শুল্ক কার্যকরের সময় ঘনিয়ে আসছে, এখনও তৃতীয় দফার বৈঠকের সময় দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) কার্যকর হতে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও তৃতীয় দফার দরকষাকষি বৈঠকের জন্য এখনও বাংলাদেশকে সময় দেয়নি ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)।
গতকাল (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন টিবিএসকে জানান, 'এখনও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মিটিংয়ের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করে জানায়নি। সময় নির্ধারণের পর আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।'
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও পাকিস্তানের ওপর শুল্কহার অনেক কম।
আগামী ২৬-২৭ জুলাই বৈঠকের জন্য সময় নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে গত ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি দেশটির প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানপত্র লিখিতভাবে পাঠিয়েছে ঢাকা। তারপরও মিটিংয়ের সময় নির্ধারণ করে কোনো উত্তর না আসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ইউএসটিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। ১ আগস্ট নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই বাংলাদেশকে মিটিং করতে যুক্তরাষ্ট্র সময় দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শুল্কে সুবিধা পেতে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২.২০ লাখ টন গম আমদানি করছে সরকার
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় ছাড় পাওয়ার আশায় গতকাল সরকারিভাবে দেশটি থেকে বাড়তি দামে ২.২০ লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ গমে প্রোটিনের হার কিছুটা বেশি। দামও কিছুটা বেশি পড়বে। তবে শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষিতে সহায়তা পাওয়া এবং গম আমদানির উৎস বাড়ানোর জন্য এ গম কেনা হচ্ছে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'তিন উদ্দেশ্যে এ গম কেনা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে: শুল্ক ইস্যুতে দেশটির সঙ্গে দর কষাকষিতে সহায়তা পাওয়া। একইসঙ্গে গাম আমদানির উৎস বাড়ানো এবং এ গমে প্রোটিনের হার কিছুটা বেশি।'
বৈঠকে উপস্থাপিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এসব গম কেনা হবে। প্রতি টন গম কিনতে ব্যয় হবে ৩০২.৭৫ ডলার। সে হিসাবে ২.২০ লাখ টন গম কিনতে ব্যয় হবে ৮১৭.৫৭ কোটি টাকা। প্রতি কেজি গমের দাম পড়বে ৩৭.২০ টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করবে। 'আমরা আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করব, তবে এখনই সেগুলোর নাম প্রকাশ করছি না।'
উপদেষ্টা আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি খুবই কম—প্রায় ৬.৫ থেকে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা ১ আগস্টের কিছু আগেই যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। 'তিনি ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠক করবেন; আমিও আমার নিজস্ব মাধ্যমে কথা বলছি।'
সালেহউদ্দিন বলেন, এই পর্যায়ে শুল্ক আলোচনার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করলে কোনো ইতিবাচক ফল আসবে না, কারণ সিদ্ধান্তগুলো খুব দ্রুত আসছে।
এই আলোচনায় ব্যবসায়ীদের যুক্ত করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা আলোচনার বৈঠকে প্রবেশের সুযোগ পাবেন না। তিনি আরও বলেন, 'তাদেরকে বৈঠকের বাইরে শোরগোল করতে হবে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না।'
উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 'আমি ইউএস চেম্বারের সঙ্গে কথা বলেছি; বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ধারণা বেশ ইতিবাচক।'