৩০ সেপ্টেম্বর চালু হচ্ছে বিডার ইউনিফাইড বিজনেস পোর্টাল; ব্যবসার সব সেবা মিলবে এক ওয়েবসাইটে

দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও সহজতর, সেবাবান্ধব ও ডিজিটালভাবে সমন্বিত করতে সরকার আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ বিজনেস পোর্টাল (বিবিপি) চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ৯ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটির চতুর্থ সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
এর আগে, ১৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গভর্নিং বোর্ডের তৃতীয় সভায় এই একীভূত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালুর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
বিডার নেতৃত্বে নেওয়া এই উদ্যোগ একটি একীভূত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যার মাধ্যমে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট সকল সেবা একটি মাত্র ল্যান্ডিং পেজে পাওয়া যাবে। পোর্টালটি চালু হলে বিনিয়োগকারীদের আর একাধিক সরকারি অফিস বা ওয়েবসাইটে যেতে হবে না।
বিডা সূত্রে জানা গেছে, এই বিবিপি প্রাথমিকভাবে একটি তথ্যকেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতে অনুমোদন ব্যবস্থা, ছাড়পত্র, লাইসেন্সসহ অন্যান্য সেবা যুক্ত করে এটিকে সম্পূর্ণরূপে 'ইন্টার-অপারেবল' (আন্তঃসংযোগযোগ্য) করা হবে।
বিনিয়োগ সমন্বয় সভায় আরও জানানো হয়, দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বন্দর সংযোগ নিশ্চিত করতে কৌশল নির্ধারণে পোর্টালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে একটি সম্মিলিত, সহজলভ্য এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে একটি নির্ধারিত বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং দল এ প্রকল্পের অগ্রগতি তদারকি করবে।
এছাড়া, সংশ্লিষ্ট সকল আইপিএ-র ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সভা করে প্রকল্পের অগ্রগতি মূল্যায়ন করবেন এবং উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন।
বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিবিপিতে কোন সেবা অন্তর্ভুক্ত হবে, তা অংশীজন সংস্থার ফোকাল পয়েন্টদের সঙ্গে আলোচনা করে চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কৌশল এবং প্রতিশ্রুত সেবা—যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ—নিশ্চিতকরণ ও কার্যকর বন্দর সংযোগ স্থাপনের বিষয়েও সুপারিশ করা হবে।
বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট সকল বিদ্যমান সেবা বিবিপির সঙ্গে একীভূত এবং আন্তঃসংযোগযোগ্য (ইন্টার-অপারেবল) করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে যে খণ্ডিত ও জটিল ডিজিটাল অভিজ্ঞতা পান, এই পোর্টাল তা প্রতিস্থাপন করে আরও সমন্বিত ও ব্যবহারবান্ধব একটি সেবা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, 'আমরা অনেকদিন ধরেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) নিয়ে কাজ করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, ডিজিটাল সেবার কথা বলা হলেও এখনও তাদের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ঘুরতে হয় এবং একাধিক ওয়েবসাইটে যেতে হয়—যা বিরক্তিকর ও অকার্যকর।'
তিনি জানান, বর্তমানে চালু থাকা বিডা, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), হাইটেক পার্ক অথরিটি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্ল্যাটফর্মগুলো (ওএসএস) বিবিপিতে একীভূত করা হবে, যাতে সব সেবা এক প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায়।
বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, 'বিনিয়োগকারীদের এখন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে সেবা খুঁজে বের করতে হয়, যা খুবই ঝামেলার।'
তিনি বলেন, 'তাই আমরা একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছি। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এখন একক বিনিয়োগ পোর্টাল রয়েছে—যেমন ভারতের ইনভেস্ট ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুরের এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামের জাতীয় ব্যবস্থা।'
বিডা সূত্রে জানা গেছে, বিবিপিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডাব্লিউ) প্ল্যাটফর্ম এবং অন্যান্য বিদ্যমান ওএসএস সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
আর তিন মাসের মধ্যে বাকি ম্যানুয়াল সেবাগুলো ডিজিটালাইজ করে এই পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।