নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ: ছয় সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নাহিদ ও মুরসালীন হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজনদের মধ্যে ছয়জনকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ আটক করেছে। রবিবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদেরকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল বলে নিশ্চিত করেছেন ডিবির রমনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তবে, এদের কারো নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি ডিবি পুলিশ।
এদিকে, নাহিদ ও মুরসালীন হত্যায় জড়িতদের নাম-ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে চাপা আতঙ্কে হল ছাড়ছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিকে, রবিবার বিকালে ঢাকা কলেজে অভিযান পরিচালনা করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা।
রবিবার বিকেলে কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের ১০১ নম্বর কক্ষে অভিযান চালায় র্যাব। ঢাকা কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানান, অভিযান শেষে জহির হাসান জুয়েল নামের এক শিক্ষার্থীকে ও দুটি মোবাইল সেট নিয়ে যায় র্যাব। আটক জুয়েল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সবশেষ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত র্যাবের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ডিএমপির গোয়েন্দা রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার এইচএম আজীমুল হক টিবিএসকে বলেন নাহিদ ও মুরসালীন হত্যার ঘটনায় জড়িতদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নিরপরাধ কোন শিক্ষার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, এজন্য অনেককে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
গত সোমবার রাত ও মঙ্গলবার নিউমার্কেটের দোকানমালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এতে নাহিদ ও মুরসালীন নামে দুজনের প্রাণহানি এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় চারটি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে একটির প্রধান আসামি বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে আছেন।
এদিকে ঢাকা কলেজের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, 'কলেজে একটি তথ্য ছাড়িয়েছে তা কতটুকু সঠিক জানি না। তা হলো-যেকোনো সময় পুলিশ ঢাকা কলেজের হলগুলোতে অভিযান চালাতে পারে। তাই অনেকেই শনিবার রাত থেকে হল ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকেই সকালবেলা গেছেন। গত দুদিনের চাইতে আজকে চলে যাওয়ার হারটা বেশি।'
তিনি জানান, 'চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এবারের ঈদে বাড়িতে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু প্রতিদিন আব্বু-আম্মু ফোন দিচ্ছে চলে যাওয়ার জন্য। তারা খুব চিন্তায় আছেন তাই বাড়িতে চলে যাচ্ছি।'
তবে এর ঠিক উল্টো চিত্র নিউমার্কেেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে হল ছাড়লেও অনেকটা আগের মতোই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে আগের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় বেচাকেনায় কিছুটা ভাটা পড়েছে।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, 'আমাদের কাছে যে দাবির কথা বলা হয়েছিল তা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে পূরণ করছি। পর্যায়ক্রমে নিয়ম মেনে আমাদের সব কাজ চলছে।'
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে নাহিদ হত্যায় জড়িতরা হলেন—ইমন, মোনায়েম, কাওসার, রাব্বী, সাদিক মির্জা, জাকির ও সুজন। এরা সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়।
ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। তাই তারা ছাত্রলীগ কর্মী কিনা অবগত নয় বলে উল্লেখ করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফুয়াদ হাসান বলেন, 'অভিযুক্তরা আমাদের ব্লকের না। আমি কাউকে চিনি না। একাধিক গ্রুপ যেহেতু আছে তাই অন্যান্য গ্রুপের হয়ত হতে পারে। তবে আমি স্পষ্ট কিছু জানি না।'
ঢাকা কলেজে অভিযান চালানোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স. ম কাইয়ুম বলেন, 'আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্তের পাশাপাশি অভিযানও চলছে। তবে নির্দিষ্ট করে হলে কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।'