সিলেটের শীর্ষ পাথর আমদানিকারকের ৬০ কোটি টাকা কর ফাঁকি, দুবাইয়ে বিনিয়োগের তথ্য পেয়েছে এনবিআর

সিলেটের শীর্ষস্থানীয় পাথর ও কয়লা আমদানিকারক মেসার্স ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রায় ৬০ কোটি টাকা আয়কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল—সিআইসি।
শুধু তা-ই নয়, দুবাইয়ের ৩২-তলা একটি বিলাসবহুল ভবনে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগের তথ্যও পেয়েছে সিআইসি। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে এই বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি সিআইসির একটি গোয়েন্দা দল দুবাইয়ে গিয়ে ওই তথ্য পেয়েছেন। তারা এখন প্রতিষ্ঠানটির অর্থপাচারের পরিমাণ সন্ধানের কাজ করছেন।
এ অভিযোগে ইতিমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠান এবং এর মালিক ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ, তার ছেলে ফখরুস সালেহীন নাহিয়ান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
অবশ্য অভিযুক্তরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নাহিয়ান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের কোনো কর ফাঁকি হয়নি এবং বিদেশেও কোনো অর্থপাচার করে বিনিয়োগ করা হয়নি।'
আলোচ্য ব্যক্তিদের সিলেটে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কমিউনিকেশনসহ পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেও অভিযোগে উঠে এসেছে।
সিআইসির অভিযোগ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের একটি কপি টিবিএসের হাতে এসেছে।
এতে ফখর উদ্দিন, তার ছেলে, ভাই ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, 'এসব করদাতা নিজ নামে পাথর ও কয়লা আমদানি করে তা তাদের অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স ফাইলে ২০১৭-১৮ করবর্ষ থেকে প্রদর্শন করে আসছেন। যার মাধ্যমে সারচার্জ ও জরিমানা বাবদ প্রায় ৫১ কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।'
এছাড়া ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জমি ক্রয় ও ওই জমিতে স্পোর্টস কমপ্লেক্স থেকে ভাড়া আদায়, গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও দাবি গাড়ি ক্রয়ে প্রকৃত বিনিয়োগ গোপন করা ছাড়াও তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে গুলশানের কমার্শিয়াল স্পেস ক্রয়ে বিনিয়োগ গোপন করার মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়েছেন ৮.২৬ কোটি টাকার বেশি।
এছাড়াও তথ্য পাওয়া গেছে, ফখর উদ্দিন ও নাহিয়ান দুবাইয়ের জুমেইরাহ ভিলেজ সার্কেলে নির্মাণাধীন ৩৩ তলা বিলাসবহুল ভবন স্যাফায়ার ৩২-এ বিনিয়োগ করেছেন, যেখানে ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
তবে তাদের কর ফাইলে এই বিনিয়োগের কোনো রেকর্ড নেই। ব্যক্তি খাতের করদাতাদের একটি নির্দিষ্ট সীমার বেশি আয়ের ওপর সারচার্জ দিতে হবে।
তবে নাহিয়ান টিবিএসকে বলেন, 'যে আয়ের ওপর সারচার্জ ধরা হয়েছে, তা আমাদের পার্টনারশিপ ফার্মের, ইনডিভিজুয়ালের নয়। ফলে এর ওপর সারচার্জ হতে পারে না। এ বিষয়টি আমরা কর্মকর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি।'
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিনিয়োগের প্রকৃত তথ্য গোপনের মাধ্যমে কর ফাঁকির অভিযোগও অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'আমাদের কোনো কর ফাঁকি নেই।'
দুবাইয়ে বিনিয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'আলোচ্য প্রজেক্টটি আমাদের মিশরের এক বন্ধুর। ওই প্রজেক্টের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে দিতে পারলে আমাদেরকে ১৩ শতাংশ কমিশন দেওয়া হবে বলে তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সেখান থেকে আমাদের কোনো আয় হয়নি।'
নাম না প্রকাশের শর্তে সিআইসির একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'ওই প্রজেক্টে বিনিয়োগকারীদের তালিকায় ফখর উদ্দীন আলী আহমেদ এবং ফখরুস সালেহীন নাহিয়ানের নাম রয়েছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাস্টমস অ্যাসেসমেন্টের পার্থক্যের কারণে চাইলে পাথর আমদানিতে বৈধভাবেই অর্থপাচারের সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া বিগত সরকারের আমলে সিলেটে প্রভাব খাটিয়ে পুরো পাথর ও কয়লার ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।