপস্থাপনকালে তিনি বলেছিলেন, 'ফৌজদারি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার তদন্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
তুর্ক বলেছিলেন, গত বছর বাংলাদেশ সহিংসতায় এক ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। তৎকালীন সরকার ছাত্র আন্দোলনকে 'নৃশংসভাবে দমনে' মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
তিনি আরো বলেছিলেন, দেশ এখন একটি নতুন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে তাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন এক্ষেত্রে 'গুরুত্বপূর্ণ অবদান' রাখবে।