আবারও বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশের অনুমতি পেলেন সাংবাদিকরা

গতকাল (৬ আগস্ট) সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর চার মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে সাংবাদিকদের প্রবেশের ওপর পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরদিন (৫ আগস্ট) সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল দুপুর ১টার দিকে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর নেতৃত্বে একদল সাংবাদিক বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের নিয়মে প্রবেশাধিকার ফিরে পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য তিনজন ডেপুটি গভর্নর ও একজন নির্বাহী পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
গভর্নরের অনুপস্থিতিতে কাজী সাইদুর রহমান বলেন, "গভর্নর মানসিক চাপের কারণে আজ অফিস করছেন না; তিনি যার যার কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছেন।"
তবে গভর্নর এবং বাকি ডেপুটি গভর্নরদের সঙ্গে আলাপ করেই সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান কাজী সাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, "সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে আগের মতোই আদানপ্রদান হবে। তাঁদের প্রবেশে বাধা থাকবে না।"
এ সময় সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা মো. মেজবাউল হকসহ সহকারী মুখপাত্রদের পরিবর্তন দাবি করেন। গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন টিমকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন কাজী সাইদুর রহমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা একটি গোপণ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঝূঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলোর তালিকা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর গত ২১ মার্চ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের মৌখিক নির্দেশনায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
মার্চে সাংবাদিক প্রবেশে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ইআরএফ এর পক্ষ থেকে ২৫ এপ্রিল সাক্ষাত করে গভর্নরকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হলেও তিনি তাতে সম্মতি দেননি।
তখন ইআরএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে সীমাহীন প্রবেশাধিকার ছিল। বর্তমান গভর্নর কেন বাধা দিচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা।
জবাবে গভর্নর বলেছিলেন, "অন্য গভর্নররা কে, কি করেছেন, সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমি প্রফেশনাল মানুষ। আমার আর দুই বছর চাকরি আছে। আমি যতোদিন গভর্নর আছি, ততোদিন আপনারা ঢুকতে পারবেন না।"
আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে তখন ইআরএফ নেতৃবৃন্দের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। গভর্নর দাবি করেন, সাংবাদিকরা খবত তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসারদের টাকা দিয়ে গোপন নথি সংগ্রহ করেন।
তখন ইআরএফ নেতারা বলেন, "আপনি গভর্নর হয়ে বলছেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসারদের টাকা দিয়ে কেনা যায়। একজন সাংবাদিক কতো টাকা দেন যে, তাতে আপনাদের অফিসাররা বিক্রি হয়ে যান? একজন সাংবাদিক কতো টাকা বেতন পান যে, তিনি অফিসারদের ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলেন?"
জবাবে গভর্নর বলেন, পিওনকে টাকা দিয়ে রিপোর্টাররা নথি নিয়েছে। তখন ইআরএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, "এতো গোপন নথি আপনি পিওনের কাছে রাখেন কেন?" তখন গভর্নর বলেছিলেন, "এটা আমার ব্যাপার।"
তারপর বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে ইআরএফ এর পক্ষ থেকে দুই দফা চিঠি দেওয়া হলেও তিনি কোন জবাব দেননি। অর্থনীতিবিদ, সম্পাদক পরিষদ, নোয়াবসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হলেও তা আমলে নেননি গভর্নর।
বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সপ্তাহে একদিন সংবাদ সম্মেলন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময় ডিজিএফআই এর মিডিয়া উইং এর কর্মকর্তারা ইআরএফ এর নেতাদের মধ্যে কয়েকজনকে তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব মেনে নিতে বললে ইআরএফ নেতারা তা প্রত্যাখান করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হয়েও তা বয়কট করেন সাংবাদিকরা। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ধরণের প্রপাগান্ডামূলক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাপানো, গভর্নরের প্রোগ্রামসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল আনুষ্ঠানিক প্রোগ্রাম বর্জনের কর্মসূচি দেয় ইআরএফ।
এরই অংশ হিসেবে গত ৭ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গভর্নরকে বয়কট করার ঘোষণা দেয় ইআরএফ।
তিনি কোন বক্তব্য রাখলে সাংবাদিকরা সংবাদ সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দিলে পুরো সংবাদ সম্মেলনে গভর্নরকে কোন কথা বলতে দেননি তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সোমবারের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, মো. হাবিবুর রহমান ও মো. খুরশীদ আলম, নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। ইআরএফের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি রেফায়েত উল্ল্যাহ মীরধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ অন্যান্য সদস্য।