ডলার সংকট: চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৪ হাজার টন পণ্য নিয়ে আটকে আছে তিন জাহাজ
ডলার সংকটের কারণে আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় চট্টগ্রাম বন্দরে চিনি, তেল এবং পামঅয়েল বাহী তিনটি জাহাজের খালাস আটকে আছে। এসব জাহাজে রয়েছে মেঘনা গ্রুপ এবং এস আলম গ্রুপের প্রায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য।
খালাস করতে না পারায় জাহাজ তিনটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অলস বসে আসে। তিনটি জাহাজে শিপিং ডেমারেজ বাবদ প্রতিদিন প্রায় ৯৪ হাজার ইউএস ডলার গুনতে হবে আমদানিকারকদের।
মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'আমরা টাকার অংকে এলসি ওপেন করেছিলাম। এর মধ্যে একটির এলসি ওপেন হয়েছিলো অগ্রণী ব্যাংক থেকে। কিন্তু ব্যাংক এলসির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ করে দিয়েছে। এই সংকট কিভাবে দ্রুত সমাধান করা যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি।'
মিজানুর রহমান আরো বলেন, 'জাহাজ ভাড়া বাবদ যে ডেমারেজ উঠছে সেগুলো আমাদের পরিশোধ করতে হবে। আমরা এগুলো পণ্য মূল্যের সাথে সমন্বয় করবো।'
মেঘনা গ্রুপ জানায়, তাদের আমদানি করা চিনিবাহী কমন এটলাস জাহাজে প্রতিদিন ৪০ হাজার ডলার এবং সয়াবিনবাহী সোগান জাহাজে প্রতিদিন ৩৮ হাজার ডলার ডেমারেজ উঠছে। একইভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েলবাহী সুপার ফরটি জাহাজে প্রতিদিন ১৬ হাজার ডলার ডেমারেজ যোগ হচ্ছে।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ব্যাংকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ঋণপত্র খুলে এসব পণ্য আমদানি করা হয়। কিন্তু ডলারের অভাবে ব্যাংক মূল্য পরিশোধ করতে পারেনি। এ কারণে বিদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর এবং জাহাজের অবস্থান শনাক্তকারী ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্যমতে, এস আলম গ্রুপের আমদানি করা ১২ হাজার মেট্রিক টন পাম অয়েল নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে এম টি সুপার ফরটি জাহাজ গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায়। জাহাজটিতে ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার মূল্যের তেল রয়েছে। জাহাজটি বন্দরে আসার ৫৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এলসি মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় খালাস বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন ১৬ হাজার ডলার হিসেবে ৫৪ দিনে শিপিং ডেমারেজ উঠেছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার।
মেঘনা গ্রুপ জানিয়েছে, ব্রাজিল থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে 'এম টি সোগান' চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় ৬ জানুয়ারি। জাহাজটিতে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও মেঘনা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের তেল রয়েছে। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের তেল খালাস হলেও আটকে আছে মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারির পণ্য। ৬২ লাখ ডলারের প্রায় ৫ হাজার টন তেল রয়েছে।
এছাড়া ব্রাজিল থেকে ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি নিয়ে 'এম ভি কমন এটলাস' নামের একটি জাহাজ বন্দরে পৌঁছায় ৫ জানুয়ারি। ২৩ হাজার ৬৫০ টন চিনি খালাস হলেও বাকি পণ্যের খালাস বন্ধ হয়ে আছে। এই জাহাজের বিপরীতে প্রতিদিন ৪০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হবে আমদানিকারককে।
