দেশের পুঁজিবাজারে কেন এই বড় আইপিও খরা?
চলতি বছরের মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি কয়েকটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে (এমএনসি) থাকা সরকারি শেয়ার অফলোড ও দেশিয় বড় বড় কোম্পানিকে তালিকাভুক্তি করা এবং বড় বড় কোম্পানি যাতে ব্যাংকঋণ নেওয়ার বদলে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
তবে এসব নির্দেশনার পরও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
একটি বড় বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী (সিইও) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্টক মার্কেটের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদ থেকে আসে। খোলাখুলি বললে, এখন এমন কোনো পরিকল্পনা নেই; আমরা এর কোনো প্রয়োজনই দেখছি না।"
১৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে (এসওই) বাজারে নিয়ে আসার ব্যাপারে সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাও স্থবির হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ যেহেতু এগিয়ে আসছে, তাই এক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
২০২৪ সালের ৭ মার্চ টেকনো ড্রাগস কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও'র মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর গত ১৭ মাসে একটি কোম্পানিও আইপিও'র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনে অনুমতি পায়নি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএসইসির দায়িত্ব নেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজার সংস্কারের কথা বলে আগের প্রায় এক ডজন কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করা হয়।
এসব আইপিও আবেদন বাতিল করায় নতুন কোনো আইপিও জমাও দেয়নি মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। এতে আইপিও পাইপলাইন শূন্য হয়ে যাওয়ায় নতুন কোনো কোম্পানিকে মূলধন উত্তোলনের অনুমোদনও দিতে পারেনি সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের অচলাবস্থা নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন।
২০০৭ সালের গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২৬টি কোম্পানি আইপিও'র মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন করে। পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের তথ্যানুযায়ী, বিগত ১৫ বছরে গড়ে অন্তত ১০টি কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেত্বত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত ১৪ মাসের বেশি সময়ে নতুন কোনো কোম্পানির আইপিও'র মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনের অনুমোদন দিতে পারেনি নতুন কমিশন।
ফলে দেড় বছর ধরে আইপিও'র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন একদম বন্ধ, যার কারণে নতুন শেয়ারের যোগান শূন্য।
আইপিওর ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বিএসইসির স্থগিত সংস্কার এজেন্ডা, বিশেষ করে পাবলিক ইস্যু রুলসের সংশোধনে দীর্ঘ বিলম্বকে এই অচলাবস্থার জন্য দায়ী করেন।
জ্যেষ্ঠ এক ব্যাংকার বলেন, "নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কার ও স্বচ্ছতার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে বাজার যেন স্থবির হয়ে আছে। নতুন নিয়ম-কানুন কেমন হবে তা কেউ জানে না। আর কেউই প্রথম সেগুলোর পরীক্ষা দিতে চাইছে না।"
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা
২০২৪ সালের আগস্টে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজার সংস্কার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়াসহ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''এ বিষয়ে কাজ চলছে।" এর বাইরে তিনি কোনো কিছু বলতে চাননি।
সূত্রমতে, দেশের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) উল্লেখযোগ্য শেয়ার বা মালিকানা রয়েছে।
বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে চেষ্টা চলছে। সব কোম্পানিকে নিয়ে বৈঠকের পর আলাদা আলাদাভাবে সভাও করছি। আমরা নিজেরাও ভাবছি, কীভাবে পুঁজিবাজারে আনা যায়।"
কেমন সাড়া পাচ্ছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''মিক্সড। কেউ ভালো রেসপন্স করছে, আবার কেউ কম। আমরা চেষ্টা করছি, আশা করছি, সরকারি নির্দেশনা মেনে তারা পুঁজিবাজারে আসবে।"
বিদ্যুৎ খাতের এক কোম্পানির এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, কোম্পানিটি তালিকাভুক্তিতে মোটামুটি প্রস্তুত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে তারা পুঁজিবাজারে যেতে আগ্রহী। কিন্তু এখনো মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত কিছু জানায়নি।
আগস্ট মাসে সরকার বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠক করে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে জানানো হয় যে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগগুলোতে সরকার তার নিজস্ব শেয়ারের ৫ শতাংশ এবং বিদেশি অংশীদারদের শেয়ারের ৫ শতাংশ অফলোডের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ১৬ অক্টোবর টেক্সটাইল খাতের কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমই'র সঙ্গে বৈঠক করে ডিএসই। এর আগেও এটি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সঙ্গেও বৈঠক করেছে। ওষুধ শিল্পখাতের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাথেও বৈঠক করবে ডিএসই। তবে এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো ফলাফল চোখে পড়েনি।
আইপিও খরা: যে বিষয়গুলো কোম্পানিগুলোকে পিছিয়ে দিচ্ছে
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ডিএসইর সঙ্গে এক সভায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানির (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট রুপালী চৌধুরী ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে না আসার বেশি কিছু কারণ তুলে ধরেন। বলেন, ''আইপিও'র মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন করা অনেক সময় সাপেক্ষ। বাংলাদেশের সমতুল্য দেশেগুলোতে মূলধন উত্তোলনে ৬-৮ মাস সময় লাগলেও বাংলাদেশে ২৪ মাসের বেশি সময় লাগে।"
তিনি বলেন, ''তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিগুলোকে অনেক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করতে হয়। পাশাপাশি ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ পাওয়ায় বড় উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হন না।"
মার্চেন্ট ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরই পুঁজিবাজার সংস্কারের কথা বলে আগের প্রায় এক ডজন কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করে। কমিশন কাউকে কাউকে আবেদন প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দেয়, আবার কাউকে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত নতুন আইপিও জমা না দেওয়ার পরামর্শও দেয়। যে কারণে কেউই নতুন আবেদন জমা দেয়নি।
একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, "বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের সব স্টেকহোল্ডার চোর মনে করছে। তার সঙ্গে দেখা করা তো যায়-ই না, নতুন আইপিও আবেদন জমা দিলে অনুমোদন পাবে কি না সেই শঙ্কায় আইপিও জমা দিচ্ছি না। বিগত সময়ে কিছু কিছু আইপিওতে ভুল বা অনিয়ম হতে পারে, তাদেরে শাস্তি দেওয়া হোক, কিন্তু আইপিও অনুমোদন বন্ধ করে শেয়ারের যোগান বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বিগত সময়ে তালিকাভুক্ত হওয়া হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া বিনিয়োগের মতো ভালো শেয়ার নেই।"
তিনি বলেন, কমিশনের দিক থেকে এক অনিশ্চয়তা অন্যদিকে উদ্যোক্তারাও মূলধন উত্তোলনে আগ্রহী না। কারণ, দেশের যে অস্থির পরিস্থিতি চলছে, তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ তো দূরের কথা, যা আছে তা নিয়ে সংকটে তারা।
তিনি আরও বলেন, তারপরও কিছু উদ্যোক্তা মূলধন পেতে আগ্রহী। কমিশনের পাবলিক ইস্যু রুলস চুড়ান্ত হলে কিছু আইপিও আবেদন আসতে পারে।
বিএসইসি যা বলছে
আইপিও অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম টিবিএসকে বলেন, "আইপিও'র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনে পাবলিক ইস্যু রুলসে সংশোধন আনা হচ্ছে।"
"বিদ্যমান পাবলিক ইস্যু রুলস অনুযায়ী, উদ্যোক্তারা মূলধন উত্তোলনে আবেদন জানাতে পারত। কিন্তু কমিশনের হাতে কোনো আইপিও আবেদন না থাকায় অনুমোদন দিতে পারেনি", বলেন তিনি।
সরকারি কোম্পানি ও দেশে পরিচালিত বহুজাতিক কোম্পানিতে থাকা সরকারি শেয়ার অফলোড করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ''আগামীতে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে বলে আশা করছি।''
সরকারি ও ভালো ব্যবসা করছে এমন দেশিয় কিছু কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে চেষ্টা চলছে বলেও সম্প্রতি টিবিএসকে জানান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়্যারম্যান মমিনুল ইসলাম।
তিনি জানান, পাবলিক ইস্যু রুলসে যে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সংশোধন আনার প্রক্রিয়া চলছে। ভালো কোম্পানিকে দ্রুত ও স্বল্পসময়ে তালিকাভুক্ত করতে 'গ্রিন চ্যানেল' তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান ডিএসইর চেয়্যারমান।
রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিগত ১৫ বছরের অনিয়ম খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি এবং বাজার সংস্কারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে আইপিও'র মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের উদ্যোগ নেয় কমিশন। টাস্কফোর্স পাবলিক ইস্যু রুলসের খসড়া বিধি-বিধান কমিশনে জমা দিলেও আইনটি চুড়ান্তে স্টেকহোল্ডারদের মতামত সংগ্রহের জন্য প্রকাশ করেনি।
অর্থনীতি গতি পেলেও পুঁজিবাজারে গতি নেই
চলতি মাসে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৬ অর্থবছরে ৪.৮ শতাংশে উন্নীত হবে, যা তার আগের বছরের ৪ শতাংশের চেয়ে বেশি।
এরপর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে এটি আরও বেড়ে ৬.৩ শতাংশে পৌঁছাবে। এ থেকে স্পষ্ট যে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের অর্থনীতি গতি ফিরে পাচ্ছে। তবে পুঁজিবাজার আগাচ্ছে না। আগে যে অবস্থানে ছিল, সেখানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
'পুঁজিবাজার গতিশীল করতে নতুন নতুন আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন জরুরি'
পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ ও গতিশীল করতে নতুন নতুন আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন খুবই জরুরি বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক চেয়্যারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ''মূলধন উত্তোলন না হলে ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার ড্রাই হয়ে পড়বে। নতুন শেয়ারের যোগান না বাড়ায় পুঁজিবাজার আগাচ্ছে না। আগে যে অবস্থানে ছিল, সেখানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।"
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মার্চ পর্যন্ত বিএসইসির চেয়্যারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়কালে সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ''অনেক চেষ্টা করে ওই সময় কয়েকটি সরকারি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। কারণ, সচিবের দায়িত্ব পালনের কারণে অনেক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকলে সরকারি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা খুবই কঠিন।"
''একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া বর্তমান অনিশ্চয়তা দূর করা সম্ভব নয়। একবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে, উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মূলধন সংগ্রহ করবেন'', যোগ করেন তিনি।
২০০৭-২০০৮ সালে তালিকাভুক্ত হয় ২৬ কোম্পানি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সরকারি মালিকানাধীন— যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
এছাড়াও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে — ব্রাক বাংক, শাহজালাল ইসলামী, প্রিমিয়ার, ট্রাস্ট বাংক ও এসিআিই ফর্মুলেশন।
ওই সময়েই ৭টি বিমা কোম্পানি ও ৬টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়। এসিআই ফর্মুলেশনসহ ম্যানুফাকচারিং খাতের চারটি কোম্পানি তত্ত্বাবধা সরকারের সময় তালিকাভুক্ত হয়।
২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত হয় বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীনফোন, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালেই তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া। গ্রামীণফোন বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় মূলধনী কোম্পানি।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে মোট ১৯টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। এরপর আর কোনো সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসেনি।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে প্রায় ২০০ কোম্পানি তালিকাভুক্তি
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। পাঁচ বছর মেয়াদে তিন দফায় পূর্ণ মেয়াদ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধমে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করলেও ওই বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের বেশি সময় মেয়াদে প্রায় ২০০ কোম্পানির মূলধন উত্তোলন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব মূলধন উত্তোলনে আইনভেঙ্গে আইপিও, বিশেষ বিশেষ গ্রুপকে সুবিধা দেওয়া ও কারসাজি হলেও ব্যবস্থা না নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
