বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি, এলএনজি সরবরাহ, ইস্টার্ন রিফাইনারি-২ স্থাপনে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র: সালেহউদ্দিন

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশে জেনারেটর ও বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এলএনজির দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি-২ স্থাপনে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সালেহউদ্দিন জানান, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিতে তিনি ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সফর করেন। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা করে, যেখানে অর্থ উপদেষ্টাও যুক্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, এই সফরে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বৈঠকের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আলোচনায় প্রধানত দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানো নিয়ে জোর দেওয়া হয়।
সালেহউদ্দিন জানান, মার্কিন ব্যবসায়ী নেতা এবং দেশটির জ্বালানি, পররাষ্ট্র, শ্রম, কৃষি ও ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মাস্টারকার্ড, ভিসা ও শেভরন নানা বিনিয়োগ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে।
তিনি আরও বলেন, ওপেক ফান্ড, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে আলোচনাও ইতিবাচক হয়েছে। সব পক্ষই সহযোগিতায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) ভবিষ্যতের প্রকল্পে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএফসি ও ওপেক ফান্ড বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, 'আইএফসির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিকার্ডো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আলোচনা পরিচালনা করেছেন। তারা লক্ষ্য করেছেন, বাংলাদেশ শুধু বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সঙ্গেই নয়, বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করছে। এটি স্পষ্ট করছে যে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আইএফসির সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত সফল একটি আলোচনা হয়েছে। তাদের ইতোমধ্যে বাংলাদেশে কিছু কার্যক্রম রয়েছে। তারা আমাদের বেসরকারি খাতের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এটি একটি বড় সুযোগ, যা বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য উপকারী হবে।'
সালেহউদ্দিন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এলএনজি আমদানি সংক্রান্ত আলোচনায় তারা দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিঙ্গাপুরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিতে পরিবহন ব্যয়সহ মোট খরচ বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ দেখিয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ নিজস্ব এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা করছে এবং এই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে পারে। পাশাপাশি ইস্টার্ন রিফাইনারির আধুনিকায়নের পরিকল্পনাতেও যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ দেখিয়েছে।
৯৫০ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা প্রতিশ্রুতি
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সফরের সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে তিনটি প্রকল্পে মোট ৯৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম বে টার্মিনালের জন্য বিশ্বব্যাংক ৬৬০ মিলিয়ন ডলার এবং 'সেফটিনেট অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের' জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এ ছাড়া, ওপেক ফান্ড বেসরকারি খাতকে সহায়তার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তহবিলটির প্রেসিডেন্ট প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন।