টানা ঈদের ছুটিতে কমতে পারে রেমিট্যান্স, ভোগান্তিতে প্রবাসীরা

ঈদের পরদিন ভাইয়ের বিয়ের খরচ পাঠানোর তাগিদে ইংল্যান্ড থেকে রেমিট্যান্স পাঠাতে চেয়েছিলেন সিয়াম (ছদ্মনাম)। তবে ঈদ উপলক্ষে টানা দশদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় অর্থ পাঠালেও তা গ্রাহক পর্যায়ে টাকা পেতে অন্তত আগামী রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে—এমন তথ্য পেয়ে বাধ্য হয়েই হুন্ডির আশ্রয় নেন তিনি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড–এর সঙ্গে আলাপে তিনি জানান, ডলারের রেট বেশি পেলেও আগে কখনো হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাননি। তবে দেশের ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকায় অন্য কোনো উপায় ছিল না তার।
শুধু সিয়াম নন, টানা ব্যাংক বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বহু প্রবাসী বাংলাদেশি। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর প্রভাব পড়বে জুন মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহে। ফলে আগামীতে ঈদ কিংবা জাতীয় ছুটির সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ সচল রাখার উপায় খুঁজছেন ব্যাংকাররা।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ছুটির মধ্যেও গ্রাহক রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন। তবে তা ব্যাংকের নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে [দেশীয় ব্যাংক কর্তৃক বিদেশের অন্য কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক লেনদেন পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত অ্যাকাউন্ট] জমা হয়। ব্যাংক বন্ধ থাকায় তা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না। ব্যাংক খুললেই সেই অর্থ বেনিফিশিয়ারির অ্যাকাউন্টে যাবে।
তিনি বলেন, ঈদের পর রেমিট্যান্স এমনিতেই কিছুটা কম থাকে। তার ওপর দীর্ঘ ছুটির কারণে এই প্রবাহ আরও কমে গেছে। অথচ ব্যাংক খোলা থাকলে এতোটা প্রভাব পড়ত না। লম্বা ছুটিতে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়ে—এটাই স্বাভাবিক। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ হুন্ডির দিকে ঝোঁকে। আমরা এখন ভাবছি, এই সময়ে কীভাবে ব্যাংকিং সার্ভিস সচল রাখা যায়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, গত ঈদুল ফিতরেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেসময় স্বাধীনতা দিবস, সাপ্তাহিক ছুটিসহ টানা ১১ দিনের মধ্যে মাত্র ২ দিন অফিস চলেছিল। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহও হঠাৎ করেই কমে যায়।
পরিসংখ্যান বলছে, সাধারণত প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। অথচ গত ৩০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল, এই সাত দিনে এসেছে মাত্র ১৫৫ মিলিয়ন ডলার—স্বাভাবিকের তুলনায় ৪৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার কম।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, চলতি জুনে ১০ দিনের ছুটিতে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স কম আসবে বলেই আশঙ্কা করছি। শুধু রেমিট্যান্স নয়, আমদানি এলসি [লেটার অব ক্রেডিট] খোলার কাজসহ স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, যেসব ব্যবসার ক্যাশ ফ্লো [অর্থ প্রবাহ] বেশি, তারা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে না পেরে হাতে নগদ রাখছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বড় অঙ্কের নগদ হাতে রাখাটা অনেকের জন্য উদ্বেগেরও বিষয়। তাই সরকারের উচিত ছিল এমন দীর্ঘ ছুটি ঘোষণা করার আগে এসব দিক বিবেচনায় নেওয়া।
মে মাসে রেমিট্যান্সের রেকর্ড
তবে মে মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে দেখা গেছে আশার আলো। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে মে মাসে। এর আগে চলতি বছরের মার্চে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ঈদুল ফিতর উপলক্ষে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৭ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার।