আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, আটক

রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের ছত্রভঙ্গ করতে আজ (১৩ ফেব্রুয়ারি) তাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। ১০ ফেব্রুয়ারিও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।
আজ সকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখা কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটকও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিয়োগের দাবিতে কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় আন্দোলন করে আসছেন তারা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ জোনের সহকারী কমিশনার মো. শাকিল বলেন, 'বিক্ষোভের কারণে সকাল থেকে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। দুপুর ২টার পর পুলিশ রাস্তা খালি করার জন্য শিক্ষকদের অনুরোধ করলেও শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।'

তিনি আরও বলেন, 'পরে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে এবং জোরপূর্বক স্থানটি খালি করে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা এরপর জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয়।'
এসময় কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে। তবে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
৯ বছর বয়সী জুমা তার মা জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে শাহবাগে এসেছে। জান্নাতুল ফেরদৌস সাত দিন ধরে অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে প্রতিবাদ করছেন।

শিশু জুমা বলে, 'আমার বাবা একটি বেসরকারি চাকরি করেন। সংসারের খরচ চালাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। আমার মা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছিলেন, আমরা আশা করেছিলাম আমাদের দুঃখ-দুর্দশা শেষ হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি, কারণ সরকার আমার মায়ের নিয়োগ আটকে দিয়েছে।'
জুমা শান্ত গলায় বলে, 'আমি সরকারের কাছে তার নিয়োগের জন্য আকুতি জানাচ্ছি।'
নিয়োগ বাতিলের আগে তারা ঢাকা (তৃতীয় পর্যায়ের নিয়োগ) ও চট্টগ্রাম (চতুর্থ পর্যায়) বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় পর্যায়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাতিল হওয়া ছয় হাজার ৫৩১ জনকে পুনরায়া নিয়োগের দাবি জানাচ্ছেন।
বিক্ষোভকারীদের মতে, সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও তৃতীয় ধাপের নিয়োগে দেরি এবং জটিলতা দেখা দিয়েছে।
১০ ফেব্রুয়ারি তারা শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে যেতে অস্বীকৃতি জানান।

এক পর্যায়ে আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৫৩১ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল করেন হাইকোর্ট।
মেধার ভিত্তিতে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।