১৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি

চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা পাচ্ছে সরকার। আগামী জুনের মধ্যে এসব বাজেট সহায়তার ঋণ চুক্তি সই হবে। ইতোমধ্যে সংস্থা দুটি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে জানান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা।
আন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চিয়তার মধ্যে এসব বাজেট সহায়তা কার্যক্রমও এতদিন আটকে ছিল। আইএমএফর কাছে থেকে জুনে দুই কিস্তি ছাড়ের আশ্বাস পেয়ে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাজেট সহায়তা আলোচনা পুনরায় শুরু হয়েছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের কাছ থেকে সবুজ সংকেট পেয়েই বাজেট সতায়তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি শুরু করেছে ইআরডি। এর অংশ হিসেবে বুধবার (১৪ মে) 'রেজিলিয়েন্স আন্ড রিকভারি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট-২' শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৫০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়ে আলোচনা সভা ইআরডিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইআরডি, অর্থ বিভাগ এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার আলাদা দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এডিবির সঙ্গে। এর মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্মস সাবপ্রোগ্রাম-১ কর্মসূচির আওতায় ৫০ কোটি ডলার এবং ক্লাইমেট রিসপন্সিভ ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম- সাবপ্রোগ্রাম-২' শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা নিশ্চিয়তা পাওয়া গেছে।
ইআরডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলো যেকোনো ঋণ অনুমোদনের আগে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। কারণ আইএমএফ সদস্য দেশগুলার সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধলে ডায়গনোস্টিক প্রতিবেদন তৈরি করে। যেখানে সদস্য দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণের পরিস্থিতি এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ থাকে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো, কোন দেশকে ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমফের ওই ডেবট প্রতিবেদন বিবেচনায় নেয়। মূল কথা হলো আইএমএফের সম্মতি ছাড়া বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দেয় না। দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীদের ক্ষেত্রে এবিষয়ে বাধ্যবাধকতা না থাকলেও— জাপানের মতো উন্নয়ন সহযোগী এ নিয়ম অনুসরণ করে।"
এদিকে চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ১২০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে 'সেকেন্ড বাংলাদেশ গ্রিন আন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট' শীর্ষক এই বাজেট সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয় গত ডিসেম্বর।
এই মাসে স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট আন্ড গভর্ন্যান্স (সাব-প্রোগ্রাম-১)' শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এডিবির সঙ্গে ৬০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার ঋণ চুক্তি সই হয়। এছাড়া এপ্রিলে চুক্তি সই হয় ওপেক ফান্ডের সঙ্গে। তারা 'স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট আন্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রাম' শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ১০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, এপর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে আশ্বাস পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে চলতি অর্থবছরে ২৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে, যা কোনো একক অর্থবছরে সর্বোচ্চ বাজেট সহায়তা।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৫৯ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেয়েছিল উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে।
মূলত বাংলাদেশ কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে বাজেট সহায়তা নেওয়া শুরু করে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরে যা গতি পায়।
বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০৯ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫৯ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭৬ কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২০৩ কোটি বিলিয়ন ডলার বাজেটে সহায়তা পেয়েছে।