রেকর্ড কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পর চট্টগ্রাম বন্দরের লক্ষ্য এখন ৩৭ লাখ টিইইউএস

গত মাস আগস্টে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) রেকর্ড পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পর এবার বার্ষিক সক্ষমতা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৩৭ লাখ টিইইউএস বা বিশফুট একক ইউনিট কনটেইনার পরিচালনার করার লক্ষ্য নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।
আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো. জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এনসিটি আগস্টে ১ লাখ ২২ হাজার ৫১৭ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে, যা ২০২৪ সালের আগস্টের তুলনায় ২৭.৬ শতাংশ বেশি। ওই সময় টার্মিনালে ৯৬ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল।
ক্যাপ্টেন জাহিদ আরও বলেন, "গত ৭ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল) এনসিটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কার্যক্রমের দক্ষতা বেড়েছে। যার ফলে এ সাফল্য এসেছে।"
তিনি জানান, সিডিডিএল-এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর সরঞ্জাম ব্যবহার গড়ে তুলেছে এক নতুন গতি। এর ফলে গড়ে জাহাজের টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম কমেছে, বহির্নোঙরে অপেক্ষার সময় হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে বন্দরের সার্বিক কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিং আরও দ্রুত হয়েছে, যার প্রমাণ আগস্টের রেকর্ড পরিসংখ্যান।
তিনি আশাবাদী যে, এই গতি অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ৩৭ লাখ টিইইউএসে পৌঁছাবে, যা ২০২৪ সালের ৩২.৭৫ লাখ টিইইউএসের তুলনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন জাহিদ বলেন, এনসিটি দীর্ঘমেয়াদে সিডিডিএল পরিচালনা করবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নীতিনির্ধারকদের।
চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৪ সালে মোট ৩২.৭৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার পরিচালনা করেছে, যা আগের বছরের ৩০.৫০ লাখের তুলনায় ৭.৪ শতাংশ বেশি।
তবে এ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও লয়েড'স লিস্ট ওয়ান হান্ড্রেড পোর্টস ২০২৫–এর র্যাঙ্কিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এক ধাপ পিছিয়ে ৬৮তম স্থানে গেছে। কারণ, সৌদি আরবের দাম্মাম বন্দর ৩২.৯০ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডল করে ৬৭তম স্থান দখল করেছে। উল্লেখ্য, এই র্যাংকিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সেরা অবস্থানটি ছিল ২০১৯ সালে, যখন ৫৮তম স্থানে ছিল দেশের এই প্রধান বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পরিচালনা হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে, ফলে এই বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান লাইফলাইন হিসেবেও পরিচিত। ২০০৭ সালে উদ্বোধন হওয়া পাঁচ বার্থের নিউ মুরিং টার্মিনালই বন্দরের সবচেয়ে বড় কনটেইনার অবকাঠামো।
তবে অনেক বছর ধরেই চট্টগ্রাম বন্দরকে ভুগতে হয়েছে জাহাজ জট, জাহাজের বিলম্ব এবং কনটেইনার ডেলিভারির ধীরগতির কারণে। অনেক সময় জাহাজকে বাইরের নোঙরে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে, যা রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের জন্য ব্যয় বাড়িয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতা পুনরুদ্ধারে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নিউ মুরিং টার্মিনাল সিডিডিএলকে হস্তান্তর করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি জাহাজ নির্মাণ ও ডকইয়ার্ড পরিচালনায় অভিজ্ঞ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা।
কর্তৃপক্ষের আশা, নতুন ব্যবস্থাপনায় জাহাজের টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম আরও কমবে, কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে এবং চট্টগ্রাম বন্দর একটি নির্ভরযোগ্য আঞ্চলিক হাবে পরিণত হবে।