বায়তুল মোকাররম মার্কেটে ‘জমজমের পানি’ বিক্রি নিষিদ্ধ করল ভোক্তা অধিদপ্তর
 
বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বোতলজাত করে পবিত্র 'জমজমের পানি' বিক্রি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করল ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই পানি বিক্রির কোনো বৈধতা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায় অধিদপ্তর।
সোমবার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পবিত্র জমজম কূপের পানি খোলা বাজারে বিক্রয়-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। একইসঙ্গে এই পানি দেশের আর কোথাও বিক্রি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
অনলাইনে কোনো বিক্রেতা যদি এই পানি বিক্রি করে, তার ওপরও এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল জানান, বায়তুল মোকাররম মার্কেটে অভিযান পরিচালনার সময় দেখা গেছে, জমজমের পানি বলে ছোট বোতল ৩০০ টাকায়, আর ৫ লিটারের বোতল ২ হাজার ৫০০ টাকার ওপরে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযান পরিচালনার খবর পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা এই পানি হাজিদের বা হজ্ব পরিচালনাকারী বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে পেয়ে থাকেন।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'বিষয়টি সংবেদনশীল। এটা সামনে আসার পরে আমরা দ্রুত সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে যেটুকু আলোচনা হয়েছে, তাতে সাময়িকভাবে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে পবিত্র জমজমের পানি বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কারণ স্বয়ং সৌদি আরবেও এই পানি বিক্রি হয়, এমন কোনো বিষয় আমাদের জানা নেই।
'যতটুকু জানা গেছে, এটার আইনি কোনো বৈধতা নেই। এরপরও আমরা যাচাই-বাছাই করতে চাই। এজন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।'
তিনি বলেন, 'আমি সম্প্রতি ওমরাহ পালন করে এসেছি। ওখান থেকে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকে প্রতিজনকে একটা ৫ লিটারের বোতল নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। এর বাইরে ছোট বোতলে পানি নিয়ে হাতের ব্যাগেও নিয়ে আসা যায়, এমন কিছু দেখিনি। সুতরাং দেশের বাজারে কোনোভাবেই ছোট বোতল পাওয়া যাওয়ার কথা না।
'আমার মনে হয় না কোনো হাজি সৌদি থেকে জমজমের পানি নিয়ে আসবেন বায়তুল মোকাররমের এই মার্কেটে বিক্রি করার জন্য। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সৌদি সরকার যদি এটা জানে, তাহলে আমাদের দেশের ব্যাপারে তাদের নেতিবাচক ধারবণার জন্ম দিতে পারে। তাছাড়া এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশিদের জন্য এই পানি নিয়ে আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।'
সভায় জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে আগামী দুই দিনের মধ্যে বায়তুল মোকাররম মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মতামত ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। সরকারি সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, দেশের অন্য কোনো বাজারে জমজমের পানি বিক্রি হচ্ছে কি না, তা তদারকি করা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই পানি বিক্রি করা হলে সেসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারি অন্যান্য সংস্থার সাহায্য নেবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী সুলতান কবিরাজ বলেন, 'অনেক সময় হাজিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মোয়াল্লেমরা ফেলে যাওয়া বোতলগুলো বায়তুল মোকাররমে নিয়ে আসেন। তখন আমরা এটা কিনে বিক্রি করে থাকি। তবে এই পানি এই বাজারে ছাড়া অন্য কোথাও চলে না।' এই ব্যবসা অনেকটা বিশ্বাসের ওপরেই হয়ে থাকে বলে মনে করেন তিনি।
 

 
             
 
 
 
 
