যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়াতে দ্রুত গুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত, ৩ মাস সময় চেয়ে চিঠি পাঠানোর সুপারিশ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির গতি বাড়াতে দ্রুত একটি গুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ট্রাম্প আমলের শুল্ক আরোপ কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যেই চিঠি পাঠানোর সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
রোববার (৬ এপ্রিল) বাণিজ্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এসব সুপারিশ উঠে আসে। বৈঠকে রপ্তানিকারক, অর্থনীতিবিদ, এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
বৈঠকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে সরকার দ্রুত গুদাম নির্মাণ করবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর কাছে তিন মাস সময় চেয়ে চিঠি পাঠাতে হবে, যাতে এ সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো যায়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ট্রেড বিশেষজ্ঞ ড. এম এ রাজ্জাক, অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।
আলোচনার গতি বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপের তাগিদ
ড. এম এ রাজ্জাক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির জন্য গুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত আগেই ছিল, তবে কার্যক্রম তেমন এগোয়নি। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে দ্রুত বাস্তবায়নের। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখানো যাবে যে, বাংলাদেশ আন্তরিক।'
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প আমলের শুল্ক পুনর্বহাল হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। মার্কিন বাজার বছরে ৮০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে এ আমদানি ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
ড. রাজ্জাক আরও বলেন, 'চীনের মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা কমলে তারা ইউরোপসহ অন্য বাজারে রপ্তানি বাড়াবে। এতে করে বাংলাদেশের বাজার শেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।'
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এতে করে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। সরকার দ্রুত গুদাম নির্মাণ করবে।'
যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে জোর
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, 'সরকারকে দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। দুই দিনের মধ্যে চিঠি পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের এক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ মার্কিন উপাদান থাকলে, ওই পণ্য ১০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পায়। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
শুল্ক সুবিধা নির্ধারণে এনবিআরের কৌশল
এনবিআরের কর্মকর্তারা বৈঠকে জানান, যেসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো সম্ভব এবং তাতে রাজস্ব আহরণে বড় প্রভাব পড়বে না, এমন পণ্যের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এসব পণ্যে শুল্ক হ্রাস বা শূন্য করার বিষয় বিবেচনায় রয়েছে।
তারা জানান, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে এককভাবে শুল্ক কমানো যাবে না। কারণ অন্য দেশগুলোও একই সুবিধা চাইবে। তাই এমন পণ্য চিহ্নিত করা হচ্ছে, যেগুলো শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকেই বেশি আমদানি হয়।
এ প্রসঙ্গে মাসরুর রিয়াজ বলেন, 'অনুমানে শুল্ক কমালে চলবে না। যুক্তরাষ্ট্র কী চায়, তারা কোন কোন পণ্যে শুল্ক ছাড় চায়—তা জেনে, আলোচনার মাধ্যমে এগোতে হবে। নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে শুল্ক ছাড় দিলে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করা যাবে না।'