পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব, সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছাতে চায়: আনিসুজ্জামান চৌধুরী

অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশ ও সংস্থা পাচার হওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বর্তমান সরকারের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব।
আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
পাচার হওয়ার টাকা ফেরত আনা সম্ভব কি না- এমন প্রশ্নে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। যেসব স্থানে টাকা গেছে— এতে সেসব দেশ উপকারভোগী। আন্তর্জাতিক আইন আছে, যেহেতু তারা উপকারভোগী তাই সহজে তারা এটা ছাড়বে না। কিন্তু, প্রধান উপদেষ্টাকে তারাই অফার করছেন এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য। আমরা দ্রুত কাজ করছি। আশা করছি সফল হবো।"
কারা অফার করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এটা বলা সম্ভব নয়। এগুলো বললে কাজে সমস্যা হবে। কিছু তো গোপনীয়তা মানতে হবে। যারা টাকা নিয়ে গেছেন, তারা তো বসে নেই। এজন্যই একটা গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। এরমধ্যে যতটুকু বলা সম্ভব সেটুকুই বলছি। এর বেশি বললে আমাদের কাজটা বন্ধ হয়ে যাবে।"
তিনি বলেন, এখানে আইনের বিষয় আছে, যথার্থ আইন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে মিল রেখে। আপনি ধরলেই তো টাকা ফেরত আনতে পারবেন না। এখানে কতগুলো মাধ্যম আছে। এসব বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাচ্ছি বিশ্বব্যাংকসহ অনেকেই কাজ করছে।
দেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গ এবং তিনি কি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, "এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন সেক্টর অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। এটা এখন আর লুকানোর কোনো সুযোগ নেই।"
তিনি বলেন, "আমি এলডিসি গ্রাজুয়েশন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাই। ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলডিসি গ্রাজুয়েশন হচ্ছে। একটা ডেভেলপমেন্ট ন্যারেটিভ (উন্নয়নের বয়ান) দাঁড় করাতে এটা করা হয়েছে। সূচকগুলো হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু গ্রাজুয়েশনের প্রস্তুতি নেই। এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন (বৈচিত্র্যকরণ) হয়নি। এখনও ৮৫ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে তৈরি পোশাক থেকে। এটা কমে ৬০ শতাংশে এ নিয়ে আসা উচিত ছিল।"
স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার দিন ঠিক আছে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর। আনিসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আরও পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বাংলাদেশ সরকার চাইলেই তা পিছিয়ে যাবে না। সরকার তাই জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কাছে এ ব্যাপারে আবেদন করবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সাল থেকে বলা হচ্ছে এলডিসি থেকে বের হয়ে আসবো। তাহলে গত সাত বছরে কি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে কাজ করব। এছাড়া ব্যাংক খাতের উন্নয়ন, রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করব। কারণ বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ঋণ বেড়েছে আর অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে গেছে। এক পর্যায়ে ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও প্রায় ১২ শতাংশ হয়েছে। এখন ৭ শতাংশের কম। সম্পদ সংগ্রহ করা খুব সহজ না। ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ করার বিষয়ে কাজ করব।