Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
December 13, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, DECEMBER 13, 2025
দুনিয়ার মজদুর, এক হও!

ইজেল

আয়েশা হুমায়রা ওয়ারেসা
02 December, 2025, 03:10 pm
Last modified: 02 December, 2025, 03:11 pm

Related News

  • যুদ্ধ যখন পুঁজির খেলা: লেনিন ও হবসনের চোখে সাম্রাজ্যবাদ
  • কার্ল মার্ক্সের শহরে…
  • ডারউইনকে মার্ক্সের উপহার দেওয়া ‘ডাস ক্যাপিটাল’ থেকে বেরিয়ে এল ‘চমকপ্রদ তথ্য’! 
  • কার্ল মার্ক্সের ১৪০তম প্রয়াণ দিবস: মার্ক্স কি এখনও প্রাসঙ্গিক
  • সাইকেলে চড়ে সমাজতন্ত্র

দুনিয়ার মজদুর, এক হও!

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে লেখা ‘দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ শুরু হয়েছিল এক প্রসিদ্ধ বাক্য দিয়ে। প্রায় দেড় শ বছর পেরিয়ে গেলেও ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত রাজনৈতিক দলিল হিসেবে আজও টিকে আছে এই ইশতেহারটি।
আয়েশা হুমায়রা ওয়ারেসা
02 December, 2025, 03:10 pm
Last modified: 02 December, 2025, 03:11 pm

'দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো'

'ইউরোপকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এক ভূতের ভয়–কমিউনিজমের ভূত।'

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে লেখা 'দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো' শুরু হয়েছিল এই প্রসিদ্ধ বাক্য দিয়ে। প্রায় দেড় শ বছর পেরিয়ে গেলেও ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত রাজনৈতিক দলিল হিসেবে আজও টিকে আছে এই ইশতেহারটি।

এখানে 'ভূত' শব্দটি দিয়ে মূলত এক গভীর আতঙ্ককে বোঝানো হয়েছিল; সে সময় ইউরোপের জাঁকালো পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বুকে যে আতঙ্ক চেপে বসেছিল। এই হুমকির উৎস ছিল সম্পূর্ণ বিকল্প এক ব্যবস্থা–কমিউনিজম বা সাম্যবাদ। এই মতবাদের লক্ষ্যই ছিল পুঁজিবাদ হটিয়ে নতুন সমাজ গড়ে তোলা। সাম্যবাদের মূল কথা হলো, এখানে কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকবে না। মালিক বা কর্তাদের বদলে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব থাকবে শ্রমিকদের হাতে।

পরবর্তী শতাব্দীর রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিপ্লবের ভাষা পাল্টে দেওয়া এই কথাগুলো লিখেছিলেন দুই জার্মান বন্ধু–কার্ল মার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩) ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস (১৮২০-১৮৯৫)। এর মধ্যে কার্ল মার্ক্স ছিলেন একাধারে দার্শনিক, ইতিহাসবিদ ও অর্থনীতিবিদ। ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত বিপ্লবী হিসেবেও গণ্য করা হয় তাকে। তবে তাকে নিয়ে মতভেদও কম নয়। কারও দৃষ্টিতে মার্ক্স একজন মহান চিন্তাবিদ, যিনি ভবিষ্যতের আগাম চিত্র দেখতে পেতেন। আবার অনেকের চোখে কার্ল মার্ক্স একজন খলনায়কও; যিনি বিশ্ব অর্থনীতিকে ঠেলে দিয়েছেন এক বিপজ্জনক অন্ধগলিতে।

১৮৪৮ সালের কথা। ইউরোপের দেশগুলো তখন যেন খাদের কিনারে, একধরনের টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই পুঁজিবাদের পতন নিয়ে সতর্কবার্তা শোনান মার্ক্স। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্রের পতন ঘটলেও ঘুরপথে আবারও রাজা ফিরেছিলেন ক্ষমতায়। কিন্তু জনগণ আবারও ফুঁসে ওঠে। মার্ক্সের ইশতেহার প্রকাশের পরপরই যেন বারুদের স্তূপে আগুন লেগে যায় প্যারিসে। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তোলে, সেনাদের সঙ্গে চলে তুমুল সংঘর্ষ।

মার্ক্সও ছুটে যান সেই সংগ্রামে যোগ দিতে। ততক্ষণে অবশ্য রাজা পালিয়েছেন, ঘোষিত হয়েছে প্রজাতন্ত্র। রাজপথ তখন উল্লসিত বিপ্লবীদের দখলে।

মার্ক্সের এই উত্তেজনার মূল কারণটি লুকিয়ে ছিল ইশতেহারের শুরুর ওই লাইনটির সামান্য পরেই। তিনি লিখেছিলেন, 'এখন পর্যন্ত বিদ্যমান সব সমাজের ইতিহাস হলো শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস।' অর্থাৎ ইতিহাস মানেই বিরোধ ও সংঘাত–ধনী ও গরিবের, মালিক ও শ্রমিকের।

প্যারিসের ঘটনায় মার্ক্স ভেবেছিলেন, তিনি বুঝি সেই ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন নিজের চোখেই দেখছেন। তার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, পুঁজিপতি বা 'বুর্জোয়া'দের হটিয়ে ক্ষমতা দখল করবে শ্রমিক বা 'সর্বহারা' শ্রেণি। তিনি আশা করেছিলেন, এই অভ্যুত্থানই হয়তো সেই চূড়ান্ত লড়াইয়ের শুরু। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরোপের বিপ্লবের সেই আগুন নিভে যায়। মার্ক্স বুঝতে পারলেন, পুঁজিবাদের শেকড় অনেক গভীরে; এর পতন এত সহজে হবে না। সামনে পাড়ি দিতে হবে আরও দীর্ঘ এক পথ।

শেষমেশ ব্রিটেনে পাড়ি জমান মার্ক্স। ইউরোপের একের পর এক শক্তিধর দেশগুলো তাকে তাদের সীমানা থেকে তাড়িয়ে দিলেও ব্রিটেন তা করেনি। লন্ডনে বিদেশি বিপ্লবীদের একটি চক্রের নেতা হয়ে ওঠেন তিনি।

তীক্ষ্ণ চাহনি, গালভর্তি লম্বা দাড়ি আর লোমশ হাত–সব মিলিয়ে মার্ক্সের ব্যক্তিত্বে এমন এক গাম্ভীর্য ছিল, যা একই সঙ্গে সম্ভ্রম ও ভীতি জাগাত। অগাধ পাণ্ডিত্যের জোরে সহজেই অন্যের ভুল ধরিয়ে দিতে তার জুড়ি ছিল না। এমনকি জনসমক্ষে নিজের সহযোদ্ধাদের ভর্ৎসনা করতেও তিনি দ্বিধা করতেন না। আর বিখ্যাত ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের উপহাস এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাটা ছিল তার দৈনন্দিন স্বভাব।

ব্রিটিশ দার্শনিক জেরেমি বেন্থাম সম্পর্কে তার মন্তব্য ছিল, 'লোকটি এতই নিরস যে তার জিব নিশ্চয়ই চামড়া দিয়ে তৈরি।' রেহাই পাননি তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড রাসেলও; যাকে মার্ক্স 'বিকৃত বামন' (distorted dwarf) বলে কটাক্ষ করেছিলেন।

১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপবে রাজতন্ত্রের পতন ঘটলেও ঘুরপথে আবারও রাজা ফিরেছিলেন ক্ষমতায়। ফলে জনগণ আবারও ফুঁসে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তোলে, সেনাদের সঙ্গে চলে তুমুল সংঘর্ষ।

লন্ডনে থিতু হয়ে মার্ক্স অর্থনীতি নিয়ে গভীর পড়াশোনা শুরু করলেন। উদ্দেশ্য, পুঁজিবাদের আদ্যোপান্ত নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব দাঁড় করানো। সেই লক্ষ্য থেকে যে বিশাল গ্রন্থটি তিনি লিখতে চেয়েছিলেন, তা শেষ করতে লেগে গেল দীর্ঘ সময়। মার্ক্সের ধৈর্য প্রশংসার দাবিদার অবশ্যই, কিন্তু কাজ গুছিয়ে করার চেয়ে তালগোল পাকানোর অভ্যাসও ছিল বেশ।

এদিকে লন্ডনের দিনগুলো ছিল অভাব-অনটনে ঠাসা। সংসারে অভাব তখন নিত্যসঙ্গী। বকেয়া টাকার তাগিদে পাওনাদারেরা প্রায়ই দরজায় কড়া নাড়ত। স্ত্রী-সন্তানদের অসুখ যেন পিছু ছাড়ত না। দারিদ্র্যের কশাঘাত এতটাই নির্মম ছিল, নিজের এক শিশুকন্যার মৃত্যুর পর কফিনের টাকার জন্য তাকে হাত পাততে হয়েছিল প্রতিবেশীর কাছে।

দিনের বেলাটা মার্ক্সের কাটত ব্রিটিশ মিউজিয়ামের রিডিংরুমে–ইতিহাস আর অর্থনীতির জট খোলার চেষ্টায়; কঠিন সব বই গিলতেন বসে বসে। আর রাতে বাড়ি ফিরতেন নোটের বিশাল তাড়া নিয়ে। ঘরে তখন শিশুদের খেলনা আর ভাঙাচোরা আসবাবের স্তূপ; এর মাঝেই চলত রাত জেগে লেখালেখি আর একের পর এক চুরুট ফোঁকা।

লেখালেখির কাজটা ছিল রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক। শরীরে বাসা বেঁধেছিল কার্বাঙ্কল বা মারাত্মক সব ফোড়া। যন্ত্রণার উপশম খুঁজতে তিনি আর্সেনিকও ব্যবহার করতেন। অবশেষে ১৮৬০-এর দশকের শেষ দিকে কাজ শুরুর প্রায় কুড়ি বছর পর, বইয়ের প্রথম খণ্ড আলোর মুখ দেখল। আক্ষেপ করে মার্ক্স বলেছিলেন, 'এই বই লিখতে গিয়ে স্বাস্থ্য, সুখ, পরিবার–সবই বিসর্জন দিতে হলো!' ফোড়ার অসহ্য যন্ত্রণায় বসতে পারতেন না, তাই বইয়ের শেষ পাতাগুলো তাকে লিখতে হয়েছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কাজ শেষে মার্ক্সের বিখ্যাত উক্তি ছিল, 'আশা করি, বুর্জোয়ারা মরার আগপর্যন্ত আমার এই ফোড়ার কথা মনে রাখবে।'

'ইউটোপীয়' সমাজতান্ত্রীদের ধারণা ছিল, পুঁজিবাদ মানবসমাজকে বিষিয়ে তুলছে। কার্ল মার্ক্স এ বিষয়ে একমত ছিলেন ঠিকই, তবে সমাধানের পথ নিয়ে ছিল বিস্তর তফাত। ইউটোপীয়রা বিশ্বাস করতেন, মানুষের দয়া বা মহানুভবতাই সমাজ বদলে দেবে। আর মার্ক্সের কাছে এই ভাবনা ছিল একধরনের ছেলেমানুষি। তার মতে, সমাজকে বদলে দেওয়ার বীজ অন্য কোথাও নয়, লুকিয়ে আছে খোদ পুঁজিবাদের কাঠামোর ভেতরেই।

মার্ক্সের ইতিহাস-দর্শন অনুযায়ী, মানবসভ্যতা এগিয়েছে ধাপে ধাপে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পালাবদলের হাত ধরে। পুঁজিবাদের আগে সমাজ চলত সামন্ততান্ত্রিক রীতিতে। তখন আজকের মতো কলকারখানা বা পুঁজিপতি ছিল না; ছিল ছোট কারিগর, কৃষক আর অভিজাত ভূস্বামী। কালক্রমে ক্ষমতাবানেরা জমির দখল নিল, গড়ে উঠল কারখানা। আর স্বাধীন কৃষক ও কারিগরেরা পরিণত হলো মজুরিনির্ভর শ্রমিকে, যাদের অস্তিত্ব এখন পুরোপুরি পুঁজিপতির মর্জির ওপর নির্ভরশীল।

তবে মার্ক্সের তত্ত্ব বলে, পুঁজিবাদ চিরস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়। পুঁজিপতিরা যে প্রক্রিয়ায় মুনাফা লাভ করেন, সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই অনিবার্যভাবেই এই ব্যবস্থার পতন ঘটবে এবং তার জায়গা নেবে এক নতুন সমাজব্যবস্থা।

এখন প্রশ্ন হলো, এই মুনাফার উৎস কী? পুঁজিপতিরা কাঁচামাল কেনেন–হোক তা কাপড়, বোতাম কিংবা সুতা। তা দিয়ে তৈরি হয় শার্ট, যা বাজারে বিক্রি করে আসে মুনাফা। কিন্তু এই বাড়তি অর্থ বা মুনাফা আসলে কোথা থেকে আসে? এর উত্তর খুঁজতে হলে বুঝতে হবে পণ্যের 'মূল্য' বা ভ্যালু কীভাবে তৈরি হয়।

অ্যাডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকার্ডোর মতো মার্ক্সও বলতেন, কোনো পণ্য তৈরিতে যতটুকু শ্রম দেওয়া হয়, সেটাই তার প্রকৃত মূল্য। অর্থনীতিতে একে বলা হয় 'শ্রমের মূল্যতত্ত্ব' বা 'লেবার থিওরি অব ভ্যালু'। যদি একটি শার্ট তৈরি করতে আধা ঘণ্টা সময় লাগে, তবে ওই আধা ঘণ্টার শ্রমই হলো শার্টটির মূল্য।

মার্ক্সের মতে, শ্রমিকেরা ততটুকুই মজুরি পান, যা দিয়ে তারা কোনোমতে টিকে থাকতে পারেন। অর্থাৎ তাদের অন্ন-বস্ত্রের ন্যূনতম চাহিদাটুকু মেটে। ধরা যাক, একজন শ্রমিক ৫ ঘণ্টা কাজ করলেই তার সারা দিনের খোরাকি বা ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর মতো পণ্য তৈরি হয়ে যায়। মালিক তাকে মূলত এই কাজের সমান মজুরিই দেন। কিন্তু কারখানায় ওই শ্রমিককে দিয়ে যদি ১২ ঘণ্টা কাজ করানো হয়, তখন কী ঘটে? প্রথম ৫ ঘণ্টায় তিনি নিজের মজুরির টাকা তুলে ফেলেন। কিন্তু শিফটের বাকি ৭ ঘণ্টা তিনি কার জন্য খাটলেন? এই বাড়তি ৭ ঘণ্টায় তৈরি হওয়া বাড়তি বা 'উদ্বৃত্ত মূল্য' সোজা চলে যায় মালিকের পকেটে। এটাই মালিকের মুনাফা। এই মুনাফার টাকায় মালিক আরও মেশিন কেনেন, ব্যবসার পরিধি বাড়ান, আর এভাবেই অর্থনীতি আকারে বড় হতে থাকে।

পুঁজিপতিদের মূল লক্ষ্যই হলো শ্রমিককে হাড়ভাঙা খাটিয়ে যতটা সম্ভব ওই 'উদ্বৃত্ত মূল্য' নিংড়ে নেওয়া। ওদিকে শ্রমিক চায় কাজের সময় কমুক, পারিশ্রমিক বাড়ুক। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হলো, শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যকার প্রতিযোগিতাই তাদের মজুরি বাড়তে দেয় না। চাকরি হারানোর ভয় তো আছেই; একজনের জায়গা নিতে কম টাকায় কাজ করার জন্য মুখিয়ে থাকে আরও দশজন।

ফলে 'সর্বহারা' বা শ্রমিক শ্রেণির ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে তিমিরাচ্ছন্ন। মার্ক্সের ভাষায়, পুঁজিবাদ শ্রমিকের জীবনকে শুধুই বিরামহীন খাটুনিতে পর্যবসিত করে। এমনকি এই ব্যবস্থা রেহাই দেয় না শ্রমিকের স্ত্রী-সন্তানকেও; টেনেহিঁচড়ে পিষে ফেলে পুঁজির দানবীয় চাকার নিচে। মার্ক্সের দৃষ্টিতে, বুর্জোয়া (মালিক) ও প্রলেতারিয়েত (শ্রমিক)–এই দুই শ্রেণির সংঘাত পুঁজিবাদের এক গভীর ও অনিবার্য সংকট। নিজেদের মুনাফার পাহাড় অটুট রাখতে মালিকপক্ষ শোষণের মাত্রা বাড়াতেই থাকে, আর এভাবেই প্রস্তুত হতে থাকে সংঘাতের জমিন।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অর্থনীতির বিশাল অংশের খুব সামান্য অংশই জোটে শ্রমিকের পাতে। একসময় পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে, কারখানায় উৎপাদিত পণ্য কেনার মতো টাকাও সাধারণ শ্রমিকের হাতে থাকে না। ফলে বাজারে পণ্যের স্তূপ জমে যায়, কিন্তু ক্রেতা মেলে না। পুঁজিপতিরা পড়েন মহাবিপাকে, তাদের পণ্য পড়ে থাকে অবিক্রীত।

এদিকে শ্রমিকের দুর্দশা আর ক্ষোভ বাড়তে বাড়তে যখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই পুরো ব্যবস্থাটি তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে। জেগে ওঠে সর্বহারা শ্রেণি; দখল নেয় কলকারখানা আর ফসলি জমির। পত্তন ঘটে শোষণহীন এক নতুন সমাজের–কমিউনিজম বা সাম্যবাদের।

এই সমাজে ব্যক্তিগত মালিকানা বলে কিছু থাকে না। বিশাল চুল্লি কিংবা ভারী ক্রেনের মালিকানা তখন আর কোনো ব্যক্তির কুক্ষিগত থাকে না, বরং এর মালিকানা থাকে পুরো সমাজের বা সম্প্রদায়ের হাতে। তখন আর পুঁজিপতির ঠিক করে দেওয়া মজুরি পেতে হয় না, বরং যার যতটুকু প্রয়োজন, সে ততটুকুই পায়। এভাবেই সমাজ থেকে মুছে যায় শ্রেণিভেদ, অবসান ঘটে মানুষের সঙ্গে মানুষের চিরন্তন সংঘাতের।

অ্যাডাম স্মিথ বলেছিলেন অর্থনীতির 'অদৃশ্য হাত'-এর কথা, যা কিনা আপনাআপনিই বাজারের ভারসাম্য আর শান্তি বজায় রাখে। কিন্তু মার্ক্স দেখলেন ঠিক উল্টোটা। তার কাছে পুঁজিবাদ মানেই চরম অস্থিরতা আর সংঘাত।

এই ব্যবস্থায় 'উৎপাদনের উপকরণ'–অর্থাৎ পণ্য তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি ও কলকারখানা থাকে পুঁজিপতির দখলে। অন্যদিকে শ্রমিকের সম্বল কেবলই তার শারীরিক শ্রম। সামন্তযুগে কৃষকেরা যেমন ভূস্বামীর কাছে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ছিল, পুঁজিবাদে শ্রমিকরা আপাতদৃষ্টে তেমন নয়; তারা 'স্বাধীন'। তারা যার কাছে ইচ্ছা কাজ করতে পারে। কিন্তু মার্ক্সের মতে, এই স্বাধীনতা আসলে একধরনের মরীচিকা। কারণ, এখানে শ্রম বিক্রি করা ছাড়া শ্রমিকের বেঁচে থাকার আর কোনো উপায় নেই। ফলে পেটের দায়ে তাকে কোনো না কোনো পুঁজিপতির দুয়ারেই নিজেকে সঁপে দিতে হয়; মেনে নিতে হয় শোষণের এই অদৃশ্য নিয়ম।

পুঁজিপতিরা বিত্তবৈভবের এই পাহাড় গড়ে তুলতে পারেন রাষ্ট্রের বানানো আইন ও রাজনৈতিক কাঠামোর প্রত্যক্ষ মদদে। শ্রমিকের ঘামে অর্জিত 'উদ্বৃত্ত মূল্য' মালিকের পকেটস্থ করাকে এই ব্যবস্থাই মূলত আইনি বৈধতা দেয়। প্রথাগত অর্থনীতিবিদেরা পুঁজিবাদকে দেখেন একটি সংঘাতহীন ব্যবস্থা হিসেবে। তাদের সংজ্ঞায় 'পুঁজি' বা ক্যাপিটাল হলো কারখানার দালান, কনভেয়ার বেল্ট, করাত কিংবা তাঁতকল। 

কিন্তু মার্ক্সের দৃষ্টি ছিল আরও গভীরে। তার কাছে পুঁজি মানে শুধুই যন্ত্রপাতি নয়, পুঁজি হলো 'ক্ষমতা'। সমাজকে 'বিত্তবান' আর 'বিত্তহীন'–এই দুই ভাগে ভাগ করে রাখার নামই পুঁজি। আর পুঁজিবাদের সারকথা হলো, যার হাতে সম্পদ, ক্ষমতার চাবিকাঠিও তার হাতেই কুক্ষিগত থাকবে।

পুঁজিবাদের এই বাস্তবতা ও ক্ষমতার সমীকরণটি বোঝানোটাই ছিল মার্ক্সের মূল লক্ষ্য। আর তাই নিজের কালজয়ী গ্রন্থটির নাম কোনো রাখঢাক না রেখেই তিনি রেখেছিলেন 'ডাস ক্যাপিটাল'।

কার্ল মার্ক্সের সেই চিন্তাধারা পরবর্তী সময়ে 'মার্ক্সবাদ' নামে এক বিশাল মতবাদে রূপ নেয়। বিংশ শতাব্দীর বিশ্বরাজনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে এই মতবাদ। মার্ক্সের মৃত্যুর অনেক পরে রাশিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, চীনসহ বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পত্তন ঘটে। অর্থনীতির পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় রাষ্ট্র। কলকারখানা বা খামারে কী উৎপাদিত হবে, তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার একচ্ছত্র মালিক বনে যায় সরকার।

শুরুর দিকে এসব দেশে দ্রুত শিল্পায়ন হয় ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল। পোহাতে হয়েছে দৈনন্দিন জীবনের নানা দুর্ভোগ। দুর্ভাগা অনেকের কপালে জুটেছে শ্রমশিবিরের হাড়ভাঙা খাটুনি, এমনকি অনাহারে মৃত্যুও। একসময় দেখা গেল, রাষ্ট্রের পক্ষে হাজার হাজার কারখানার তদারকি করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অদক্ষতা গ্রাস করল উৎপাদনব্যবস্থাকে, নতুন পণ্য বা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গতি গেল কমে। শেষমেশ ইউরোপের অনেক দেশে এই অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে এবং সমাজতন্ত্রের পতন ঘটে।

পরবর্তী সময়ের অর্থনীতিবিদেরা মার্ক্সের অনেক তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন। বিশেষ করে তার 'শ্রমের মূল্যতত্ত্ব' বা লেবার থিওরি অব ভ্যালু তারা মেনে নেননি; এর বদলে এসেছে নতুন তত্ত্ব। সমালোচকেরা বলেন, সমাজতান্ত্রিক সমাজগুলোর এই পতনই প্রমাণ করে যে মার্ক্সের দর্শন আদতে ভুল ছিল।

তবে মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। মার্ক্সের মূল কাজ ছিল পুঁজিবাদের ভেতরের সংকটগুলো তুলে ধরা; সমাজতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ দেখতে হুবহু কেমন হবে, তার খুঁটিনাটি বা নীলনকশা তিনি দিয়ে যাননি। অনেকেই মনে করেন, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো মার্ক্সের কল্পিত সেই সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছিল। উল্টো সেখানকার শাসকেরা ভিন্নমত দমনে যে নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়েছিলেন, মার্ক্স বেঁচে থাকলে হয়তো তা দেখে আঁতকে উঠতেন।

উনিশ শতক যতই এগোতে লাগল, শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা নিয়ে সমাজের নানা স্তরে উদ্বেগ বাড়তে থাকল। তবে সবাই যে পুরো ব্যবস্থাটি উল্টে ফেলার পক্ষে ছিলেন, তা নয়। একদল চিন্তাবিদ মনে করতেন, বিপ্লব নয়, বরং সংস্কারের মাধ্যমেই পুঁজিবাদকে অনেক বেশি 'মানবিক' ও সহনশীল করে তোলা সম্ভব।

কালক্রমে অনেক দেশেই ধনী বা অভিজাতদের পাশাপাশি সাধারণ শ্রমিকেরাও ভোটাধিকার অর্জন করে নিল। সমাজে তাদের প্রভাব বাড়ল। রাষ্ট্রও সচেষ্ট হলো পুঁজিবাদের রুক্ষ চেহারাটা বদলে দিতে, তাকে আরও সহনশীল করে তুলতে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ফ্রান্স ও ডেনমার্কের মতো দেশগুলো চালু করল বেকার ভাতা। তারও আগে, উনিশ শতকের শুরুর দিকে জার্মানি সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষার দুয়ার খুলে দিয়েছিল; পরে আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনও সেই পথে হাঁটল। একসময় আইন করে নিষিদ্ধ হলো শিশুশ্রম। খনি আর কারখানার অন্ধকার জীবন থেকে শিশুরা মুক্তি পেল। ধীরে ধীরে সাধারণ শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হলো।

শ্রমিকের জীবনমান বাড়ার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি মার্ক্স আজ অপ্রাসঙ্গিক?

উত্তর হলো–না। কারণ, মার্ক্সবাদ বলে, গাড়ি-বাড়ি বা টিভির মালিক হওয়ার পরও পুঁজিবাদ মানুষকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পারে। মার্ক্স এই অবস্থার নাম দিয়েছিলেন 'অ্যালিয়েনেশন' বা 'বিচ্ছিন্নতাবোধ'।

তার মতে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিকেরা বিশাল এক যন্ত্রের ছোট চাকা ছাড়া আর কিছুই নয়। নিজের হাতে বানানো পণ্যের সঙ্গে তাদের কোনো আত্মিক যোগ থাকে না; কেবল লভ্যাংশের জন্য মালিক সেই পণ্য বাজারে বেচে দেন। কর্মক্ষেত্রে তারা অন্য মানুষকে মানুষ হিসেবে নয়, বরং উৎপাদনের হাতিয়ার হিসেবে দেখতে শেখে। শেষ পর্যন্ত মানুষ তার নিজের মানবিক সত্তা থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে–যে মানবিকতাই তাকে অন্য মানুষের সঙ্গে যুক্ত রাখে। মার্ক্সের মতে, যত বেশি মজুরিই দেওয়া হোক না কেন, অর্থের বিনিময়ে এই বিচ্ছিন্নতার ভারী শিকল ছেঁড়া সম্ভব নয়।

এই বিচ্ছিন্নতার মূলে রয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানা, যা সমাজকে মালিক আর শ্রমিকে বিভক্ত করে রাখে। মার্ক্সের বিশ্বাস ছিল, একমাত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ ঘটালেই মানুষ তার হারানো মানবিকতা পুরোপুরি ফিরে পাবে।

আর তাই তো 'দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো' বা কমিউনিস্ট ইশতেহারের শেষটা হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক রণহুঙ্কারে: 'শৃঙ্খল ছাড়া সর্বহারাদের হারানোর কিছুই নেই, জয় করার জন্য আছে গোটা বিশ্ব। দুনিয়ার মজদুর, এক হও!'


ছবি: সংগৃহীত 
 

Related Topics

টপ নিউজ

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো / কার্ল মার্ক্স / সমাজতন্ত্র / কমিউনিজম

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: সংগৃহীত
    মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া কামাল ও তার পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
  • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
    ‘অপচয়মূলক’ ক্যালিব্রি বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রুবিও
  • রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
    ‘অপমানবোধ’ করছেন, ভোটের পরে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি: রয়টার্স 
  • ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
    ডাকসু নেতার ধাওয়া: দৌড়ে পালালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আ ক ম জামাল
  • ছবি: আনস্প্ল্যাশ
    বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট চালু, আকাশে উড়বে টানা ২৯ ঘণ্টা
  • ছবি: টিবিএস
    মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গলার পোড়া দাগের সূত্র ধরে যেভাবে ধরা পড়লেন আয়েশা

Related News

  • যুদ্ধ যখন পুঁজির খেলা: লেনিন ও হবসনের চোখে সাম্রাজ্যবাদ
  • কার্ল মার্ক্সের শহরে…
  • ডারউইনকে মার্ক্সের উপহার দেওয়া ‘ডাস ক্যাপিটাল’ থেকে বেরিয়ে এল ‘চমকপ্রদ তথ্য’! 
  • কার্ল মার্ক্সের ১৪০তম প্রয়াণ দিবস: মার্ক্স কি এখনও প্রাসঙ্গিক
  • সাইকেলে চড়ে সমাজতন্ত্র

Most Read

1
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া কামাল ও তার পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

2
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

‘অপচয়মূলক’ ক্যালিব্রি বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রুবিও

3
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

‘অপমানবোধ’ করছেন, ভোটের পরে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি: রয়টার্স 

4
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
বাংলাদেশ

ডাকসু নেতার ধাওয়া: দৌড়ে পালালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আ ক ম জামাল

5
ছবি: আনস্প্ল্যাশ
আন্তর্জাতিক

বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট চালু, আকাশে উড়বে টানা ২৯ ঘণ্টা

6
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গলার পোড়া দাগের সূত্র ধরে যেভাবে ধরা পড়লেন আয়েশা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net