ধারণক্ষমতার প্রায় ৯০% কন্টেইনার জমেছে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে সপ্তাহের শুক্র, শনি, রবি ও অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও এই সময়ে আমদানিকারকরা কন্টেইনার ডেলিভারি নেয়নি।
ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে বাড়তে থাকে কন্টেইনার সংখ্যা। বর্তমানে বন্দর ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার ৮৮ দশমিক ২৫ শতাংশ কন্টেইনার রয়েছে।
বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ধারণক্ষমতার ১৫ শতাংশ খালি রাখতে হয়। স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ৩ দশমিক ২৫ ভাগ বেশি কন্টেইনার রয়েছে বন্দরে। ডেলিভারি না বাড়লে বন্দর ইয়ার্ডে জটের সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করছে বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬ জানুয়ারি আবারো চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম গতিশীল রাখতে শিল্পের কাঁচামাল, বিপদজনক পণ্যের এফসিএল (ফুল কন্টেইনার লোড) কন্টেইনার, কার্গো দ্রুত ডেলিভারি নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই চিঠিতে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কন্টেইনার ডেলিভারির উপর বন্দরের প্রোডাক্টিভিটি নির্ভর করে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকলেও শুক্র, শনি ও রবিবার সহ অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনগুলোতে কন্টেইনার ডেলিভারির পরিমাণ কমে যায়। ফলে ইয়ার্ডে আমদানি কন্টেইনারের স্তুপ জমে যায়।
এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ৯ আগস্ট এবং ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সহ বিভিন্ন সংগঠনকে বন্দর ইয়ার্ড থেকে দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলো।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, স্বাভাবিক দিনগুলোর তুলনায় শুক্র, শনি ও রবিবারে চট্টগ্রাম বন্দরে ডেলিভারি এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসে। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি একইভাবে সচল থাকে তাহলে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হতো। বিষয়টি বারবার চিঠি দিয়ে আমদানিকারকদের অবহিত করা হচ্ছে।
তবে আমদানিকারকরা বলছে, সপ্তাহের শুক্র, শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চললেও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অফিস বন্ধ থাকে। তাছাড়া ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ থাকে। এ কারণে ছুটির দিনে পণ্য ডেলিভারি কমে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে ১৪ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট)। ১০ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে মোট কন্টেইনার ছিলো ৪৩ হাজার ২৬১ টিইইউএস কন্টেইনার।
ছুটির দিন ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। আর শুক্র, শনি, রবিবার ডেলিভারি ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার কন্টেইনার। গত ১০ জানুয়ারি ডেলিভারি হয়েছে ৩ হাজার ৪২৯ টিইইউস কন্টেইনার।
কন্টেইনারযোগে আমদানি হওয়া ৩৮ ধরনের খাদ্যপণ্য সহ অন্যান্য পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় বেসরকারি ডিপো থেকে। এছাড়া বাকি সব ধরনের আমদানি পণ্য ডেলিভারি হয় ইয়ার্ড থেকে।
গত ৬ জানুয়ারি বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএকে দেওয়া চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে, পোশাক শিল্পের কাঁচামালের এফসিএল কন্টেইনার, এলসিএল (লেস দ্যান কন্টেইনার লোড) কার্গো সপ্তাহের অন্যান্য দিনের ন্যায় শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার দিনগুলোতে দ্রুত ডেলিভারি নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিলো। কিন্তু আপনাদের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। গত ২ মাস যাবত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত এফসিএল/এলসিএল কন্টেইনার ও কার্গোর ডেলিভারি তুলনামূলক কম হচ্ছে। সপ্তাহের তিনদিন অর্থাৎ শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবারে পণ্য খালাস নেয়ার হার একেবারেই কম।
বেশি পরিমাণ এফসিএল কন্টেইনার ইয়ার্ডে জমে থাকায় এবং এলসিএল কার্গো সিএফএস শেডে থাকায় অপারেশনাল কার্যক্রমে বিঘ্ন হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগত কন্টেইনারবাহী জাহাজ হতে কন্টেইনার লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রম গতিশীল ও স্বাভাবিক রাখা এবং দেশের পণ্যের সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে ইয়ার্ড এবং সিএফএস শেড এ রক্ষিত পণ্য চালানের ডেলিভারি বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, বিপদজনক পণ্যের এফসিএল-এলসিএল কার্গো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি গ্রহণ ত্বরান্বিত করা হলে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আরো বেশি পরিমাণে জাহাজ, কন্টেইনার এবং পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে। যা বর্তমান সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বিজিএমইএর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, যেসব আমদানিকারক বৃহস্পতিবারের মধ্যে ব্যাংক থেকে কাগজপত্র ক্লিয়ারেন্স নিতে পারে কেবল তারাই শুক্র ও শনিবার পণ্য ডেলিভারি নেয়। ছুটির দিনে কন্টেইনার ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হলে বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও শতভাগ চালু থাকতে হবে। তাছাড়া আমদানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও এই সময়ে খোলা রাখা কঠিন। ফলে আমদানিকারকদের মাঝে ছুটির দিনে কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়ার প্রবণতা কম দেখা যায়।