Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

বঙ্গোপসাগরে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে হাঙ্গর : সুরক্ষা শুধু কাগজে-কলমে

শিকার করা হাঙ্গরের জায়গা হয় মৎস সমবায় সমিতি মার্কেটের বিভিন্ন আড়তের ফ্রিজে। হাঙ্গরগুলো যেখানে নামানো হচ্ছিলো, তার ঠিক ২০ গজের মধ্যেই কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান।
বঙ্গোপসাগরে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে হাঙ্গর : সুরক্ষা শুধু কাগজে-কলমে

বাংলাদেশ

আবু আজাদ
19 April, 2022, 07:00 pm
Last modified: 19 April, 2022, 09:33 pm

Related News

  • বাংলাদেশের ডলফিন আর হাঙরের জন্য এক সুইস সামুদ্রিক সংরক্ষণবিদের ভালোবাসা
  • হাঙরের আক্রমণে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ অভিনেতার মৃত্যু
  • দৈত্যাকার বৈলাম: বিলুপ্তির হুমকিতে দেশের সবচেয়ে উঁচু গাছ
  • শীতলক্ষ্যার শুশুকরাও হারিয়ে যাবে! 
  • এদের বসবাস আমাদের মুখমণ্ডলেই! কারা এরা? বিলুপ্তির শঙ্কায় বংশবিস্তার করে চলেছে?

বঙ্গোপসাগরে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে হাঙ্গর : সুরক্ষা শুধু কাগজে-কলমে

শিকার করা হাঙ্গরের জায়গা হয় মৎস সমবায় সমিতি মার্কেটের বিভিন্ন আড়তের ফ্রিজে। হাঙ্গরগুলো যেখানে নামানো হচ্ছিলো, তার ঠিক ২০ গজের মধ্যেই কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান।
আবু আজাদ
19 April, 2022, 07:00 pm
Last modified: 19 April, 2022, 09:33 pm

সোমবার বিকেলে ৫ টা। কর্ণফূলী নদীর মোহনায় নোঙ্গর করে আছে সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার  জেকে-৩। জাহাজটির গা ঘেষে অবস্থান নেয় দুটি সাম্পান। কিছুক্ষণের মধ্যেই নানান সামুদ্রিক মাছে ভর্তি হয়ে যায় সাম্পান দুটি। 

এসব মাছের সঙ্গে সাম্পানে তোলা হয় পঞ্চাশটি হাঙ্গরও। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে একটি নাম্বার প্লেট বিহীন ট্রাকে করে সেই হাঙ্গর গুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম নগরের পুরাতন ফিসারিঘাট এলাকায়। 

পরের পনের মিনিটে ওসব হাঙ্গরের জায়গা হয় মৎস সমবায় সমিতি মার্কেটের বিভিন্ন আড়তের ফ্রিজে। 

হাঙ্গরগুলো যেখানে নামানো হচ্ছিলো, তার ঠিক ২০ গজের মধ্যেই কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান।

তিমি, ডলফিন, হাঙ্গর ও শাপলাপাতা (স্টিং-রে)সহ সামুদ্রিক মাছের নয়টি গণ এবং ৫২ টি প্রজাতি শিকার বাংলাদেশে আইনত নিষিদ্ধ হলেও বঙ্গোপসাগরে অবাধে চলছে হাঙ্গর শিকার। শিকার নিষিদ্ধ এ প্রানীটির তাজা মাংশ ও শুটকি কেনাবেচা-মজুদ হচ্ছে প্রকাশ্যেই। হাঙর ও রে মাছের পাখনা, ফুলকা প্লেট তরুণাস্থি, লিভার, লিভারের তেল চট্টগ্রাম থেকে মায়ানমার হয়ে পাচার হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। 

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ট্রাফিক'র একটি জরিপ অনুযায়ি, নিষিদ্ধ হলেও হাঙ্গর রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ২০তম। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, অবাধ শিকারের কারণে বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমাণ কমছে।

বাংলাদেশের জলসীমা থেকে এ পর্যন্ত ২২টি পরিবারের অন্তর্গত মোট ৪৬ প্রজাতির হাঙর ও ৫৮ প্রজাতির শাপলাপাতা মাছ রেকর্ড করা হয়েছে। সামুদ্রিক প্রাণীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী হাঙ্গর ও শাপলাপাতার ৩৬ শতাংশ বিলুপ্তির  ঝুঁকি রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আলিফা বিনতে হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রায় ৭০ হাজার জাহাজ প্রতিদিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার করছে। তাই একটি জালে যদি একটি হাঙ্গরও ধরা পরে তাহরে সেই সংখ্যা ৭০ হাজার। 

"কক্সবাজারের দিকে কয়েক বছর আগে ছয়-সাতটা ট্রলার ছিলো যারা বড়শি দিয়ে টার্গেট করে হাঙ্গর শিকার করতো। কিন্তু এখন সে সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।"

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে (২০১২) তিমি, ডলফিন, হাঙ্গর ও স্টিং-রেসহ সামুদ্রিক মাছের সুরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বন অধিদপ্তরকে।

অধিদপ্তরের প্রধান মোল্লা রেজাউল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বণ্যপ্রাণী আইন অমান্য করে বাংলাদেশে হাঙ্গর শিকার বহুদিন ধরেই হচ্ছে। সংঘবদ্ধভাবে একটা চক্র এই কাজটা করে আসছে। এখন হয়তো আরও সক্রিয় হচ্ছে। অভিযোগ আছে পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোতে হাঙ্গর পাচার করা হয়।

"মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী ও ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ ও ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সচেতন করতে পারলে হাঙ্গর বিলুপ্তির ঝুঁকি কমবে", বলেন মোল্লা রেজাউল করিম।

যে কারণে ঝুঁকিতে 

ওয়াইল্ড লাইফ কনজার্ভেশন সোসাইটির সিনিয়র ম্যানেজার এলিজাবেথ ফাহরিন মানসুর টিবিএসকে বলেন, সাগরের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় অন্যতম বড় ভূমিকা রাখে হাঙ্গর ও শাপলাপাতার মতো প্রজাতি। অতিরিক্ত আহরণে এসব প্রজাতি এখন সবচেয়ে হুমকীর মুখে। দেশে-বিদেশে অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায় জেলেরা দিন দিন হাঙ্গর ও শাপলাপাতা মাছ শিকারের দিকে ঝুঁকছে।

ছবি: মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন/টিবিএস

তিনি জানান, মূলত দেরীতে বাচ্চা ধারণে সক্ষম হওয়া, স্বল্প সংখ্যক বাচ্চা জন্ম দেওয়া এবং ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার কারণে এসব মাছের টিকে থাকার হুমকির সম্মুখীন।

গবেষকরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশ ছাড়াও সাতটি উন্নয়নশীল দেশ দ্বারা বেষ্টিত (বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড)। সামুদ্রিক সম্পদের উপর নির্ভরতার কারণে কয়েক দশক ধরে এই সমস্ত দেশ নজিরবিহীন নজরদারি মোতায়েন করেছে। এ অবস্থায় বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে কয়েক দশক ধরে সামুদ্রিক সম্পদের অত্যধিক মাছ ধরার কারণে সাগর থেকে হাঙ্গর ও শাপলাপাতা মাছ বিলুপ্তির ঝুঁকি তৈরী হয়েছে।

চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য দপ্তরের সাবেক সহকারী পরিচালক বিক্রম জীৎ রায় বলেন, "১০ বছর আগেও বাংলাদেশে যে সংখ্যায় হাঙ্গর ছিল, এখন তা অনেক কমে এসেছে। মূলত বছর দুয়েক ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে হাঙ্গর ও স্টিং-রে শিকারের প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে বড় আকারের হাঙ্গর প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।"

'শার্ক ফিশারিজ ইন দ্য বে অব বেঙ্গল, বাংলাদেশ: স্ট্যাটাস অ্যান্ড পটেনশিয়ালিটিজ' শিরোনামে তার রচিত গবেষণা নিবন্ধ বিক্রম জীৎ রায় উল্লেখ করেছেন,

''একসময় ১৫০-২০০টি যান্ত্রিক যানে বাণিজ্যিকভাবে হাঙ্গর আহরণ করা হতো। জাল ও বড়শির সাহায্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বরগুনা জেলার সাগর উপকূলে বাণিজ্যিকভাবে হাঙ্গর ধরা হতো। তখন বাণিজ্যিকভাবে হাঙ্গরের মাংস, চামড়া, পাখনা রপ্তানি হতো। সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে বেশ চাহিদা ছিল,''

২০০৮-২০০৯ সালে বাংলাদেশে ৩,৯৩৩ মেট্রিকটন হাঙ্গর ধরা হয়েছিল। তবে এর পরে দেশে হাঙ্গর শিকারের কোনো জরিপ হয়নি বলে জানান তিনি।

২০১৭ সালে পরিচালিত এক জরিপ অনুসারে বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে সালে ৬৭ হাজার,৬৬৯ টি নৌকা এবং ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭০৭ মাছ ধরার জাল চালু রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে যান্ত্রিক, অ-যান্ত্রিক এবং শিল্প ট্রলারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা অতিরিক্ত মাছ ধরার প্রাথমিক কারণ। যার ফলে হাঙ্গরসহ বিপন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

এমভি শাহ আমানত ফিসিং ট্রলারের জেলে বদিউল আলম টিবিএসকে বলেন, "একটা সময় ছিল যখন আমি পাঁচ থেকে ছয় দিনে কমপক্ষে এক হাজার হাঙ্গর ও শাপলাপাতা মাছ ধরতে পারতাম, সেখানে এখন আমি সাত দিন সাগরে থেকেও একটি হাঙ্গর পাচ্ছি না। এতে আমরা প্রচুর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। ট্রলার মালিকদের কাছে জরিমানা গুনতে হচ্ছে।"

সুরক্ষা শুধু কাগজে-কলমে 

বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী ও মাছ সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি আইন হল মাছের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ এবং বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২। ১৯৫০ সালের আইনে হাঙ্গর এবং স্টিং-রে রক্ষার কোনো বিধান ছিলোনা। ২০১২ সালের আইনে ২৩ টি সামুদ্রিক মাছের সুরক্ষার কথা বলা হয়। 

সেই আইন বিদ্যমান থাকা অবস্থায় হাঙ্গর ও শাপলাপাতা মাছ ধরার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল সংশোধন করে বিপন্ন হাঙ্গর ও রে মাছের ৫২ প্রজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আইনের ৩৯ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসব প্রাণী আহরণ ও বিক্রির অভিযোগ প্রমানীত হলে তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। কোন ব্যক্তি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। এমনকি এ অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারী বা প্ররোচনাকারীও নির্ধারিত দন্ডে দন্ডিত হবেন।

তবে হাঙ্গর ও স্টিং-রে সুরক্ষার একসব আইন শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। হাঙ্গর সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা বন অধিদপ্তরের এ নিয়ে দৃশ্যমান কোনো কাজ নেই। এই সুযোগ নিচ্ছে জেলে, ব্যবসায়ি ও পাচারকারীরা। বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার উপকূল রেখার প্রায় পুরোটা জুড়েই চলছে হাঙ্গর নিধন। সাগর পথে সে সব হাঙ্গর আসছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন মাছের আড়তে ও শুটকিপল্লিতে।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজার্ভেশন সোসাইটির সিনিয়র ম্যানেজার এলিজাবেথ ফাহরিন মানসুর টিবিএসকে বলেন, "২০১২ সালের আইনে হাঙ্গর ও রে মাছের ২৩টি প্রজাতিকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ আইনের ফাঁক দিয়ে অনেকেই হাঙ্গরসহ বিভিন্ন মাছ অবৈধভাবে রপ্তানি করে আসছিলো। সুরক্ষায় নতুন আইন হলেও প্রয়োগ না থাকায় অবস্থার উন্নতি হয়নি।" - বলেন অ্যালিজাবেথ ফাহরিন মানসুর।

নিষিদ্ধ হাঙ্গর ও শালপাতা বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে 

সরকারি নথিভুক্ত ১১ হাজার ৩৬৫ টি ফিসিং বোটসহ প্রায় ৭০ হাজার নৌ-যান নিয়মিত বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করছে। কয়েক বছর আগেও হাঙ্গর বা রে মাছ জালে পড়লেই শুধু ধরতেন জেলেরা।

এখন সময় বদলেছে; বাণিজ্যিক মূল্য বাড়ায় নির্দিষ্টভাব এগুলো শিকারের জন্যই সাগরে ছুটছেন শিকারিরা।

ছবি: মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন/টিবিএস

নতুন ফিসারিঘাট এলাকার জেলে প্রফুল্ল জলদাশ টিবিএসকে বলেন, ‍‍"আগে টার্গেট করে হাঙ্গর মাছ ধরা হয়নি। হাঙ্গর-ডরফিন জালে আসলে আসলে ছেড়ে দেওয়া হতো। এখন অনেক ট্রলার হাঙ্গর বা অন্যান্য বড় মাছ শিকারের জন্য বড় লোহার হুক সাগরে নিয়ে যায়।"

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জে.কে -৩, সি-হার্ট, লাবিবা শিপিং, সি-ফুডসহ প্রায় ৪০ টি জাহাজ ও ১০ হাজার ট্রলার প্রতিদিনই অন্যান্য মাছের সঙ্গে হাঙ্গর ও শাপলাপাতা (স্টিং-রে) নিয়ে আসে। সাগর থেকে আসা এসব হাঙ্গরের ঠাই হয় চট্টগ্রাম নগরের মাঝিরঘাটের সবচেয়ে বড় কর্ণফূলি স্টোরেজ,আল্লাহর দান স্টোরেজ, শাহ আজিজ স্টোরেজসহ কর্ণফূলী নদীর দুই তীরের অন্তত ৩০ টি মাছের আড়তে। যেখানে সর্বোচ্চ ১০ টন ওজনের হাঙ্গরও কিনতে পাওয়া যায়।

সোমবার সন্ধ্যায় কর্ণফূলি স্টোরেজে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যেই হাঙ্গর ক্রয় করছেন। আকার ভেদে কেজি প্রতি ২০০ টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে হাঙ্গর। এ সময় হাঙ্গর বিক্রেতা জয় এন্টারপ্রাইজের সত্বাধীকারী সুব্রতের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "জেলেদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। হাঙ্গর শিকার হলেই তারা আমাদের কাছে নিয়ে আসে। এখান থেকে সারাদেশে পাঠানো হয়।"

হাঙ্গর বিক্রিতে কোনো বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে সুব্রত বলেন, ‍‍‍‍"এখানেই বছরের পর বছর ধরে হাঙ্গরের ব্যবসা করছি। কখনো পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থা অভিযান পরিচালনা করেনি।" এসময় তিনি নিজেই হাঙ্গর ভর্তি স্টোরেজটি এই প্রতিবেদককে ঘুড়িয়ে দেখান।

শাহ আজিজ স্টোরেজের কর্মচারি নুরুল আলম বলেন, "বেশ কিছু জাহাজ রয়েছে যারা শুধু হাঙ্গর শিকার করে। জাহাজ গুলো ১২ তেকে ১৫ দিন পরপর হাঙ্গর, করাত মাছ ও শাপলাপাতা নিয়ে ফেরে। প্রথমে স্টোরেজ করার পর এসব মাছ নগরের নতুন ও পুরাতন ফিশারী ঘাট এলাকায় পাঠানো হয়; মূলত সেখানেই হয় হাঙ্গরের বেচাকেনা।"

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামে অঞ্চলের বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেন, প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে তাঁরা অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে সাত মাসে পরিচালিত অভিযানের সংখ্য মাত্র তিনটি।

তবে বন সংরক্ষক প্রধান মোল্লা রেজাউল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্থানীয় ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সব ধরনের নির্দেশ দেওয়া আছে। তিনি চাইলেই র‌্যাব-পুলিশ বা কোস্টগার্ডকে ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। এটা কেন হচ্ছেনা বিষয়টি তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে।"

কালোবাজারে বাংলাদেশি হাঙ্গরের পাখনা 

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ট্রাফিক'র একটি জরিপ অনুযায়ি, পৃথিবী জুড়ে শীর্ষ ২০ দেশে প্রতি বছর তিন লাখ ৩৩ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন হাঙ্গর ও রে ফিশ ধরা পড়ছে। তাদের হিসেবে হাঙ্গর ও রে ফিশের ১৭ শতাংশই রয়েছে 'অতি বিপন্ন' তালিকায়।

হাঙ্গর রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ২০তম। প্রাণী বিষয়ক আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইউসিএনের রেড লিস্টেও উঠে এসেছে বিষয়টি।

ছবি: মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন/টিবিএস

সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের উপ পরিচালক আবদুর রউফ বলেন বলেন, "দেশে কিছু কিছু এলাকার মানুষ হাঙ্গরের মাংস ও শুটকি খেতে পছন্দ করে। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে হাঙ্গরের মাংস, পাখনা, চামড়া এবং হাড় রপ্তানী হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।" 

ব্যবসায়িরা জানান, হাঙ্গর ও স্টিং-রে প্রক্রিয়াকরণের সময় এসবের কোনো অংশই ফেলে দেওয়া হয় না। এর মধ্যে রয়েছে তাজা এবং শুকনো মাংস, চামড়া, কশেরুকা, চোয়াল, দাঁত, পাখনা, শুকনো গোটা মাছ, অন্ত্র, করাত মাছের রোস্ট্রাম, লিভার এবং লিভারের তেল এবং মবুলিড রে ফিস প্লেট। এসবের প্রায় সব পণ্যই রপ্তানি করা হয়। অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হয় হাঙ্গর শুটকি, লিভারের তেল, হাড়, চোয়াল, দাঁত এবং অন্ত্র।

চট্টগ্রামে পুরাতন ফিসারিঘাট এলাকার মাছের আড়ত গুলোতে সরেজমিন ঘুড়ে দেখা গেছে, এসব আড়তের ফ্রিজ গুলোতে সংরক্ষিত হাঙ্গরের সবগুলোরই পাখনা ও লেজ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়িরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে হাঙ্গরের পাখনা ও লেজ দেশে থাকে না, পাচার হয়ে যায়।

জাপানী এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধীকারী সুধাংশু দাশ (জাপানী) বলেন, "৫০ বছর ধরে হাঙ্গর ও শাপলাপাতা বিক্রি করছি। এটি বিক্রি যে নিষিদ্ধ সে সম্পর্কে কেউ আমাদের কখনো বলেনি। ধর্মীয় কারণে এই পণ্যগুলি খাওয়া মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ। তবে  উপজাতীয় লোকদের জন্য নির্বাচিত বিক্রেতাদের মাধ্যমে পাহাড়ে শুটকি পাঠানো হয়। পাখনাসহ বাকি সব কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও বড় বাজার রয়েছে।"

ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের পটুয়াখালী এলাকার গবেষণা সহযোগী সাগরিকা স্মৃতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‍‍"পটুয়াখালী, সোনাদিয়া, দুলারচর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলে হাঙ্গর শিকার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এখানে শিকার হওয়া হাঙ্গর ও শাপলাপাতা মাছ যাচ্ছে চট্টগ্রামে। সেখান থেকে মিয়ানমার হয়ে বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন রাজনৈতিক ব্যাক্তি ও অসাধু ব্যবসায়ীরা জড়িত।"

চট্টগ্রামের নগরের বাকলিয়া থানার বাস্তুহারা এলাকায় হাঙ্গর প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখতে গেলে প্রথমে ব্যবসায়ীরা বিষয়টি আড়ালে রাখতে চেষ্টা করেন। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ব্যবসায়ি এই প্রতিবেদককে বলেন, "গোপনে চট্টগ্রাম থেকে হাঙ্গারের শুকনো অন্ত্র, হাতুড়ির মাথা, কশেরুকা, চোয়াল, দাঁত, স্নাউটস, পাখনা, শুকনো মাংস, তরুণাস্থি, লিভার, লিভার তেল, তাজা মাংস বিদেশে পাচার করা হয়।"

আসাদগঞ্জের শুটকি ব্যবসায়ি আকবর হাসান বলেন, "স্থানীয় ভাবে যারা হাঙ্গর বিক্রি করছে বা শুটকি করছে তারা কেউ এসব বিদেশে রপ্তানী বা পাচারের সঙ্গে জড়িত না। অনেক বড় বড় পার্টি আছে যারা সরাসরি বা দালালের মাধ্যমে হাঙ্গর সংগ্রহ করে। তারাই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে মায়ানমার পাচার করেছে।"

"অবজারভেশনস অব শার্ক অ্যান্ড রে প্রোডাক্টস ইন দ্য প্রসেসিং সেন্টারস অব বাংলাদেশ, ট্রেড ইন সাইটস স্পিসিস অ্যান্ড কনজারভেশন নিডেড" শিরোনামে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারনেট অনুসন্ধানে বাংলাদেশে হাঙ্গরের মাংস এবং যকৃতের তেলের ব্যবসা সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে। এসব হাঙ্গর লিভার অয়েল, কার্টিলেজ এবং বিভিন্ন কিউরির বিশ্বব্যাপী ভোক্তা এবং সংগ্রাহক রয়েছে। তবে বাংলাদেশের জেলেদের এই অনলাইন ব্যবসায়িক পরিষেবাগুলির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন। মূলত একটি সুবিধাবাদী গোষ্টি এই জাতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়। তারাই কালোবাজারে হাঙ্গরের মাংস, পাখনা এবং চামড়া সরবরাহ করছে।

বাংলাদেশি হাঙ্গরের পাখনা দিয়ে তৈরী সূপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনে। এছাড়া হাঙ্গর পাচার হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।

ছবি: মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন/টিবিএস

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এর গবেষক আলিফা বিনতে হক বলেন, "আমরা অনেক জেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে না চাইলেও জালে হাঙ্গর ধরা পরে। সেই হাঙ্গর যখন ঘাটে আসে তখন এর একটি দাম তৈরী হয়। কিন্তু অনিচছায় শিকার করা এই মাছের জন্য দরিদ্র জেলেকে জরিমানা করা হয়, তাহলে সে মাছটি সাগরে ফেলে আসবে। যে মানুষটা ৪০ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছে তাকে হটাৎ করে জরিমানা করা হলে বিষয়টি অস্বাভাবিক হবে।"

"যেখানে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে ইতিমধ্যে হাঙ্গরের একটি বাজার রয়েছে। বেশ ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এটি বন্ধ রাখা যাবে না। অন্যথায় বাজারটি কালোবাজারিদের হাতে চলে যাবে। তার চেয়ে হাঙ্গরের যে প্রজাতী গুলো ট্রেড করা যাবে তা নিয়ে জেলেদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। তাই হাঙ্গর ও শাপলাপাতা রক্ষায় শুধু মাত্র আইন প্রয়োগের চিন্তা না করে কিভাবে সাগরে শিকার নিষিদ্ধ হাঙ্গরকে রক্ষা করে বাকি মাছ শিকার করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ বাঘ সুরক্ষা আর হাঙ্গর সুরক্ষা এক নয়।"

Related Topics

টপ নিউজ

হাঙ্গর / হাঙ্গর শিকার / বিলুপ্তির হুমকি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বরিশাল রুটের বিলাসবহুল বাসে আগুন কেন লাগছে! 
  • ‘আমাদের সমস্যা তো চীন এসে ঠিক করে দেবে না’: বুয়েট শিক্ষকদের ডিজাইনে নিরাপদ অটোরিকশা
  • ‘আমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই’: দুবাইতে মেয়ের ফ্ল্যাট নিয়ে জয়ের অভিযোগের জবাবে গভর্নর
  • ফ্রোজেন শোল্ডার: এক বাস্তব শারীরিক সমস্যা, যা বেশি ভোগায় নারীদের
  • ‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর
  • বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল

Related News

  • বাংলাদেশের ডলফিন আর হাঙরের জন্য এক সুইস সামুদ্রিক সংরক্ষণবিদের ভালোবাসা
  • হাঙরের আক্রমণে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ অভিনেতার মৃত্যু
  • দৈত্যাকার বৈলাম: বিলুপ্তির হুমকিতে দেশের সবচেয়ে উঁচু গাছ
  • শীতলক্ষ্যার শুশুকরাও হারিয়ে যাবে! 
  • এদের বসবাস আমাদের মুখমণ্ডলেই! কারা এরা? বিলুপ্তির শঙ্কায় বংশবিস্তার করে চলেছে?

Most Read

1
বাংলাদেশ

বরিশাল রুটের বিলাসবহুল বাসে আগুন কেন লাগছে! 

2
ফিচার

‘আমাদের সমস্যা তো চীন এসে ঠিক করে দেবে না’: বুয়েট শিক্ষকদের ডিজাইনে নিরাপদ অটোরিকশা

3
বাংলাদেশ

‘আমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই’: দুবাইতে মেয়ের ফ্ল্যাট নিয়ে জয়ের অভিযোগের জবাবে গভর্নর

4
আন্তর্জাতিক

ফ্রোজেন শোল্ডার: এক বাস্তব শারীরিক সমস্যা, যা বেশি ভোগায় নারীদের

5
বাংলাদেশ

‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর

6
বাংলাদেশ

বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab