গণঅভ্যুত্থান-কেন্দ্রীক জাতীয় ঐক্যে ফাটল ও বিভাজন তৈরী হয়েছে: নুরুল হক নুর

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য তৈরী হলেও— তাতে এখন ফাটল ধরে বিভাজন তৈরী হয়েছে। যা এই মুহুর্তে কাম্য ছিল না।
আজ শনিবার (১ মার্চ) এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকারের জনআকাঙ্খা তৈরী হলেও দেশি- বিদেশি অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের কারণে তা হয়নি। একটি নির্দিষ্ট বলয়কেন্দ্রীক সরকার গঠন হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের চলমান সংকট ও সামগ্রিক পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চারটি দাবি তুলে ধরেন নুর।
দাবিগুলো হচ্ছে– জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষধ পুনর্গঠন, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা ও পুর্নবাসন এবং শহীদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ, গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রসংষ্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
এসময় জুলাই গণঅভ্যুথানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত তরুণদের নতুন দলকে স্বাগত জানান তিনি।
নুর দাবি করেন, "গণঅভ্যুথানকে ঘিরে গুটিকয়েক ছাত্রনেতা সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে— প্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জনগণের মধ্যে অস্বস্তি তৈরী হয়েছে। যেহেতু আন্দোলনের পরিচিত মুখ থেকে সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে – সেহেতু সরকারের নিরেপেক্ষতা বজায় রাখা, এবং জনগণসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আস্থা ধরে রাখতে — সরকারে থাকা অন্য দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্ব সকল ছাত্রদের পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।"
তিনি বলেন, "আমরা বারবার বলে আসছি, ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গণঅভ্যুত্থানের সরকারের ব্যর্থতা জাতিকে নতুন বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।"
গত ৬ মাসে গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের দুর্বলতায় গণহত্যাকারীদের পুনর্বাসন হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ জনগণের নিরাপত্তা ও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে নতুন সংকট তৈরী হচ্ছে। যার ইঙ্গিত সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে দিয়েছেন।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, গণঅভ্যুত্থান-কেন্দ্রীক নতুন রাজনীতি ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে জনআকাঙ্খা তৈরী হয়েছে তার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংষ্কার জরুরী বলে আমরা মনে করছি।
"আন্দোলন-কেন্দ্রীক সেন্টিমেন্টের জায়গায় থেকে ছাত্র নেতৃবৃন্দ যদি পুরনো পথেই হাঁটেন— তবে সেটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য গত ছয়মাসে সেটিই অবলোকন করা গেছে। আন্দোলনকেন্দ্রীক পরিচিত ছাত্রনেতাদের তদবির, নিয়োগ, ট্রেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের অসংখ্য ঘটনা স্যোসাল মিডিয়া, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে," নুর দাবি করেন।
এমনকি গতকালকের নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে লোকবল আনতে নোটিশ প্রদান করা, গাড়ি সরবরাহে মালিকপক্ষ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের চাপ প্রয়োগ করা হয়— যা সম্পুর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো একক সংগঠন বা নেতৃবৃন্দ দ্বারা হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সময়োপযোগী পদক্ষেপে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। কাজেই জুলাই গণঅভ্যূত্থানকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী চেতনার মতো বিভ্রান্তমূলক ন্যারেটিভ (বয়ান) তৈরী না করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।