‘নারী ওবামা’ কমলা দেবী হ্যারিসের ১০৮ নারিকেল!

আচ্ছা, প্রথম কোন ভারতীয় সিনেমায় মন্দির প্রাঙ্গণে নারকেল ফাটানোর দৃশ্য দেখেছেন? উঁহু, উত্তর ভারতীয় হিন্দি ছবিতে এমন দৃশ্য বিশেষ দেখা যায় না। বাংলাতেও নয়। ব্যক্তিগতভাবে এই নিবন্ধকার দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রকার মণি রত্নমের 'রোজা'য় প্রথম নারকেল ফাটানোর দৃশ্য দেখেছে। তারপর ধীরে ধীরে তামিল বা তেলেগু ছবির কল্যাণে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এই দিকটির বিষয়ে আমরা সবাই কম-বেশি অবগত।
শুনলে কি অবাক হবেন যদি জানতে পান যে সদ্য সমাপ্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে সে দেশের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সদ্য নির্বাচিত, আফ্রিকীয় বাবা ও দক্ষিণ ভারতীয় মায়ের সন্তান কমলা দেবী হ্যারিস নয় বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে দাঁড়ানোর সময় তাঁর মা শ্যামলা গোপালনের বোন সরলা গোপালনকে একটি চিঠিতে লেখেন, 'চিঠি আন্টি, (চিঠি তাঁর মায়ের বোনের ডাক নাম, আমাদেরও বেশ পরিচিত শব্দটি, তাই না?) আমার জন্য প্রার্থনা করো এবং মন্দিরে নারকেল ফাটিও।'
বাস্তবিকই তখন কমলার মামা বাড়ি চেন্নাইয়ের বেসান্ত নগরের বরসিদ্ধি বিনয়গড় মন্দিরে কমলার নামে তাঁর মাসী বা খালা সরলা গোপালন ১০৮টি নারকেল ফাটান। দক্ষিণ ভারতে এটি একটি প্রচলিত বিশ্বাস যে মন্দির প্রাঙ্গণে ১০৮টি নারকেল ফাটালে সব বাধা-বিপত্তি দূর হয়। বঙ্গোপসাগরের তীরস্থ দক্ষিণ ভারতে বিপুলায়তন নারকেল বীথি সেখানকার মানুষের কাছে স্বভাবতই সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতীক হবে হয়তো।

বাংলার দক্ষিণে বরিশাল অঞ্চলেও আমরা যেমন মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস বা রান্নায় প্রচণ্ড নারকেল প্রিয়তা দেখি। উত্তর ভারত থেকে বাংলা বা আসাম কি উড়িষ্যার মন্দিরে নারকেল ফাটানোর দৃশ্য তত পরিচিত না হলেও দক্ষিণ ভারতীয় লোকাচারের এটা এক গভীর বিশ্বাসের দিক। ঠিক যেভাবে তুর্কি লেখক ওরহান পামুকের উপন্যাসে যে মুসলিম জনজীবনের পরিচয় পাওয়া যায়, ধর্ম বিশ্বাসে এক হলেও বাংলাদেশের সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বা সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাসের মুসলিম জনজীবনের ছবি হুবহু এক হবে না। ধর্মীয় মিলের পাশাপাশি কিছু ভিন্ন ধরনের লোকাচারও থাকবে যা দেশ বা ভূখণ্ড ভেদে ভিন্ন।
আবার বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় বা এমনকি খোদ বৃহত্তর প্রাচ্য বা এশীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র বা তুর্কী উপন্যাসের সাথে পশ্চিমা সাহিত্য বা চলচ্চিত্রের চেয়ে আমরা আরও বেশি দ্রুততার সাথে নিজেদের সূক্ষ এক ধরনের মিলও খুঁজে পাব।
কমলা সেবার নির্বাচনে জিতে খুব খুশি হয়ে তাঁর চিঠি আন্টিকে আরো লিখেছিলেন, 'চিঠি আন্টি, তোমার নারকেলগুলো আমার কাজে দিয়েছে। তোমার ফাটানো প্রতিটি নারকেল আমাকে ১০০০ ভোট এনে দিয়েছে।'
এই ঘটনার ছয় বছর পর ২০১৬ সালে সিনেটর পদে দাঁড়ানোর সময় কমলা আবার তাঁর চিঠি আন্টিকে মন্দিরে ১০৮টি নারকেল ফাটাতে অনুরোধ করেন এবং ভাগ্নির আবদার রক্ষা করেন সরলা গোপালন। যথারীতি কমলা আবার জয়ী হলেন। আর আজ খোদ আমেরিকার উপ-রাষ্ট্রপতি হবার পর কমলার জন্য তাঁর চিঠি আন্টির বোধ করি ১০৮টি নয়, কমসে কম ১০০৮টি নারকেল ফাটানোর সময় এসেছে! যেহেতু সরলার ৫৬ বছর বয়সী ভাগ্নি আমেরিকার ডেমোক্র্যাটিক দলের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সাথে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে রানিং মেট হিসেবে দাঁড়িয়ে জিতেও গেছেন। একইসাথে তিনি হয়েছেন আমেরিকার প্রথম কালো এবং দক্ষিণ এশীয়, নারী উপ-রাষ্ট্রপতি।

আর ভাগ্নির এই জয়ে আপ্লুত সরলা গোপালন ভারতের 'বিজনেস লাইন' পত্রিকাকে বলেন, 'আমরা এখন আর বেসান্ত নগর এলাকায় থাকি না। তবে, ওদিকটায় গেলে অবশ্যই ওর জন্য আবার নারকেল ফাটাব।'
সরলা নিজেও কিন্তু পেশাগত জীবনে দারুণ সফল এক নারী। নামী গাইনোক্লোজিস্ট সরলা ভাগ্নির আজকের এই উত্থানের পেছনে তাঁর বড় বোন শ্যামলার অবদানকেই বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান, 'আমার বোন খুব অল্প বয়সে আমেরিকা গেছিল। ও ছিল খুবই প্রগতিশীল আর সবসময় ওর সন্তানদের ঠিক-বেঠিক বা ন্যায়-অন্যায় বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছে।'
'শ্যামলা কখনো তাঁর আগ্রহের কাজ থেকে পিছু হঠে আসেনি,' কমলার মা বা বড় বোন শ্যামলাকে নিয়ে বলেন সরলা।
কমলা দেবী হ্যারিস নিজেও তাঁর জীবনে মাতামহ পিভি গোপালন বা একজন সিভিল সার্ভেন্টের অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। আর আফ্রিকীয় বাবার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর সিঙ্গল মা হিসেবে কমলা ও তাঁর ছোট বোন মায়াকে বড় করার কঠিন সংগ্রাম করেছেন যে মা, সেই শ্যামলার ভূমিকাই নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি কমলার জীবনে। এ জন্যই ২০০৯ সালে মা শ্যামলার মৃত্যুর পর মায়ের শবদেহের ছাই বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে আমেরিকা থেকে চেন্নাই অবধি উড়ে এসেছিলেন তিনি।
আজ যখন কমলার এই বিজয়ে শুধু ভারতীয় বা বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয়রা নয়, এমনকি প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি তরুণীকেও আনন্দে আত্মহারা হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখছি, কেউ কেউ এমনটাও বলছেন যে দক্ষিণ এশিয়ার যে নারীদের 'কারি স্মেলিং', তামাটে বা কালো রঙের নারী বলে এক ধরনের নীরব অবজ্ঞা করা হয় শ্বেতকায় পশ্চিমে, সেই পশ্চিমে আজ দিনের একটা বড় সময় রান্নাঘরে কাটানো আর গায়ে তরকারি বা ঝাল-মশলার ঘ্রাণ মাখা সব দক্ষিণ এশীয় নারীর বিজয়ের দিন।
গোটা ভারত এবং দক্ষিণ ভারত তো অবশ্যই ট্যুইটার-ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুক ও মূলধারার সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল সুদ্ধ ছেয়ে যাচ্ছে বিজয়ের আনন্দ আবহে। কমলা নাকি জো বাইডেনের রানিং মেট হবার পরেই মাসী সরলাকে লিখেছিলেন, 'চিঠি, আমি এখানেই থামব না!' চেন্নাই শহরের যে বেসান্ত নগরে কমলার মা শ্যামলা শৈশব কাটিয়েছেন আর প্রথম যৌবনে চলে গেছিলেন 'ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কেলে'তে ডক্টরেট ডিগ্রির পড়া-শোনার জন্য, সেই বেসান্ত নগরের ছবিতে ভেসে যাচ্ছে ভারতীয়দের ট্যুইটার ও ফেসবুক। এমনকি শৈশবে ভারতে বেড়াতে আসা কমলা ও তাঁর ছোট বোন মায়ার শাড়ি পরে মাতামহ-মাতামহীর সাথে তোলা ছবিও শেয়ার দিচ্ছেন ভারতীয়রা।
কেউ কেউ মজাও করছেন ভারতীয়দের এই আনন্দে আত্মহারা হাল নিয়ে। যেমন, দক্ষিণ ভারতের লেখিকা কাবেরী মাধবন একটি ট্যুইটে মজা করে লিখেছেন, 'যে কোনো সময়ে আমার মা গর্বিত সুরে জানাতে পারেন যে তাঁদের পাড়ার ফার্মেসিস্টের বাবা ছিলেন কমলা হ্যারিসের পিতামহীর পছন্দের দর্জি।'

এদিকে, চেন্নাইয়ের সব টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদকরা ত' কমলার মাসী বা মামাদের পিছু পিছু ঘুরছেন যেন শেষবার কমলা চেন্নাই এসে বঙ্গোপসাগরের তীরে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর পিতামহের সাথে গণতন্ত্র ও সাম্য বিষয়ে কী কথা বলেছেন সে বিষয়ে দু-এক লাইন উদ্ধৃতি তাঁদের প্রতিবেদনে বলা যায়। চেন্নাইয়ে সিএনএনের স্থানীয় মিডিয়া অংশীদার ট্যুইটারে ইডলি ও সম্বরের ছবি দিয়ে জানাচ্ছেন, 'কমলা ইডলি ও সম্বর খেতে ভালোবাসেন।' যেহেতু অসংখ্য বাংলাদেশিকে স্বাস্থ্যগত কারণেও প্রতি বছর দক্ষিণ ভারতে যেতে হয়, ইডলি বা সম্বর বাংলাদেশের বাঙালি জিহ্বাতেও খুব অপরিচিত নয়। ঢাকার অনেক দামি রেস্ট্যুরেন্টেও পাওয়া যায় ইডলি বা সম্বর। অনেকটা আমাদের পাটিসাপটা পিঠার মতো চালের গুঁড়ো দিয়ে বানানো বিশেষ রোলের ভেতরে নারকেল-গুড়ের বদলে সব্জির পুর। ব্যক্তিগতভাবে এই নিবন্ধকার ইডলি খেয়েছিল প্রথম মুম্বাইয়ে স্বাস্থ্যগত কারণেই এক হাসপাতাল ক্যাম্পাসের কেন্টিনে।
কমলা যে নামের শব্দগত অর্থ একাধিক ভারতীয় ভাষাসহ বাংলাতেও আমরা 'পদ্ম ফুল' হিসেবে জানি, সেই কমলার বিজয় নিয়ে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ও মজার ট্যুইট করেছেন ভারতের নামী কলামিস্ট ও বিরোধী দল কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর। আগে যেখানে প্রবাসী ভারতীয়দের লক্ষ্য হতো বিদেশে অধ্যাপনা বা ডাক্তার কি প্রকৌশলীর চাকরি করা, কমলার বিজয়ের পর নিশ্চিত প্রবাসী ভারতীয়রা রাজনীতিতেও অংশ নিতে চাইবে। সেই মর্মেই শশীর কৌতুক, 'বেটা, তুমি কী করো? ওহ, হার্ভার্ডে অধ্যাপক? এখনো অন্তত একজন মেয়র হতে পারোনি?'
এই নিবন্ধের শুরু থেকে খানিকটা হাল্কা ধাঁচে লিখলেও এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতেই হয়। ভারতীয়রা কমলাকে 'নিজেদের' হিসেবে শোরগোল শুরু করলেও কমলা নিজে কিন্তু তাঁর জ্যামাইকান, কালো বাবার পরিচয়কে যতটা মিডিয়ার সামনে বা জনপরিসরে তুলে ধরেছেন, ভারতীয় পরিচয়কে অতটা তুলে ধরেননি। হতে পারে আমেরিকায় ভারতীয়দের থেকে কালো ভোটারের সংখ্যাধিক্য অনেক বেশি বলেই এমনটা করেছেন। গত বছর একটি ভিডিওতে কমলার মসলা দোসা রান্নার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ভারতীয়রা এটা নানা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়।
আমেরিকার রাজনীতিতে কমলাকে 'নারী ওবামা' বলা হয়। সেদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী, কালো ও ভারতীয় আমেরিকান হিসেবে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৯-এর আগস্টে জো বাইডেন তাঁকে 'রানিং মেট' হিসেবে ঘোষণার আগে পর্যন্ত কমলা নিজেই ছিলেন বাইডেনের কড়া সমালোচক। যেহেতু খোদ রাষ্ট্রপতি পদেই দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। তবে যথেষ্ট টাকা-পয়সা না থাকার কারণে তিনি সেই প্রচারণা অভিযান থেকে সরে দাঁড়ান।

শুধু উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবেই নয়, এর আগেও স্যান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি পদে তিনিই ছিলেন প্রথম নারী, প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ও একাধারে ভারতীয়-আমেরিকান। অনেক বিষয়েরই 'প্রথমা' হলেন এই কমলা: প্রথম এশীয়-আমেরিকান হিসেবেও তিনিই উপ-রাষ্ট্রপতি পদটি জয় করেছেন।
জো বাইডেন যখন প্রথম তাঁর দলের ভোটার তালিকায় বিপুল কালো ভোটারের উপস্থিতির কথা মাথায় রেখে কমলাকে 'রানিং মেট' হিসেবে বেছে নেন, কমলা ছিলেন গোটা আমেরিকায় কোনো বড় দলের টিকিট পাওয়া তৃতীয় নারী যিনি উপ-রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড়িয়েছেন ও লড়াই করেছেন। এর আগে ২০০৮ সালে রিপাবলিকান দল থেকে আলাস্কার গভর্নর সারাহ পলিন নামে এক শ্বেতকায়া, রক্ষণশীল সুদর্শনা ও ১৯৮৪ সালে নিউইয়র্কের প্রতিনিধি জেরাল্ডিন ফেরারাওকে আমরা দেখেছি এই পদে লড়াই করতে।
ওবামা রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ে কমলাকে 'নারী ওবামা'ও ডাকা হতো। তাঁকে বারাক ওবামার কাছের মানুষ মনে করা হয়। ওবামাই এই ৫০:৫০ আফ্রিকান-ভারতীয় নারীকে ২০১৬ সালের সিনেটসহ নানা নির্বাচনে দাঁড়ানোর পথে এগিয়ে দেন।
কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস জ্যামাইকার এক কালো যুবক আর মা শ্যামলা গোপালন ছিলেন চেন্নাইয়ের এক ক্যানসার গবেষক ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারী। যদিও কমলা নিজেকে 'আমেরিকান' পরিচয় দিতেই ভালোবাসেন।
বাবা-মা'র বিচ্ছেদের পর কমলাকে তাঁর মা শ্যামলাই বড় করেন। কমলা ও তাঁর বোন মায়াকে মা শ্যামলা খুব দ্রুতই ক্যারিবীয় সংস্কৃতি আয়ত্ত্ব করে নিয়ে 'কালো আমেরিকান' হিসেবেই বড় করেন। রান্না বা সাংস্কৃতিক নানা অভ্যাসে দক্ষিণ ভারতীয় আচার-আচরণ পালন করলেও কমলার মা তাদের 'কালো আমেরিকান' হিসেবে গৌরব বোধ করতে শেখান।
ওকল্যান্ডে জন্ম নেওয়া হ্যারিস বড় হয়েছেন বার্কেলেতে। হাই-স্কুলে পড়ার বছরগুলো তাঁর কেটেছে ফরাসী বলিয়ে অধ্যূষিত কানাডায়- তাঁর মা তখন মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। এরপর কমলা আমেরিকা আসেন হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। সেখানের শুরুর চার বছরই তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ববহ ও গঠনমূলক বছর বলে তিনি জানান। এরপর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ডিগ্রি নেবার পরে আলামেডা কান্ট্রি ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে তিনি কাজ শুরু করেন।
২০০৩ সালে স্যান ফ্রান্সিসকোর শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি পান কমলা। এরপরই ২০১০ সালে আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে প্রথম কালো ও প্রথম নারী হিসেবে জয়ী হন। পরপর দু'বার এই পদে নিযুক্তি পাবার সময়েই ডেমোক্র্যাট দলের অন্যতম উদীয়মান নক্ষত্র হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়ায়। ২০১৭ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র ইউএস সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন।

জীবনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা? কে আর মা শ্যামলা গোপালন ছাড়া? 'আমার মা সবসময় বলতেন কিছু না কিছু করতে। চুপ করে ঘরে বসে থাকা আর এটা-ওটা নিয়ে অভিযোগ না করে কোনো না কোনো কাজে ব্যাপৃত হবার শিক্ষা দিয়েছিলেন মা,' লিখেছেন কমলা তাঁর আত্মজীবনীতে।
উচ্চশিক্ষা, আইনপেশা ও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত কমলা বিয়ে করার ফুরসত পেয়েছেন ২০১৪ সালে। ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন হলে ২০১৪ সালে বিয়ে করেছেন, ৫০ বছর বয়সে পৌঁছে। শ্বেতকায়, ইহুদি বর ডগলাস এমহফের আগের ঘরে দুই সন্তান এলা ও কোলের বিমাতা তিনি। সুতরাং একুশ শতকের যে লড়িয়ে বোনেরা উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার থেকে সৃজনশীল নানা কাজে নিদারুণ ব্যস্ততায় অনেক বয়স হয়ে এখনো একা, তারাও ঘাবড়াবেন না! কমলার জীবনই প্রমাণ করে, জীবনে জয়ী ও সুখী যে কোনো বয়সেই হওয়া যায়।
- লেখক: প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক