৫ আগস্ট তিনিসহ ১২ জন সংসদে আত্মগোপনে ছিলেন বলে দাবি পলকের

হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয় দাবি করে গত বছরের ৫ আগস্ট তিনিসহ ১২জন সংসদ ভবনে আত্মগোপনে ছিলেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, 'ওইদিন রাত আড়াইটায় স্পিকার, তাকেসহ ১২ জনকে সেনাবাহিনী উদ্ধার করে নিয়ে যায়।'
অবশ্য জুনাইদ আহমেদ পলকের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত পলক।
৫ আগস্ট সংসদে লুকিয়ে ছিলেন পলক
সময় তখন সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জুনাইদ আহমেদ পলকের নাম ধরে ডাকেন। তখন পলক তার ডান হাত উঁচু করেন। তার হাতে পরানো ছিল হাতকড়া।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বাড্ডায় রংমিস্ত্রি আব্দুল জব্বার খুন হন। এ হত্যা মামলায় জুনাইদ আহমেদ পলকের নাম রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটনের জন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা জরুরি।
পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর জুনাইদ আহমেদ পলক হাত উঁচু করে কথা বলার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চান।
আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, 'গত ৫ আগস্ট বাড্ডার খুনের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত। একটা বিষয় আপনাকে জানিয়ে রাখি। গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল ১১টার সময় আমি সংসদে অবস্থান করি। একটা পর্যায়ে আমরা সংসদে আক্রান্ত হয়। একপর্যায়ে আমি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ ১২ জন সংসদের বিশেষ কক্ষে অবস্থান করতে বাধ্য হই। রাত আড়াইটার সময় সেনাবাহিনী আমাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।'
পলক আদালতকে আরও বলেন, '৫ আগস্ট আমি সারা দিন সংসদে অবস্থান করেছিলাম, তাই ওইদিনের কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ইতোমধ্যে আমার ৮৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। যদি জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হোক।'
অবশ্য জুনাইদ আহমেদ পলকের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
তিনি বলেন, 'আমরা বারবারই বলছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাকে যারা সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের যে শাস্তি, একই শাস্তি, যারা এসব হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জুনাইদ আহমেদ পলক এসব হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় যে কয়েকজন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিং করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন পলক।'
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, 'আমরা শুনেছিলাম, ৫ আগস্ট সংসদে স্পিকারসহ বেশ কয়েকজন লুকিয়ে ছিলেন। আজ জুনাইদ আহমেদ পলক সেই ঘটনা বললেন। এখনো স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।'
আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে জুনাইদ আহমেদ পলকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
শাজাহানের বক্তব্যের পর আদালতে হট্টগোল
যাত্রাবাড়ী থানার আরিফ খান হত্যা মামলায় শাজাহানকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ডের স্বপক্ষে আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। আর রিমান্ডের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন শাজাহান খানের আইনজীবীরা।
শাজাহান খানের একজন আইনজীবী আদালতকে বলেন, শাজাহান খান আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার দাদাও ব্রিটিশ আমলে নেতা ছিলেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী যখনই আটবারের এমপি শাজাহান উচ্চারণ করেন, তখন আদালতে উপস্থিত বিএনপিপন্থী একদল আইনজীবী বলতে থাকেন, ভুয়া এমপি শাহজাহান।
এ পর্যায়ে পিপি ওমর ফারুকী আদালতকে বলেন, 'শাজাহান খান অন্য দলে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ এসে সর্বোচ্চ প্রেসিডিয়াম পদ পেয়েছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম সহযোগী।'
পিপির আইনজীবীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর শাজাহান নিজেই আদালতের কাছে হাত তোলেন কথা বলার অনুমতি দেওয়ার জন্য। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর শাজাহান আদালতকে বলেন, 'আমার হার্টে পাঁচটি ব্লক। আমি অসুস্থ। আমাকে দুইবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। যদি জিজ্ঞাসাবাদ করতেই হয়, তাহলে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হোক।'
শাজাহান খান যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন একদল আইনজীবী আদালতকে বলতে থাকেন, উনি পুলিশকেও মারার কথা বলেছেন। এ সময় আইনজীবীদের হট্টগোল শুরু হয়।
পিপি ওমর ফারুকী আদালতকে বলেন, 'আদালতের পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব যেমন আইনজীবীদের, তেমনি আসামিদের। আসামিরা এমন কোনো কথা বলবেন না, যাতে আদালতের পরিবেশ নষ্ট হয়।'
পিপির কথা বলার সময়ও একদল আইনজীবী হট্টগোল করতে থাকেন। শাজাহান খানকে গালমন্দ করতে থাকেন।
তখন শাজাহান খান আদালতকে বলেন, 'আমরা কি কথা বলতে পারব না? আমাদের কি কথা বলার কোনো অধিকার নেই?'
শাজাহান খানের বক্তব্যের পর পর আদালতের অনুমতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হাসান আদালতে কথা বলতে শুরু করেন।
তানভীর আদালতকে বলেন, 'আমি ছাত্রলীগ করি।'
ছাত্রলীগ শব্দ উচ্চারণ করার পর পরই একদল আইনজীবী বলতে থাকেন, 'জঙ্গি ছাত্রলীগ' 'নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ' এমন সব শব্দ উচ্চারণ করতে থাকেন। এ সময় তানভীর হাসান তার কথা বলতেই থাকেন। এ সময় আইনজীবীরা জঙ্গি ছাত্রলীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বলে চিৎকার করতে থাকেন।