দেশ যেন তেলের খনি!

ঈদের ঠিক আগে ও পরে সারাদেশের খুচরা দোকানগুলোতে তেলের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়। কোথাও মিলছিলো না পাম ও সয়াবিন তেল। অথচ এখন যেন তেলের খনি পাওয়া গেছে। সে সময় দোকানে তেল না থাকলেও সারাদেশেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে বেরিয়ে আসছে ভোজ্যতেল। ঈদের পর থেকে মনিটরিং সংস্থাগুলোর অভিযানে ৫ লাখ লিটারের বেশি সয়াবিন ও পাম অয়েল উদ্ধার করা হয়েছে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বড় মজুদের খোঁজ পাওয়া গেল খুলনায়। র্যাব ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে তিনটি প্রতিষ্ঠানে মজুদ রাখা ২২২ টন ভোজ্যতেল উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া সোনালী এন্টারপ্রাইজে ২৬.৭৮ মেট্রিকটন সয়াবিন ও ৩১.৮০ মেট্রিকটন পাম অয়েল মজুদ পাওয়া যায়। এর দায়ে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী প্রদীপ সাহাকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রনজিত বিশ্বাস এন্ড সন্সে ৯.৫৮ মেট্রিকটন সয়াবিন ও ৫৯.৫৬ মেট্রিক টন পাম অয়েল পাওয়া যায়। এর দায়ে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী অজিত বিশ্বাসকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক বলেন, তিনটি দোকানে সব মিলিয়ে ২২২.০৮ টন তেল মজুদ পাওয়া গেছে। তিন দোকানিকে জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া আগামী তিন দিনের মধ্যে নির্ধারিত দামে এসব তেল বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ঢাকা সহ সারাদেশের ৩৬টি জেলা থেকে ২ লাখ ৬ হাজার লিটার তেল জব্দ করে তা বিতরণ করা হয়েছে। মজুদকারীদের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকার বেশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এছাড়া পুরনো দামের খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বাড়তি দামে বিক্রির অভিযোগে গাজীপুরের টঙ্গী বাজারের দুটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে টঙ্গী বাজারের মেসার্স তাহের এন্ড সন্স ও মেসার্স নোয়াখালী বাণিজ্য বিতানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় পাওয়া যায় ১২ হাজার ৬৪৮ লিটার ভোজ্যতেল। অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল।
আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, তাহের এন্ড সন্স থেকে পুরনো দরের ৬৭৩২ লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেল এবং মেসার্স নোয়াখালী বাণিজ্য বিতান থেকে পুরনো দরের ৫৯১৬ লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেল জব্দ করা হয়। এসময় উপস্থিত আগ্রহী ক্রেতাদের মাঝে পূর্বের দরে এক লিটার ১৬০ টাকা, দুই লিটার ৩১৮ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা ও পাম ১৩৩ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
এছাড়া নোয়াখালীতে দুটি প্রতিষ্ঠানে ৯০০ লিটারের বেশি এবং সিরাজগঞ্জে ৩৭ হাজার লিটার, পাবনায় ৭৫ হাজার লিটার তেলের মজুদ পাওয়া গেছে।
ঈদের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি দোকানিদের কাছ থেকে এসব তেলের মজুদ পাওয়া গেছে।
টিবিএসের খুলনা, রাজশাহী, পাবনা, প্রতিনিধিরা জানান, এখন যাদের কাছ থেকে তেল পাওয়া যাচ্ছে তারাই সংকটের সময়ে দোকানে তেল বিক্রি করেনি, মজুদ করে রেখেছিল বেশি দামের আশায়। যখন সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হলো তখনই এসব বাজারে ছাড়তে শুরু করে এবং জোরদার হওয়া অভিযানে তেলগুলো ধরা পড়ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, 'আমরা মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাবো। কারণ তারা সংকটকালীন সময়ে এসব তেল বিক্রি না করে মজুদ করেছিল।'