জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি ৬১% বৃদ্ধি পেয়ে ১.৯১ বিলিয়ন ইউরো

চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৬০.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৯১ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালের একই সময়ে যা ছিল ১.১৯ বিলিয়ন ইউরো।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইউরোস্ট্যাটের (ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অফিস) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নিটওয়্যার রপ্তানি ৬৪.২ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি ৫৬.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিমাণের দিক থেকে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ২৭ দেশের অর্থনৈতিক জোট ইইউ অঞ্চলে বাংলাদেশের প্রস্তুতকৃত তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আলোচিত সময়ে ১২৬.৮৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম পোশাক রপ্তানি হয়েছে এই গন্তব্যে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যা ছিল ৮০.২৫ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। অর্থাৎ, এ বছর একই সময়ে পরিমাণের দিক দিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৮.১ শতাংশ।
এই প্রবৃদ্ধি ইউরোপীয় বাজারে অন্যতম প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ, ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) বাণিজ্য সুবিধা এবং উৎপাদন সক্ষমতার উন্নতির কারণে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এই প্রবৃদ্ধিকে রপ্তানিকারকদের জন্য 'উৎসাহজনক' বলে উল্লেখ করেছেন, যেহেতু এটি বাজারের ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
"সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে মূলত উৎপাদন সক্ষমতা, দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতার উন্নতির ফলে," বলেন তিনি।
মোহাম্মদ হাতেম আরও জানান, চীন থেকে অন্যান্য দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাজের অর্ডার স্থানান্তরিত হচ্ছে, আর এর অন্যতম সুবিধাভোগী হলো বাংলাদেশ।
তবে, তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধীরগতির নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এতে ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সরকারকে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ সব ধরনের ইউটিলিটি সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা, পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এসব ইউলিটির দাম সাশ্রয়ী করার ওপরেও গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিকেএমইএ সভাপতি আরও বলেন, শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারই নয়, দীর্ঘ সময় ধরে চলা ব্যবসায়িক মন্দার পর, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারও এখন উন্নতির পথে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট পোশাক আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৮.২৯ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৬.২৮ বিলিয়ন ইউরো—অর্থাৎ এখানে বৃদ্ধির পরিমাণ ৩১.৯ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় পোশাক সরবরাহকারী চীন, এবারও তার প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইইউতে দেশটির মোট পোশাক রপ্তানি ৪০.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২.৩৮ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
দেশটির নিটওয়্যার রপ্তানি ৪৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.২৩ বিলিয়ন ইউরো হয়েছে। এছাড়া, ওভেন পোশাক রপ্তানি ৩৬.৪ শতাংশ বেড়ে ১.১৪ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
চীনের পর ইইউতে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান বজায় রেখেছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তুরস্ক থেকে পোশাক আমদানি ৫.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৭৪.০৯ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ৮২৯.২১ মিলিয়ন ইউরো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে কম্বোডিয়ার পোশাক রপ্তানি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৭২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪২০.৯ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে, যা প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। নিটওয়্যার রপ্তানি ৭১.৬ শতাংশ বেড়ে ২৫৬.২ মিলিয়ন এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি ৭৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬৪.৭ মিলিয়ন ইউরো হয়েছে।
আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইইউতে ভারতের পোশাক রপ্তানি ৪৪.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯৭.৭ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
ইইউতে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৩৪.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯৮.৬ মিলিয়ন ইউরো হয়েছে, যেখানে নিটওয়্যার রপ্তানি ২৬ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি ৪০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আলোচ্য সময়ে ইইউতে পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি ৩১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪৭.৭ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
পাকিস্তানের ওভেন পোশাক রপ্তানি ৪২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৫.৬ মিলিয়ন এবং নিটওয়্যার রপ্তানি ২২.৫ শতাংশ বেড়ে ১৭২.১ মিলিয়ন ইউরো হয়েছে।