জি-৭ সম্মেলকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতিতে যেভাবে উত্তেজনা বাড়ছে

সদ্য সমাপ্ত জি-৭ সম্মেলনে পশ্চিমা নেতাদের চীনের বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি ও সমালোচনা পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্বের আগুনে অনেকটা ঘি ঢালার মতই কাজ করেছে। বর্তমান বিশ্বের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। অথচ এক দশক আগেও বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা এমনটা ছিলো না। ২০১৩ সালে শি জিনপিং চীনের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর "বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ" (বি আর আই) নামে যে প্রকল্প গ্রহণ করেছিল, মূলত সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের হাত ধরেই চীন বিশ্বব্যাপী তার অর্থনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনা মহামারিজনিত অর্থনৈতিক ধীরতার মাঝেও চলতি দশকের মধ্যেই চীন বিশ্বের এক নম্বর শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চীনের এমন উত্থানকে মেনে নিতে চাচ্ছে না। ফলে চীনের আঞ্চলিক প্রভাব ঠেকাতে কখনো ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কোয়াড গঠন, আবার কখনো বিশ্বব্যাপী প্রভাব ঠেকাত শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ সম্মেলনে "বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড" নামক সংগঠন গঠনের কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র।
এক সময় বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো যেমন তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটো গঠন, মার্শাল প্ল্যান, ট্রুম্যান ডক্ট্রিন নিয়ে মাঠে নেমেছিলো, বর্তমানে চীনের বিরুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেকটা সেরকম মনোভাবের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখন রাষ্ট্রগুলো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে 'হেড টু হেড' সামরিক শক্তি ব্যবহার করেনা বিধায় স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্ববাসী যতগুলো ছায়া যুদ্ধ (Proxy War) ও কম বেশি সামরিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছিলো বর্তমানে হয়ত ততটা প্রত্যক্ষ করবে না। কিন্তু এর সম্পূর্ণ চাপ যাবে বিশ্ব অর্থনীতির উপর দিয়ে। কারণ বিশ্বের মোট সম্পদের শতকরা আশি ভাগের বেশি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রসমূহ এবং চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই এই দেশগুলোর মাঝে অর্থনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধ মানে পুরো বিশ্বের জন্য সংকট। যার প্রমাণ ২০১৮-২০১৯ সালের সিনো-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধেই বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলো দেখতে পেয়েছে।
এবার ফেরা যাক সাম্প্রতিক জি-৭ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ কতোটা উর্ধ্বগামী হয়েছে সেই আলোচনায়। ১১ ই জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনব্যাপী জি-৭ সম্মেলন। বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, করোনা সংক্রমণ ও ভ্যাকসিন কূটনীতির পাশাপাশি চীনকে প্রতিহত করায় অন্যান্য শক্তিদের করণীয়ই ছিলো মূলত আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু। হংকং এর স্বায়ত্তশাসন, জিনজিয়াং প্রদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং করোনা সংক্রামণের উৎসস্থলের সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ার বিষয়ে জি-৭ নেতাগন চীনের কড়া সমালোচনা করেছেন। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের বিআরআই প্রকল্পের ত্রুটি তুলে ধরে এর বিপরীত কর্মসূচীস্বরূপ 'বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড নামক' এক নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন; যেই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশেগুলোয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে শিল্পোন্নত দেশগুলো বিনিয়োগ করবে।
এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, গত কয়েকশ বছর ধরে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা গণন্ত্রের শ্রেষ্ঠত্বের যেই ছড়ি ঘুরিয়েছে, তা চীনের প্রভাবে এখন অনেকটাই ভেঙে পড়ার উপক্রম হচ্ছে। ২০১৩ সালের চীনের বিআরআই প্রকল্পে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা, এই তিন মহাদেশের অধিকাংশ দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বাদ দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। তাই সেই শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এটিকে মার্কিন বিরোধী ষড়যন্ত্রের তকমা দিয়ে আসছে এবং একই সাথে উপযুক্ত জবাব দিতে চীনের মাস্টার প্ল্যানকে টক্কর দেয়ার মত আরো শক্তিশালী প্ল্যান উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের একশ'টি দেশ চীনের বিআরআই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে গভীর চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে চীনকে প্রতিহত করার এখনই উপযুক্ত সময়। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ধনী রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন জি-৭ সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি চীনের প্রভাব প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।
অন্যদিকে, জি-৭ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বিশ্বনেতাদের চীনবিরোধী বক্তব্য ও সমালোচনার প্রেক্ষিতে চীন পাল্টা বিবৃতিও দিয়েছে। লন্ডনস্থ চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, "একটা সময় ছিল যখন কয়েকটি দেশের ছোট দল মিলে বৈশ্বিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো, কিন্তু সেই যুগ এখন শেষ হয়েছে। আমরা সবসময়ই বিশ্বাস করি, ছোট বা বড়, শক্তিধর বা দুর্বল, ধনী বা দরিদ্র যাই হোক - সব দেশই সমান, এবং বৈশ্বিক বিষয়গুলো সব দেশের সাথে পরামর্শের মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া উচিত।"
চীন দূতাবাসের মুখপাত্র কর্তৃক এমন বক্তব্য মূলত বেইজিংএর অবস্থানকে ভালোভাবেই স্পষ্ট করে তুলেছে। বিশ্লেষকগণ মনে করছেন এটি নতুন একটি স্নায়ু যুদ্ধের পূর্বাভাস।

জিনজিয়াং প্রদেশে সম্প্রতি উইঘুর মুসলিম নির্যাতন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজন চীনা কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। কিন্তু তাতে চীনকে খুব একটা ভ্রূক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না। চীন তার গতিতে অটল থেকে উদ্দেশ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার প্রকোপে যেখানে পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোরও অবস্থা নাকাল, সেখানে চীনের অর্থনীতিতে ২০২০ সালে হয়েছে প্রবৃদ্ধি। আর একারণেই চীনকে প্রতিহত করতে বিআরআই প্রকল্পের বিপরীত একটি ইতিবাচক ও সুবিধাজনক বিকল্প বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই প্রকল্পের অধীনে উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলোয় যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, তা দেশগুলোর উপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যু এবং চীন হতে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রামণের কন্সপিরেসি সবকিছু মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের সামনে চীনকে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবেই তুলে ধরার প্রয়াস দেখিয়েছে এবারের সম্মেলনে। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউরোপের সবগুলো দেশ কি আসলেও চীনকে তাদের প্রধান হুমকি হিসেবে দেখছে?
উত্তর খুবই সহজ। তবে সেই সহজ উত্তরটি সহজে জানার আগে ইউরোপের অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। গেলো ফেব্রুয়ারি মাসের বিবিসি'র প্রতিবেদন অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এখন চীন। দুই পক্ষের মধ্যে গত বছর বাণিজ্যের পরিমাণ পৌঁছেছে ৭০ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউরোপের আমদানি রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৭ হাজার কোটি ডলার। পূর্বেই বলা হয়েছে, শক্তিশালী অর্থনীতিগুলোর মধ্যে চীনই একমাত্র দেশ যেখানে গতবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর এই প্রবৃদ্ধির ফলে চীনের বাজারে বেড়েছে ইউরোপীয় গাড়ি ও বিলাসবহুল ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও। অপরদিকে, ইইউ-র পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাট-এর হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউরোপের আমদানি কমেছে ১৩.২ শতাংশ এবং রপ্তানি কমেছে ৮.২ শতাংশ।
উপরের পরিসংখ্যান দেখার পর ইউরোপীয় দেশগুলো চীনকে নিজেদের জন্য প্রধান হুমকি মনে করবে নাকি করবে না, এই প্রশ্নের সরাসরি সহজ উত্তরটি বোধহয় দেয়ার আর প্রয়োজন নেই।
চীনকে প্রতিহত করতে বাইডেনের প্রস্তাবে পশ্চিমা নেতারা উন্নয়নশীল দেশগুলোয় অবকাঠামো নির্মাণে বৃহৎ অঙ্কের ডলার ব্যয়ে প্রাথমিকভাবে সম্মত হলেও বাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব হবে সেও এক বড় প্রশ্ন। কারণ ইতোমধ্যেই জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, এখনও পর্যন্ত বড় অঙ্কের অর্থ ছাড় দেয়ার সময় আসেনি। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বেশ কয়েকটি শিল্পোন্নত দেশে, বিশেষ করে জার্মানি এবং ইটালির সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দেশগুলোর বড় বড় অনেক শিল্পের প্রধান বাজার এখন চীন। আবার বিআরআই প্রকল্পের আওতায় ইতালি, গ্রীস, হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ায় অনেক বিনিয়োগ করেছে চীন। তাই এই দেশগুলোর পক্ষে চীনকে নিজেদের শত্রু, প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা হুমকি কোনোটিই ভাবার তেমন অবকাশ নেই।
এছাড়া ইউরোপের অনেক দেশ প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল সম্পদের চাহিদা মিটিয়ে থাকে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার কাছ থেকে। তাই চীনের বিরুদ্ধে খুব কড়াকড়ি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে রাশিয়া হতে প্রাকৃতিক সম্পদ সরবরাহে বাধা সৃষ্টিরও আশঙ্কা থেকে যায়। অর্থাৎ বাইডেন প্রশাসন পশ্চিমা গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠত্বে চীনকে যতটা হুমকি হিসেবে দেখছে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর সেই অবকাশ নেই বললেই চলে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নয়নশীল দেশে বড় পরিমাণের অর্থ ছাড় এবং চীনের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হতে গেলে ইউরোপের অর্থনীতি বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়তে পারে।
মানবাধিকার ইস্যুর কারণে যদিও গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখনো অতটা উষ্ণ হয়ে উঠতে পারেনি, কিন্তু অনেকগুলো দেশের সঙ্গেই চীন দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিতে সফল হয়েছে। এছাড়া কিছুকাল পূর্বেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক চুক্তিও হয়েছে চীনের, যদিও সেটা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট হতে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
বোঝাই যাচ্ছে, চীনের বিরুদ্ধে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে শক্ত ঐক্যবদ্ধতা নেই। ফলে ধরে নেয়া যেতে পারে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানে ইউরোপ খুব বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেনা। তবে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স এবং বৃটেন যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের বিরুদ্ধে নৈতিক সমর্থন দিয়ে থাকে। এবং মাঝে মাঝে সামরিক শক্তি প্রদর্শনে দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর সাথে মহড়ায়ও অংশ নেয়। তবে মহড়ায় অংশ নেওয়াই যে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল এরকম মনে করার কোনো কারণ নেই। রাজনৈতিক আচরণ বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন , চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোপের মনোভাব যথেষ্ট নমনীয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আচরণ বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থাৎ, তারা নয়া বিশ্বব্যাবস্থায় নয়া স্নায়ুযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন। কিন্তু নিঃসন্দেহে বলা যায়, এই যুদ্ধে ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধভাবে পাওয়া যাবেনা। কারণ চীন এখানে খুব ভালোভাবেই কৌশলগত এক খেলা খেলে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপের একক বৃহৎ বাজারে পরিণত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ভালোই টক্কর দিতে সমর্থ হয়েছে চীন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার গুটিকয়েক মিত্র যদি চীনকে চূড়ান্তভাবে উস্কে দেয় তাহলে চীনও অল্পের উপর দিয়ে ছেড়ে দিবেনা বলেই ধারণা করা যায়। কারণ চীন এখন অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে ইউরোপের যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি শক্তিশালী।
অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে টক্কর দেয়ার মত সক্ষমতা ইতোমধ্যেই চীন অর্জন করেছে। এছাড়া চীনের রয়েছে উপনিবেশিক শাসন-শোষণের এক দীর্ঘ ইতিহাস। সতের শতকে বৃটেনের বণিকরা চীনে বাণিজ্যের জন্য পাড়ি জমিয়ে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তুলেছিলো। ১৮৪২ সালের অপমানসূচক নানকিং চুক্তির কথা চীন ভুলে যায়নি, যার মাধ্যমে হংকং কে হারাতে হয়েছিলো চীনের। এছাড়া চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর ১৯৪৯ সালে দেশটির রাজনৈতিক দল কুয়োমিনতাং নেতা ও তৎকালীন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান চিয়াং কাই শেক যখন তাইওয়ানে আশ্রয় নেয় তখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা চিয়াং কাই শেককে সমর্থন দিয়েছিলো। মূলত পশ্চিমাদের সমর্থনেই তাইওয়ানে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে, যা এখন চীনের সামনে বড় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীন মনে করে, পশ্চিমারা চীন ও তাইওয়ানের মাঝে এমন সমস্যার সৃষ্টি করে জাতীয় ঐক্যে আঘাত হেনেছে। সুতরাং, চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের তথা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো পরিকল্পনা বা আগ্রাসনের জবাবে চীন অবশ্যই বসে থাকবে না। দুইশত বা দেড়শত বছর আগে পশ্চিমাদের উপনিবেশিকতাবাদের এবং অপমানের জবাব দেয়ার পরিস্থিতিতে না থাকলেও এখন নিঃসন্দেহে চীনের দিন ফিরেছে।
- লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- ইমেইল: trisha.jannat1112@gmail.com