নতুন ডেভেলপার কোম্পানির সাথে গতি পাচ্ছে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল

দীর্ঘদিন থমকে থাকার পর গতি পাচ্ছে চায়নিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের (সিইআইজেড) নির্মাণকাজ। চীনা সরকার নতুন করে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডেভেলপার নিয়োগ করেছে চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি)-কে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, "আগের ডেভেলপার পরিবর্তন করে চীনা সরকার নতুন ডেভেলপার নিয়োগ করেছে। এর ফলে গতি পেয়েছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ প্রক্রিয়া। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের দুইটি নেগোসিয়েশন মিটিং হয়েছে। এখন ডেভেলপার এগ্রিমেন্ট এবং জয়েন্ট ভেনচার এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলমান।"
বেজা সূত্রে জানা গেছে, এ দুটি চুক্তি স্বাক্ষর চূড়ান্ত হলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বেজা কত অংশ শেয়ার পাবে সেটা চূড়ান্ত হবে। এখন এ বিষয় মধ্যস্থতা চলছে।
২০১৬ সাল থেকে জি টু জি ভিত্তিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৮০৫ একরের চায়নিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের নির্মাণ কাজ চলছে। সে বছর বাংলাদেশ সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তখন এটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিল চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।
শেখ ইউসুফ হারুন জানান, 'ইতোপূর্বে যে ডেভেলপার কোম্পানি ছিল বিভিন্ন কারণে তাদের সঙ্গে কাজ শেষ করতে পারি নি। কাজ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে আমরা চীন সরকারকে নতুন করে ডেভেলপার নিয়োগ দিতে বলি। এরপর চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি) -কে নতুন করে ডেভেলপার নিয়োগ দেয়া হয়।"
তিনি বলেন, "সিআরবিসি এর সঙ্গে মিটিংয়ে মোটামুটি আমাদের মতপার্থক্য নিরসন করতে পেরেছি। আমরা অন্যান্য ইকোনোমিক জোনের সঙ্গে তুলনা করে নেগোসিয়েশন করছি। দুয়েকটি বিষয় আমাদের এখনও নেগোশিয়েশন চলছে। আমরা চাই যত দ্রুত নেগোশিয়েশন সম্পন্ন হবে, তত তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে। আর দ্রুত কাজ শুরু হবে।"
"এ জোন পুরোপুরি চালু হলে প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে", যোগ করেন তিনি।
দেশের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তার জন্য ২০৪১ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে কাজ করছে বেজা।
বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) মহাসচিব আল মামুন মৃধা টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশে হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি, লেদার এবং গার্মেন্টস ও টেক্সটাইলে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে চীনের।"
"ম্যান-মেইড ফাইবারে চীন শীর্ষস্থানীয়। এর বড় অংশ আমাদের আমদানি করতে হয় সেখান থেকে। তাই বাংলাদেশে এ ধরনের কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করতে পারে তারা।"
আল মামুন মৃধা আরও জানান, তাদের অ্যাসোসিয়েশনে ৭৫৯ জন সদস্য রয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৩০ জন সরাসরি চীনা বিনিয়োগকারী।
চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ-চীন চেম্বারের সাথে অংশীদার বেজা
চীন থেকে আরও অধিক বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বুধবার (২৯ মার্চ) নতুন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মূল উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি, বিশেষ করে চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করা। এজন্য বিসিসিসিআই বেজাকে নীতিগত সহযোগিতা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে উন্নয়নে পলিসি ডায়লগ আয়োজনসহ সম্ভাব্য চীনা বিনিয়োগকারী নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
আগারগাঁওয়ে বেজার অফিসে সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর করেন বিসিসিসিআই মহাসচিব আল মামুন মৃধা ও বেজার মহাব্যবস্থাপক মোঃ মনিরুজ্জামান।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, "আশা করি বিসিসিসিআই এর সহায়তায় বেজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করবে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।"
আল মামুন মৃধা বলেন, "২০০৩ সালে আমরা যখন কাজ শুরু করি তখন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যটা ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি ছিল, যা এখন ২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠানের বড় রকমের বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগ আনতে একসঙ্গে কাজ করবো।"