বিপ্লবকে স্থায়ী রূপ দিতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনকারীরা দ্রুত নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সেই সঙ্গে তারা যে ধরনের সংস্কার বা পরিবর্তন চান, সেটি স্থায়ীভাবে বাস্তবায়নের জন্য নিজস্ব একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভাবছেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন আন্দোলনকারী চার নেতা। তাদের প্রত্যাশা, বিগত ১৫ বছরের পুনরাবৃত্তি পরিহার করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়নের জেরে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনার সরকার।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও তার দেশ ত্যাগের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এতে রয়েছেন দুই শিক্ষার্থীও।
গত তিন দশকের বেশির ভাগ সময়ই বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, নয়ত খালেদা জিয়ার বিএনপি। তাদের দুজনের বয়সই এখন ৭০ এর বেশি।
সরকার ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে লিয়াজোঁ করতে গঠিত কমিটির প্রধান মাহফুজ আলম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্র নেতারা এই দ্বৈত প্রথার অবসান ঘটাতে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা করছেন।
২৬ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী রয়টার্সকে বলেন, 'এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' আর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আন্দোলনকারী ছাত্র নেতারা আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করতে চান বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের গেটের সামনে তিনি আরও বলেন, 'দুই রাজনৈতিক দলের উপর মানুষ সত্যিই ক্লান্ত। আমাদের ওপর তাদের আস্থা আছে।'
তাহমিদ চৌধুরী নামের আরেক সমন্বয়ক বলেন, তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠনের 'সমূহ সম্ভাবনা' রয়েছে। তারা এখনও তাদের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। আর তাদের দলের শেকড়ে থাকবে অসাম্প্রদায়িকতা ও বাক স্বাধীনতা।
আরেকটি কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন যেমন শেখ হাসিনার নির্বাচিত নির্বাচন কমিশন সংস্কারের বাইরে আর কোন নীতিমালা নিয়ে তারা কাজ করতে চাইছেন, সে বিষয়ে অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্রনেতা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আন্দোলনের চেতনা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারবে না।'
২৬ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, 'এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। আর এটি করতে গেলে অবশ্যই কিছু সময় প্রয়োজন।'
দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি জানানো হচ্ছে, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আপাতত ভাবছে না বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আরও অনেকেই যারা শেখ হাসিনার সময় নিয়োগ পেয়েছিলেন, তারা পদত্যাগ করেছেন।
ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, 'তবে রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ আমরা রাজনীতি থেকে তরুণদের বাদ রেখেছিলাম।'
এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক ও আইনগত দিক থেকে এখন অজানা নদীতে এসে পড়েছি। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা কেমন হবে তাও বলা যাচ্ছে না। কারণ এই সরকার আইন মেনে হয়নি।'
রয়টার্স ৩০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের মধ্যে একাধিক ছাত্রনেতা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে জয় রয়টার্সকে বলেছেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে না। আপনি আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না। শীঘ্রই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া আপনারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন না।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক