মজুরি বাস্তবায়ন তদারকি করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা চায় নিম্নতম মজুরি বোর্ড

শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিম্নতম মজুরি বোর্ড মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে। দেশের আনুষ্ঠানিক খাতে মজুরি বাস্তবায়ন ভালোভাবে তদারকি করার লক্ষ্যে জরিমানা আরোপ এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা চেয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বোর্ড।
চিঠিতে বর্তমান শ্রম আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এই চিঠির একটি কপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর কাছে এসেছে।
বর্তমানে সরকার ৪২টি খাতে মজুরি বাস্তবায়ন করছে, যা মূলত আনুষ্ঠানিক খাত হিসেবে পরিচিত।
নিম্নতম মজুরি বোর্ড মজুরি পর্যালোচনা করে এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের সুপারিশ পাঠায়। মন্ত্রণালয় এসব সুপারিশ সরাসরি গ্রহণ করে বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু পরিবর্তন আনে। বোর্ডের বর্তমান দায়িত্বের বাইরে নিজস্ব কোনো কর্তৃত্ব নেই।
প্রাথমিকভাবে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শ্রম বিভাগ শ্রম-সম্পর্কিত অনিয়ম এবং মজুরি বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে।
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও, বোর্ডের কর্তৃত্ব এখনও সীমিত।
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মজুরি বোর্ড যেহেতু মজুরির সুপারিশ করে, সেজন্য মজুরি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না, তা দেখার ক্ষমতাও বোর্ডের হাতে থাকলে বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। এ জন্য দপ্তরের হাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা চেয়ে চেয়ারম্যান মহোদয় শ্রম মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।"
শ্রম আইন সংশোধনের লক্ষ্যে মজুরি বোর্ডের ওই প্রস্তাবে বলা হয়, "মজুরি হার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্নতম মজুরি বোর্ড সারা দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করার দায়িত্ব পালন করবে।"
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, "গেজেট অনুযায়ী মজুরি, সুবিধা এবং আনুতোষিক প্রদান করা হচ্ছে কি-না, তা যাচাই ও নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন বোর্ডের চেয়ারম্যান।"
এতে আরও বলা হয়, "মোবাইল কোর্টের অভিযানের সময় অপরাধ শনাক্ত হলে, বোর্ডের কাছে জরিমানা করার ক্ষমতা থাকবে।"
এছাড়া, প্রস্তাবে নয়টি সংশোধনীর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে; যার মধ্যে রয়েছে– বোর্ডের কোনো সদস্য পদত্যাগ করলে, বিদেশ চলে গেলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে দুই মাসের মধ্যে নতুন সদস্য নিয়োগ দেওয়া।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার নিম্নতম মজুরি বোর্ডকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে তিনি বলেন, "যেহেতু এই প্রতিষ্ঠান মজুরির সুপারিশ করে, সেজন্য তাদের হাতে মনিটরিংয়ের ক্ষমতা, অভিযোগ নেওয়া এবং মামলা করার ক্ষমতা থাকা উচিত।"
তিনি আরও বলেন, "৪২টি সেক্টরের মজুরি পর্যালোচনা করা এই প্রতিষ্ঠানের তেমন কোন লজিস্টিকস সাপোর্ট নেই, নেই জনবলও। এগুলো বাড়ানোর পাশাপাশি শক্তিশালী গবেষণা সেল থাকা দরকার। বর্তমানে বোর্ডকে তথ্যের জন্য অন্য প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়।"
মজুরি বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, বোর্ডের নিজস্ব অফিস নেই। মাত্র ১০ জন কর্মী নিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবন নামে একটি বড় ভবন থাকার পরেও, সেখানে মজুরি বোর্ডের কোনো নিজস্ব স্থান নেই।
কয়েকবছর একটি জরাজীর্ণ ভবন থেকে কার্যক্রম চালানোর পর, এ বছরের শুরুতে শ্রম ভবনের কাছে একটি ভাড়া করা ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে বোর্ড। শুধু চেয়ারম্যানের ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি রয়েছে বোর্ডের। কিন্তু সেটিও শুধু ঢাকার অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য।
পরিবহনসহ নিজস্ব লজিস্টিকস না থাকায়, মজুরি পর্যালোচনা ও শ্রমিকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য মজুরি বোর্ডকে বেসরকারি খাতের শিল্প মালিকদের সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়।
উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় মজুরি বোর্ডের বেহাল দশা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শ্রমিক নেতারা ।