কারখানা বন্ধ না করে সরকারের কাছে ৪০০ কোটি ঋণের অনুরোধ বেক্সিমকোর

শ্রমিক-কর্মচারীদের দেনা-পাওনা বাবদ ৫৫০-৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করে বেক্সিমকো টেক্সটাইল ডিভিশনের আওতাধীন কারখানাগুলো বন্ধ না করতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বেক্সিমকো টেক্সটাইলস।
একইসঙ্গে গড়ে প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা হারে মোট ৪০০ কোটি টাকা সিসি লোন সহায়তা দিলে শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করে কারখানাগুলো পুরোদমে চালু রাখতে পারবে বলে জানিয়েছে আলোচিত গ্রুপটি।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান কায়সার চৌধুরী বেক্সিমকো টেক্সটাইল বিভাগের রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছে এ আবেদন করেছেন।
এম সাখাওয়াত হোসেনে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির প্রধান।
এদিকে, চলতি মাসের মধ্যেই শ্রমিক-কর্মচারীদের সকল দেনা-পাওনা পরিশোধের পর বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্কের লে-অফ করা কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বেক্সিমকো টেক্সটাইল ডিভিশনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত রিসিভার।
এর আগে, গত ৩০ জানুয়ারি বেক্সিমকো টেক্সটাইলস শ্রম উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে রপ্তানি সচল রাখার জন্য ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা চালু করা এবং ৪০০ কোটি টাকা সিসি লোন সুবিধা চায়।
গত রোববার পাঠানো চিঠিতে বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, শ্রমিকদের দেনা-পাওনা পরিশোধ করে কারখানা বন্ধ করতে ৫৫০-৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে, আগামী চার মাসে মোট ৪০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা চালু করা হলে কারখানাগুলো পুরোদমে চালু রাখা সম্ভব হবে।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, 'এলসির পাশাপাশি, ধাপে ধাপে ৪০০ কোটি টাকার নগদ-ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমরা সকলেই একটি বড় সংকট থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হব।'
'আমাদের স্টেকহোল্ডাররা যেন আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেন, তার পদক্ষেপ হিসেবে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে আমরা আপনার যেকোনো যুক্তিসঙ্গত পরামর্শ গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছি,' উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
সরকার ও ঋণদাতা ব্যাংকের সহযোগিতায় বহুবছর ধরে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই শিল্প পার্ক গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে বেক্সিমকো গ্রুপ বলেছে, 'স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমাদের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং অতীতে আমরা যেই প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, তার কারণে আজ এই প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের মুখে পড়েছে এবং আমাদের ওপর অনাস্থ তৈরি হয়েছে। তবে, আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, মাঝেমাঝে এই প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্যও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।'
বেক্সিমকো গ্রুপ চিঠিতে দাবি করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক উভয়ই বেক্সিমকো টেক্সটাইল বিভাগের অধীনে মোট ৩১টি কারখানা বিবেচনা করে এবং এই সবগুলো কারখানার ভৌত অবকাঠামো এবং পরিচালনা ব্যবস্থা রয়েছে।
এসব কারখানার বিপরীতে জনতা ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ ২৮,০০০ কোটি টাকা। কিন্তু বেক্সিমকো টেক্সটাইল বিভাগের ঋণের পরিমাণ ভুলভাবে ৪৫,০০০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হচ্ছে।
চিঠিতে বেক্সিমকো গ্রুপ বলেছে, সিঙ্গেল গ্রাহক হিসেবে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বেক্সিমকো টেক্সটাইল ডিভিশন বহুবছর ধরে সর্বোচ্চ রপ্তানি করছে। গত ছয় বছরে প্রতিমাসে গড়ে রপ্তানির পরিমাণ ৩২ মিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে প্রতিমাসে গড়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৯ মিলিয়ন ডলার।
গ্রুপটির হিসাব মতে, গত জুলাই মাসে বেক্সিমকো টেক্সটাইলস ডিভিশনের কর্মরত শ্রমিক-কর্মকর্তা ছিল ৪৫,০০০– যা এখন কমে ৩৫,০০০ হয়েছে।