জানুয়ারিতে পলিসি রেট কমানো সম্ভব হতে পারে: আইএমএফকে জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক
 
আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে পলিসি রেটে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ ওই সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি আরও কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পঞ্চম রিভিউ মিশনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক বৈঠকে এই তথ্য জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "আমরা আইএমএফকে জানিয়েছি, আগামী জানুয়ারিতে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় পলিসি রেটে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে।"
ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও দুইজন ডেপুটি গভর্নর ও বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইএমএফ দলের নেতৃত্ব দেন ক্রিস পাপাজর্জিউ।
বৈঠকে আইএমএফ জানতে চায়, ব্যাংকগুলোকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দিতে ব্যবহৃত পলিসি রেট কখন কমাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলেই পলিসি রেট কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট ১০ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদের হার ১৩ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, "আইএমএফ জানতে চেয়েছিল আমরা কবে পলিসি রেট কমানোর পরিকল্পনা করছি। আমরা জানিয়েছি, মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যেই কিছুটা কমেছে এবং জানুয়ারির বোরো মৌসুমে ধান উঠলে তা আরও কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।"
ডলার ক্রয় নিয়ে উদ্বেগ
গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্রয় করেছে, যা নিয়ে আইএমএফ প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিচালক টিবিএসকে বলেন, "আইএমএফ বলেছে, একদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ পলিসি রেট ধরে রাখছে, অন্যদিকে ডলার কিনে বাজারে তারল্য ছাড়ছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা জানিয়েছি, ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত ডলার জমা হচ্ছিল, ফলে রেট পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। এ কারণেই হস্তক্ষেপ করে ডলার কেনা হয়। তবে এখন আর কেনা হচ্ছে না।"
ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি
দেশে খেলাপি ঋণ (এনপিএল) বেড়ে যাওয়ার কারণও জানতে চেয়েছে আইএমএফ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঋণের গুণগত মান না কমে বরং আগের চেয়ে স্বচ্ছতা বাড়ার কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, "আগে অনেক মন্দ ঋণ প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হতো না। এখন সেগুলোও প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে।"
গোপন থাকা খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশের বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে আইএমএফ।
বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা, ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি, পুনর্মূলধন উদ্যোগ, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও প্রভিশন ঘাটতি কমানোর পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে। পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়ন, টেকসই বিনিয়োগ এবং সবুজ অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা সম্পর্কেও জানতে চায় তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, "আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন একটি নিয়মিত সফর। তারা ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে অগ্রগতি যাচাই করছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, তারল্য সহায়তা, রিজার্ভের ব্যবহার এবং খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগগুলো পর্যবেক্ষণ করছে।"
এর আগে বুধবার আইএমএফ দল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে সন্তোষ প্রকাশ করে। তবে রাজস্ব আহরণের ঘাটতির কারণে দেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত নিয়ে তারা অসন্তুষ্টি জানায়।

 
             
 
 
 
 
